নির্বাচিত কলাম
আন্তর্জাতিক
পাকিস্তানে স্থিতিশীলতা আসবে কবে?
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
৪ মার্চ ২০২৪, সোমবার
নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে তাকে তিনটি মামলায় জেল দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তাকে দ্রুততার সঙ্গে বিয়ে করার অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বুশরা বিবিকে তিনি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেননি। তার দলকে নির্বাচনে তাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক দেয়া হয়নি। তারা দলবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে পারেননি। ফলে ইমরানের প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। বহু প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি অভিযান থাকার কারণে তারা পালিয়ে বেড়িয়েছেন। পক্ষান্তরে ইমরান খানের প্রধান প্রতিপক্ষকে ‘নিষ্কলুষ’ ঘোষণা দেয়া হয়েছে অনেক মামলা থেকে। তারা নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পেরেছেন অবলীলায়। নির্বাচনের দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মোবাইল ফোন সার্ভিস বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। এর মধ্যদিয়ে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ইমরান খানের সমর্থকরা যেন ভোটকেন্দ্রে কী হচ্ছে সে বিষয়ে সহজেই তথ্য না পান। ইমরান খানের সমর্থকরা নির্বাচনে কীভাবে অনিয়ম হয়েছে তা তুলে ধরেছেন। তারা হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন। তবে তাদেরকে অ্যাপ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে তারা জানতে পারেননি প্রার্থীদের কি অবস্থা। এ অবস্থায় জেলবন্দি ইমরান খানের কম্পিউটারে বানানো কণ্ঠ নকলের মাধ্যমে বক্তব্য ব্যবহার করে। নির্বাচনী স্লোগানে ব্যবহার করা হয় ইমরান খানের জেলখানায় আইডি নম্বর
পাকিস্তানে শান্তি আসবে কবে! এ প্রশ্নটি বার বার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। সত্তর বছর বয়সে এসেও দেশটি প্রমাণ করতে পারলো না যে, তারা একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করা দেশ। এই দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতা নিয়ে শক্তিধর সেনাবাহিনী এবং রাজনীতিকরা শুধু কামড়াকামড়ি করেছেন। বন্দুকের রক্তে রাজনীতিকের প্রাণ ঝরেছে। আবার বেসামরিক মানুষের হাতে ফিরে এসেছে ক্ষমতা একাধিকবার। কিন্তু তারা সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে সমতা, ঐক্য গড়ে তুলতে পারেনি। তার ফল এখনো দিতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ মানুষকে। বরং দিনকে দিন সেখানকার রাজনীতি কলুুষিত হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক কৌশলে ব্যর্থ হয়ে অমানবিকভাবে, ক্ষমতার জোরে অথবা বন্দুকের নলের মুখে প্রতিপক্ষকে চৌদ্দ শিকে বন্দি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা যে শুধু পাকিস্তানের চিত্র তা নয়। একই চিত্র দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশে। মিয়ানমারে অং সান সুচি গণতন্ত্রের জন্য বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। তারপর যাও বা গণতন্ত্রের সুবাতাস বইতে শুরু করে, তাও মিইয়ে গেছে। সেনাবাহিনী দেখতে পেয়েছে সুচির অগ্রযাত্রা যদি এভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে তাদের যে ক্ষমতার দাপট, রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করার তাদের আধিপত্য তা ম্লান হয়ে যাবে। ব্যস, তারা একটি ঠুনকো অজুহাতে ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি আবার ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে গৃহবন্দি করেছে। কারও সঙ্গে রাজনীতির জনপ্রিয়তার এই প্রতিযোগিতায় পেরে না উঠে তাকে নিঃশেষ করে দেয়ার এ এক নিষ্ঠুর খেলা
দেশবাসী, বিশ্ববাসী দেখছে, শুনছে। কিন্তু ঘটনাগুলো ঘটছে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশে। এই এক অজুহাতে তেমন কিছুই করে উঠতে পারছে না কেউ। তবে শুধু নিষেধাজ্ঞা এবং কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে এমন স্বৈরাচারকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানে। সেখানে জেলবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবারের নির্বাচনে যে খেল দেখিয়েছেন, তাতে দেশটিতে অন্য যেসব রাজনৈতিক দল আছে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। অন্য বড় দলগুলো এবং পর্দার আড়ালে থেকে যে ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ ইমরান খানকে এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফকে একেবারে মুছে দিতে চেয়েছিল, ফল হয়েছে তার উল্টো। ইমরান খান জেলে বসেই আরও বলীয়ান হয়ে উঠেছেন। তার দল সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছে। সরকার গঠন করতে পারুক বা না পারুক, তারাই যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় শক্তি তার প্রমাণ দিয়েছেন ইমরান খান। ফলে সরকার গঠনের ব্যর্থতার চেয়ে তিনি হয়তো ভোরের আকাশের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন। আর সাংবাদিকরা লিখছেন, পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক নির্বাচনকে মনে করা হয়েছিল- এতে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে। চরম মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক তিক্ত বিভক্তি দূর করতে এটা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার বিপরীতে পাকিস্তান পেয়েছে একটি সংখ্যালঘু সরকার। একটি দুর্বল সরকার। একটি অনিচ্ছাকৃত জোট। মনে হচ্ছে এই জোট সরকার তার নিজস্ব ম্যান্ডেটও নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। নির্বাচন হয়ে গেছে দুই সপ্তাহ আগে। তারপর সরকার গঠন হচ্ছে। কিন্তু এ সময়ে নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বে সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেও, পিপিপি বলেছে তারা এই সরকারের অংশ হবে না। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে উভয় দলের নেতাদের কণ্ঠ ছিল হতাশার এবং চারপাশের বাতাসে ছিল বিরহের এক আবহ।

