অনলাইন
ফিরে দেখা কক্সবাজার, কেন যাবেন এবং কী দেখবেন
নাসিমুল কবির
(৯ মাস আগে) ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৫:৪১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:২১ পূর্বাহ্ন
ফিরে দেখা কক্সবাজার। ট্যুরিস্ট স্পট কক্সবাজার। এর আগে পিছে অনেক বিশেষণ লাগানো যায়। গুগলের ভান্ডারে থাকা তথ্যের প্রথম পাঁচ লাইন এখানে হুবুহু তুলে ধরছি যা দেখলে রীতিমত আতঁকে উঠবেন বটে। “কক্সবাজার দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের একটি শহর, মাছ ধরার বন্দর, দেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং জেলা সদর। এটি বেশির ভাগই তার দীর্ঘ প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকতের জন্য বিখ্যাত এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের জন্য কুখ্যাত।”
আজ থেকে দীর্ঘ বিশ বছর আগে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। জন্মগতভাবে চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া স্বতেও সেটাই ছিল প্রথম কক্সবাজার গমন। কুড়ি বছর কম সময় নয়। কিন্তু এই সময়ের ব্যবধানে কক্সবাজারে কি ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে ? সম্ভবত না। অনেক বড় বড় অট্টালিকা আর ইট-পাথরের স্থাপনা বেড়েছে-এটা ঠিক। কিন্তু পর্যটন স্পট হিসাবে কক্সবাজারের আকর্ষণ কি আদৌ বেড়েছে ? ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও মালয়েশিয়াসহ বিদেশের অনেক সমুদ্র সৈকত যারা দেখেছেন কক্সবাজার তাদের কতটুকু আকর্ষণ করে তা কারো অজানা নয়। সেই রকম আকর্ষণ করেনি বলে আর যাওয়া হয়নি কক্সবাজারে থাকা-খাওয়ার সব রকম সুযোগ-সুবিধা নিজের থাকা সত্ত্বেও।
এখন প্রতিদিন ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও আপলোড হতে দেখা যাচ্ছে। অতি সম্প্রতি রাজধানীর সাথে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে কক্সবাজারের আকর্ষণ আরো বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ইউটিউবের প্রচার ও মিডিয়ার ডামাডোলে পর্যটন স্পট হিসাবে কক্সবাজার নিয়ে নতুন কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না যেটা পর্যটকদের জন্য লোভনীয় বা বাড়তি আকর্ষণ হতে পারে। অধিকাংশ ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায় কক্সবাজারের ট্রেন ভ্রমন ও সদ্য নির্মিত রেল স্টেশনের আইকনিক দৃশ্যের বর্ণনা। কক্সবাজার ভ্রমনের জন্য অনলাইনে টিকিট করার নিয়ম-কানুন, হোটেল সংক্রান্ত রিভিউ ও ট্রেনের খাবারের গল্প নিয়ে ইউটিউবে ভিডিওতে সয়লাব।
কক্সবাজারে নতুন কোনো দৃষ্টিনন্দন বা আকর্ষণীয় স্পট তৈরি হয়েছে কিনা তার কোনো তথ্যই এসব ভিডিওতে নেই। তাই বিদেশীরাতো দূরের কথা দেশীয় নতুন পর্যটকদের কাছে তেমন কোনো আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করা কঠিন। এর সাথে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট করাটা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
টিকিট নিয়ে শরু হয়েছে কালোবাজারীদের রাজত্ব। মানবজমিন পত্রিকার খবরের শিরোনাম হল “সিন্ডিকেটে জিম্মি রেলের টিকিট, নাটের গুরু বুকিং সহকারীরা।” অথচ প্রতিদিন ফলাও প্রচার করা হচ্ছে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে কালোবাজারী ও ট্রেনের টিকিট সিন্ডিকেটের লোকজন ধরা পড়ছে। এটি অনেকটা সবকারী বাহিনীর সাফল্য-কৃতিত্বের প্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা সবাই জানে দেশের সব কিছুই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ফলে জনগণের অবস্থা আমি কার খালু? যা হোক, সমুদ্র সৈকতের আকর্ষণে না হলেও নতুন স্থাপিত ট্রেন ভ্রমনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের লক্ষ্যে আমরা পরিবারে কয়েকজন মিলে ভাবলাম শীতের শেষ সময়ে কক্সবাজারকে ফিরে দেখা মন্দ নয়। তাই অনলাইনে টিকিট করার কাজে নেমে পড়ি ৮/১০দিন আগে থেকেই। আমাদের ইচ্ছা ছিল কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ২১ তারিখ রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ২৪ তারিখ দুপুরে কক্সবাজার ছেড়ে আসা যায়। বলাবাহুল্য, টিকিট করতে গিয়ে যেন কোন ভুল-ত্রুটি না হয় সেজন্য কয়েকদিন আগে থেকেই ট্রায়াল দিয়েছিলাম অনলাইন টিকিট করা নিয়ে। কিন্তু বিধি-বাম। শুরুইে এমন হোঁচট খেতে হবে তা ভাবতে পারিনি। