নির্বাচিত কলাম
আন্তর্জাতিক
উপমহাদেশের রাজনীতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
১১ মার্চ ২০২৪, সোমবারমিয়ানমার পরিস্থিতি অস্থির। সেখানে বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহীদের কাছে ক্রমেই পরাজিত হচ্ছে সামরিক জান্তার সেনারা। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্য ও উত্তরের বিভিন্ন রাজ্যের চীন সীমান্ত অঞ্চলে সেনাদেরকে হটিয়ে দিয়ে সেসব এলাকা নিজেরা দখল করে নিচ্ছে। সেনাদের পরাস্ত করার প্রমাণ হিসেবে তারা তাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ প্রদর্শন করছে। ফলে এখানেও সেই মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের বক্তব্য সত্য হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, বন্দুককে হটিয়ে দিয়ে জয়ের দিকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহীরা
পাকিস্তানে নির্বাচন শেষ। নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে সেখানে ক্ষমতাকে ভাগাভাগি করে নিয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন পিপিপি’র সহ-সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। এর মধ্যদিয়ে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড গড়লেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন পিএমএল-এনের শেহবাজ শরীফ। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিরোধী দলের আসনে। শুধু পাকিস্তানই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। সেখানে লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। সব দল তাদের ঘর গোছানোর কাজ শেষ করে প্রচারণায়। কিন্তু এমন সময়ে নির্বাচন কমিশনে আকস্মিক এক ঘটনা চমকে দিয়েছে সবাইকে। যখন লোকসভা নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হতে পারে যেকোনো সময়, তখন শনিবার নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট ধ্রুপদী মুরমু। তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের একটি পদ আগে থেকেই ফাঁকা ছিল। ফলে অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করার পর তার পদটিও ফাঁকা হয়ে গেছে। এখন কমিশনে আছেন শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। কিন্তু কেন এই অসময়ে পদত্যাগ করলেন কমিশনার অরুণ! তা নিয়ে জোর আলোচনা ঘরে-বাইরে সর্বত্র। নানা বিতর্ক এখন। ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন অরুণ গোয়েল। কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে- ‘কমিশনের একটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে মতানৈক্যের জেরেই পদত্যাগ করেছেন অরুণ। কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই এই পদত্যাগ। তবে অরুণের চোখে পড়ার মতো কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না বলে দাবি করেছে কমিশনের ওই সূত্রটি। এই আবহেই নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ-রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষেপেছে বিরোধী দল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস। ‘কংগ্রেস আরও এক ধাপ এগিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে। রোববার সকালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ নিয়ে তিন দফা প্রশ্ন তুলেছেন। তার প্রশ্ন, অভিজিতের মতোই কি বিজেপি’র প্রতীকে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন অরুণ? আদৌ ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন কিনা, সেই প্রশ্নও উস্কে দিয়েছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে কংগ্রেসের প্রশ্ন, অরুণ কি মোদি সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরেই পদ ছাড়লেন? ’ সূত্রগুলো বলেছেন, সরকার তাকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন অরুণ গোয়েল। তিনি যে অসুস্থ এমন জল্পনা আগেই খারিজ করে দেয়া হয়েছিল। শীর্ষ কর্মকর্তারা আগেই বলেছেন, পুরোপুরি সুস্থ আছেন অরুণ গোয়েল। তাহলে কেন আকস্মিকভাবে এই অসময়ে তার পদত্যাগ? নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ও কমিশনার অরুণ গোয়েলের মধ্যে ফাইল নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। গত বছর শেষের দিকে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে দেশের শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কার করা হয়েছে।