আকস্মিকভাবে পাকিস্তান বিরল এক গণতন্ত্রের দেশে পরিণত হয়েছে, যেখানে কেউই প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। দেশটির স্থানীয় মিডিয়া সেনাবাহিনীকে দেখে থাকে ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ হিসেবে। ক্ষমতাটা বেসামরিক রাজনীতিকদের চর্চার বিষয়ে পুরোপুরি চলে যাক তা কখনোই তারা হতে দিতে চান না। এবারের নির্বাচনেও তারা তাদের পুরনো খেলা খেলেছে। অতীতের সব রকম কৌশল সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে। নির্বাচনে দৃশ্যত, সেনাবাহিনীর পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে সরব ছিলেন ইমরান খান। প্রধান এই প্রতিপক্ষকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৫০টি ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা করা হয়েছে। তবে এতে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সবটাই প্রত্যাখ্যান করেছেন ইমরান খান। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে তাকে তিনটি মামলায় জেল দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তাকে দ্রুততার সঙ্গে বিয়ে করার অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বুশরা বিবিকে তিনি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেননি। তার দলকে নির্বাচনে তাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক দেয়া হয়নি। তারা দলবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে পারেননি। ফলে ইমরানের প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। বহু প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি অভিযান থাকার কারণে তারা পালিয়ে বেড়িয়েছেন। পক্ষান্তরে ইমরান খানের প্রধান প্রতিপক্ষকে ‘নিষ্কলুষ’ ঘোষণা দেয়া হয়েছে অনেক মামলা থেকে। তারা নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পেরেছেন অবলীলায়। নির্বাচনের দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মোবাইল ফোন সার্ভিস বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। এর মধ্যদিয়ে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ইমরান খানের সমর্থকরা যেন ভোটকেন্দ্রে কী হচ্ছে সে বিষয়ে সহজেই তথ্য না পান। ইমরান খানের সমর্থকরা নির্বাচনে কীভাবে অনিয়ম হয়েছে তা তুলে ধরেছেন। তারা হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন। তবে তাদেরকে অ্যাপ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রবেশ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে তারা জানতে পারেননি প্রার্থীদের কি অবস্থা। এ অবস্থায় জেলবন্দি ইমরান খানের কম্পিউটারে বানানো কণ্ঠ নকলের মাধ্যমে বক্তব্য ব্যবহার করে। নির্বাচনী স্লোগানে ব্যবহার করা হয় ইমরান খানের জেলখানায় আইডি নম্বর। তার সমর্থকরা গেরিলা স্টাইলে প্রচারণা চালিয়েছেন নির্বাচনের দিন। তাতে বিস্ময়কর ফল এসেছে। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ করা সত্ত্বেও পাকিস্তানের নির্বাচনে এখনো সবচেয়ে বড় দল হিসেবে প্রমাণ রেখেছে পিটিআই। নির্বাচনের দিন জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন ইমরান খান।
এস্টাবলিশমেন্ট বিংশ শতাব্দীর কৌশল ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আসক্ত প্রজন্মকে বাগে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা সেই প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয়। ইমরান খান পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। তাকে সরকার গঠন করতে হলে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করতে হতো। কিন্তু তিনি অন্য দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার গঠনে অনাগ্রহ দেখান। বরং ছোটখাটো সুন্নি ইত্তিহাদ কাউন্সিলের (এসআইসি) সঙ্গে জোট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিরোধী আসনে বসার। আর নির্বাচনী প্রচারণায় ইমরান তার সার্বিক ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। তিনি বিরোধীদেরকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ রাজনীতিকই জেল খেটেছেন। কিন্তু ইমরান খানের চেয়ে অধিক মজাদার বিষয় সম্ভবত খুব কমই আছে। তার সমর্থকদের সমস্ত রকম পাবলিক প্ল্যাটফরম থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আইনজীবী এবং পরিবারের ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি সময় নির্বাচনী কৌশল বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছেন ইমরান খান। জেলে বসে তিনি শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেননি। তিনি পাকিস্তান ও পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে ভেবেছেন।
পাঠকের মতামত
ঘটি ডুবে না তার নাম তালপুকুর। আপনার দেশের চিন্তা করেন মিয়া পাকিস্তান নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
ভাই, পাকিস্তানকে পাকিস্তানিদের কাছে ছেড়ে দিন। ওদের অধিকাংশের আবেগ আছে, বিবেক নাই। তালেবান, আলকায়দা, চড়ম পন্থী ইত্যাদি তকমায় তারা পিষ্ট।
ভাই পাকিস্তানের চিন্তা না করে নিজের দেশের চিন্তা করেন।।