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ২১ তারিখের টিকিট করা যাবে ১০দিন আগে অর্থাৎ ১১ তারিখ। কোনোভাবেই যেন টিকিট হাতছাড়া না হয় সেজন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠে ৮টা বাজার এক ঘণ্টা আগেই বসে পড়ি অনলাইনে টিকিট করার কাজে। নিজের এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা রেলওয়ের ভেরিফাইড অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম তা রীতিমত ভয়ংকর। ইউটিউবার ভাইদের পরামর্শ মেনে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার ৪০ মিনিট আগেই প্রস্তুত হয়ে থাকি টিকিটের জন্য। মনে করেছিলাম আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারী/সিন্ডিকেটের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়ার যে সাফল্য দেখাচ্ছে তাতে হাতর মুঠোয় থাকবে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট। ভাবখানা এরকম যে, ট্রিগারে চাপ দিলেই খেলা খতম। কিন্তু কথায় বলে যত গর্জে তত বর্ষে না। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করানোটা কঠিন ! টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার আগে দেখা গেল আমার কাঙ্ক্ষিত শ্রেণির টিকিট রয়েছে ২৫০টি। ঠিক সকাল ৮টায় বিক্রি শুরু হওয়ার সাথে সাথে সবই শেষ। মাত্র দুই মিনিটেরও কম সময়ে সকল টিকিট হাওয়া হয়ে গেছে। তার পরও আশায় বুক বেঁধে আধাঁ ঘন্টার নিষ্ফল প্রচেষ্টা। যা হওয়ার তাই হলো। অগ্যতা কী আর করা । ভাবলাম টিকিট জুটেনি ভালই হল। অন্তত এই ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের বিবেচনায় ব্যাপারটা মন্দের ভাল নয় কি? তবে কক্সবাজার ভ্রমনের জন্য রেলের অনলাইন টিকিট নিয়ে যে অরাজকতা ও নৈরাজ্য চলছে তা এখনি থামানো দরকার। এই অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশীরা দূরে থাক দেশীয় পর্যটক হতাশায় মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। একবার মুখ ফিরিয়ে নেওয়া পর্যটকদের মধ্যে আস্তা পূণরায় ফিরিয়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা ভেবে দেখা দরকার। তা না হলে রেলের ডেমো-ট্রেন প্রকল্পের মতো হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা কক্সবাজার ট্রেন প্রকল্পটি মুখ থুবরে পড়তে পারে অতি অল্প সময়ে।
কয়েক দিন আগে চোখে পড়লো ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির অনলাইন নিউজ পোর্টালে “যে কারণে বাংলাদেশি পর্যটক যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশে” শীর্ষক শিরোনামের খবরাখবর। কক্সবাজার ও সুন্দরবনের মতো অনেক আকর্ষণীয় জায়গা থাকার পরও খুব বেশি পর্যটক টানতে পারছে না। বরং এই অঞ্চলে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া ঘুরতেই পছন্দ করেন বেশির ভাগ পর্যটক। খরচের কথা বাদ দিলেও আমাদের দেশের পর্যটন স্পটগুলিতে যাওয়া-আসার জন্য যে কঠিন লড়াই করতে হয় তা আশে-পাশের দেশে কোথাও দেখিনি। দেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারি পর্যটন কর্তৃপক্ষের অবস্থা কী তা বুঝা যায় প্রথম আলো পত্রিকার ১৫ই ফেব্রুয়ারির একটি খবর থেকেই। “জরাজীর্ণ সিলেট পর্যটন মোটেলে আগ্রহ নেই অতিথিদের” শীর্ষক খবরে জানা যায় চায়ের দেশে বেড়াতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীদের জন্য তিন দশক আগে সিলেটের বিমান বন্দর এলাকায় গড়ে তোলা হয় পর্যটন মোটেল। প্রায় ৪১ একর জমির উপর বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নির্মিত মোটেলের সঙ্গেই রয়েছে রেস্তোরাঁ ও উদ্যোন। এক সময়ের পর্যটকের ঢল নামা মোটেলটি এখন অতিথি সংকটে ভুগছে জরাজীর্ণ অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে। আমাদের কাঙ্ক্ষিত কক্সবাজার ভ্রমনের জন্য শত চেষ্টা করে অনলাইনে টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়েছি বটে। কিন্তু ১৬ই ফেব্রুয়ারির ঢাকা পোস্ট পত্রিকার খবর দেখলে আগে যারা কখনো কক্সবাজার যায়নি তাদের উৎসাহ তখনই শেষ হয়ে যাবে। “কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়, হোটেল ভাড়া বেড়েছে পাঁচগুন” শীর্ষক খবরে বলা হয়েছে -শীতের শেষে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজারে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। পর্যটকদের ভিড় বাড়লেই হোটেল-মোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও রেস্তোরাঁয় বেশি দামে খাবার বিক্রি শুরু। কে কত বেশি টাকা হাতিয়ে নিতে পারেন সেই প্রতিযোগিতায় নামেন ব্যবসায়ীরা। কোনো নিয়ম-নীতি না থাকায় অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে গেছে। যদিও এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নানা রকম সাফাই জবাব রয়েছে। অতএব তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বলে কলকাতার আনন্দবাজার পাবলিশার্স কর্তৃক বাংলা ভাষায় শব্দের ব্যবহার নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ের নামকরনের অনুকরণে বলতে হয় “কক্সবাজারে কেন যাবেন এবং কী দেখবেন ?”
কক্সবাজারের প্রত্যাশিত উন্নয়ন চাই!
আমাদের চোখ, কান, মাথা, পেট-পিঠ সবই সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে! নো চিন্তা!