সংশোধিত এই প্রক্রিয়ায় বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ভারতের প্রধান বিচারপতিকে। এ ঘটনায় মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করে থাকতে পারেন অরুণ গোয়েল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন কমিশনারের আকস্মিক বিদায় নেয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের নাম পরিবর্তন করে ‘নির্বাচন বাদ দেয়া’ করার প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এক্সে তিনি ইংরেজিতে লিখেছেন- ইলেকশন কমিশন অর ইলেকশন অমিশন? তিনি আরও লিখেছেন, লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার অল্প কয়েকদিন সময় হাতে আছে। এই মুহূর্তে ভারতে এখন একজন মাত্র নির্বাচন কমিশনার আছেন। কিন্তু কেন? আগেও আমি বলেছি, যদি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ধ্বংস করা বন্ধ না করি আমরা, তাহলে আমাদের গণতন্ত্রকে দখল করবে একনায়কতন্ত্র। যেহেতু নির্বাচন কমিশনারদের বাছাইয়ের নতুন প্রক্রিয়ায় সব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কার্যত ক্ষমতাসীন দল ও প্রধানমন্ত্রীকে, তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৩ দিন পরেও কেন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেননি? মোদি সরকারকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। যৌক্তিক ব্যাখ্যাও তাদের দিতে হবে। এমন তরো সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে কমিশন ও সরকার। এখন দেখার বিষয়, সামনেই নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকার কি করে আর নির্বাচন কমিশন কতোটা দক্ষতা দেখাতে পারে। সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের যে সুনাম আছে, তার সঙ্গে কতোটা সুবিচার করা হবে, সেটা বলে দেবে নির্বাচন।
অন্যদিকে মেয়াদ সম্পন্ন করা চতুর্থ প্রেসিডেন্টের তালিকায় পাকিস্তানে লেখা হয়েছে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির নাম। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন পিপিপি’র আসিফ আলি জারদারি। তার নামে অতীতে বেশ বিতর্ক থাকলেও সমসাময়িককালে তিনি নিজেকে অনেকটা ক্লিন দেখানোর চেষ্টা করছেন। এমন একটা সময় ছিল, যখন ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ হিসেবেও ডাকা হতো তাকে। সেই অবস্থা থেকে তিনি রাজনীতি করে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এটা পাকিস্তানের মতো দেশে প্রথম। এর আগে কেউ এই পদে দু’বার নির্বাচিত হননি। সেই গৌরবের অধিকারী জারদারি। ৫ বছর ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় রোববার তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। মালদ্বীপের রাজনীতি ভারত ও চীনের আবর্তে আবর্তিত হচ্ছে। ক্ষমতায় সেখানে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু। মালদ্বীপে অবস্থানকারী ভারতীয় সেনাদের বের করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তারপর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে তুরস্ক, পরে চীনে গিয়েছেন। কিন্তু ভারত যাননি। তাকে বলা হয় কঠোর চীনপন্থি। তার এমন নীতির কারণে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এমন এক সময়ে দিল্লি সফরে এসে মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ ভারতের জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশবাসীর তরফ থেকে এই দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রশ্ন সেখানেই। ক্ষমতায় বর্তমানে মুইজুর সরকার। দেশবাসীর পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করলে প্রেসিডেন্ট করবেন এবং সেটা করার ম্যান্ডেট তার আছে। তাকে উপেক্ষা করে মোহাম্মদ নাশিদ যখন নয়াদিল্লিতে গিয়ে আগ বাড়িয়ে জনগণের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন, তখন বিষয়টি শোভন দেখায় না। উপরন্তু তিনি তার দেশের শাসকদের ইঙ্গিত করে বলেছেন, বন্দুকের নলের মুখে দেশ শাসন করা যায় না। এর মধ্যদিয়ে তিনি ভারতের খুব কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ভারতও সৃষ্ট কূটনৈতিক উত্তেজনা লাঘবের জন্য সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমার পরিস্থিতি অস্থির। সেখানে বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহীদের কাছে ক্রমেই পরাজিত হচ্ছে সামরিক জান্তার সেনারা। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্য ও উত্তরের বিভিন্ন রাজ্যের চীন সীমান্ত অঞ্চলে সেনাদেরকে হটিয়ে দিয়ে সেসব এলাকা নিজেরা দখল করে নিচ্ছে। সেনাদের পরাস্ত করার প্রমাণ হিসেবে তারা তাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ প্রদর্শন করছে। ফলে এখানেও সেই মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের বক্তব্য সত্য হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, বন্দুককে হটিয়ে দিয়ে জয়ের দিকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহীরা।
বাংলাদেশ কি উপমহাদেশের বাইরের ভূখণ্ড!! এই অঞ্চল সম্পর্কে লিখলে আমাদের দেশ আসবে না এটা ভাবা উচিত নয়। হউক তার উপস্থাপনা যে কোন আঙ্গিকে, ধন্যবাদ
অসম্পূর্ণ লিখা , জটিল রাজনীতির আবর্তে আটকে গেছে বাংলাদেশ ও , তার কোন উল্লেখ নেই । এই দেশ এখন পরাশক্তিদের খেলার উর্বর মাঠ । হিন্দু রাষ্ট্র নেপালেও ভারত চীনের কাছে ধরাশায়ী । ভারতের আধিপত্য কামী মনোভাবই এর জন্য দায়ী । কোন প্রতিবেশীর চক চকে চেহারা তার পছন্দ নয় । জটিলতার তৈরির জন্য ভারত , চীন উভয়ই দায়ী ।