শেষের পাতা
হকার উচ্ছেদ ও যানজট নিরসন
সিলেটের মেয়রকে ব্যবসায়ীদের ১৫ দিনের আল্টিমেটাম
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবারসিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ব্যবসায়ীদের দেয়া প্রথম প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। ১৬ই জানুয়ারি ব্যবসায়ী সংগঠনের এক সভায় নিজেই বলেছিলেন; এক মাসের মধ্যে নগরের হকার সমস্যার সমাধান করবেন। ১৬ই ফেব্রুয়ারি ছিল তার প্রতিশ্রুতির শেষ দিন। এ সময়ে হকারমুক্ত নগর হওয়া তো দূরের কথা বরং হকারদের দখলদারিত্ব বেড়েছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ কোর্ট পয়েন্ট, বন্দরবাজার, সিটি পয়েন্ট, জিন্দাবাজার সহ কয়েকটি এলাকায় হাঁটা-চলাই দায় হয়ে পড়েছে। এতে করে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিশ্রুত সময় পেরিয়ে গেলেও মেয়রের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের কিছুই জানানো হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ সিলেটের ব্যবসায়ীরা। তারা নতুন করে ফুটপাথ-সড়ক দখল মুক্তকরণ, যানজট নিরসনে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। বলেছেন; এ সময়ের মধ্যে নগরের ফুটপাথ-সড়ক দখল মুক্তকরণ, যানজট নিরসন না হলে দুর্বার আন্দোলনে নামবেন।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘মেয়রের কথায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু সমস্যা দূর হওয়া তো দূরের কথা, বরং দিন দিন সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এ কারণে আমরা আন্দোলনের চিন্তা-ভাবনা করছি।’ তিনি বলেন- ‘সামনে রমজান। এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। বিষয়টি নিয়ে তারা মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানান।’ এদিকে- সোমবার রাতে সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীদের এক সভায় এই আল্টিমেটাম প্রদান করা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলও।
বৈঠকে নাদেল বলেন- ‘সিসিক মেয়রকে নিয়ে নগরীর যানজট, ফুটপাথ ও রাজপথ দখল মুক্ত করতে তিনি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।’ বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন- ‘সিলেট নগরীতে যানজট সৃষ্টির যেসব কারণ তার মধ্যে একটি রাস্তা ও ফুটপাথ দখল। এ ছাড়া নগরীর সরু রাস্তাগুলোতে গাড়ি পার্কিং করে রাখা। ফুটপাথের পাশাপাশি রাস্তার বেশির ভাগ অংশও তাদের দখলে। ফলে এ রাস্তায় যানজট লেগেই আছে। পুরো বন্দরবাজার ও তার আশপাশ জুড়ে রয়েছেন ভাসমান বিক্রেতারা। সাবেক মেয়র জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ করেছিলেন। যার উপকারও পেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখন এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। তাছাড়া মেয়র এক মাসের মধ্যে নগরীকে হকার ও যানজট মুক্ত ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন নগরবাসী এখনো প্রত্যক্ষ করেনি।’
সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আতিকুর রহমান ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপনের যৌথ সভাপতিত্বে ও নিয়াজ আজিজুল করিম এবং আব্দুল মুনিম মুন্নার যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর জব্বার জলিল, পরিচালক আবু হুরায়রা আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী এমএ মতিন, হাজী নওয়াব আলী ভেজিটেবল মার্কেট সমিতির সভাপতি হোসেন আহমদ, কালীঘাটের প্রবীণ ব্যবসায়ী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম, মিরাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত।
ধীরে চলছে নগর কর্তৃপক্ষ: সিলেট নগরের ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ করতে ধীরে চলছে নগর কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন- এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হকারদের উচ্ছেদ না করে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিলেটের ফুটপাথ দখলকারী হকারদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। হকারদের দাবি মতো নগরের লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেট মাঠকে প্রস্তুত করতে কাজ শুরু করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মাঠের সংস্কার করতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘রমজানের আগেই নগরের ফুটপাথ থেকে হকারদের সরিয়ে নিতে কাজ চলছে। মাঠ প্রস্তুত হলে হকারদের জন্য নির্ধারিত জায়গা বরাদ্দ দেয়া হবে। এরপর তাদের ওখানে নিয়ে যাওয়া হবে।’ সিলেট হকার ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুর রকিব জানিয়েছেন- ‘তারা হকারদের তালিকা প্রস্তুত করছেন। প্রায় ২ হাজার হকারের তালিকা করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা হকারদের কাছে এই তালিকা হস্তান্তর করবেন। তালিকা মতো ভূমি বরাদ্দ পেয়ে তারা ফুটপাথ ছেড়ে নির্ধারিত জায়গায় চলে যাবেন।’
অকাজের ঢেকি নতুন মেয়রের হাতে সিলেটের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।