ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

‘ক্যারিশমেটিক’ তমিজকে নিয়ে সিলেটে জল্পনা

ওয়েছ খছরু, সিলেট ও মুফিজুর রহমান, কানাইঘাট থেকে
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানকে চেনেন না সিলেটের ব্যবসায়ী মহলে এ রকম ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম। আদতে তিনি ব্যবসায়ী নন। আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা। মেম্বার থেকে হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এখন ব্যবসা করছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবেও উপজেলা সমন্বয় সভায় যোগ দিচ্ছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও প্রশাসন নীরব। এক রহস্যঘেরা চরিত্র তমিজ। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে লড়ছেন বিএনপিপন্থি ইউপি সদস্যরা। দিচ্ছেন নানা জায়গায় অভিযোগ। জনপ্রতিনিধিদের মতে, তমিজের টাকাই সব রহস্য। টাকার জোরে এখনো এলাকায় দুর্দণ্ড প্রতাপশালী তিনি। কানাইঘাটের পূর্ব লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন। চোরাকারবারি ও পাথর ব্যবসার বদৌলতে গোটা সিলেটেই তার পরিচিতি। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। বাড়ি কানাইঘাটের লোভাছড়ার তীরবর্তী সাউদ গ্রামে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলেই তার উত্থান। প্রথমে ছিলেন ইউপি সদস্য। এরপর হন চেয়ারম্যান। কানাইঘাটের বাসিন্দা ও সিলেট আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমদ পলাশের সাগরেদ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পলাশের শেল্টারে চোরাকারবার, পাথর ব্যবসা করে এখন বিশাল সম্পদের মালিক তিনি। এখন পলাশের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। টাকা উড়ে তমিজের কাছে। তার টাকার কাছে সবাই অসহায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, তমিজের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা অভিযোগের শেষ নেই। বর্তমানে পুলিশের খাতায় তার বিরুদ্ধে ৯ থেকে ১০টি মামলা রয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে চোরাকারবার, পাথর লুটের ঘটনায় বেশির ভাগ মামলা হয়েছে। এসব মামলা তিনি থোড়াই কেয়ার করেন। কোনো মামলায়ই তার গায়ে আচড় লাগেনি। টাকার জোরে সব মামলাকেই ডাল-ভাত করে দিয়েছেন।

গণ-অভ্যুত্থানের পর সাময়িক সময়ের জন্য আড়ালে ছিলেন। অভ্যুত্থান ঘটনায় নাটকীয় ভূমিকার কারণে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি কানাইঘাট থানার। আর সিলেটের কোতোয়ালি থানায় রয়েছে দাঙ্গা সহ আরও দু’টি মামলা। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেছে। মামলার আসামি হলে প্রতাপশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কিছু দিন আত্মগোপনে ছিলেন। দু’মাসের মাথায় তিনি প্রকাশ্যে চলে আসেন। সিলেট নগরের সুরমা পয়েন্ট এলাকার অদূরে তার নুরজাহান হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখানে তিনি ঘন ঘন আসেন। কোতোয়ালি থানার পার্শ্ববর্তী এলাকা হলেও এখনো পুলিশ তার সন্ধান পায়নি। তমিজকে নিয়ে যেন কানাইঘাট থানা পুলিশের গরজ নেই- এমন অভিযোগ এলাকার মানুষের। বেশির ভাগ সময় তিনি কানাইঘাটের লোভাছড়ার নিজ বাড়িতেই বাস করেন। ওখানে বসে নিয়মিত চেয়ারম্যান হিসেবে ইউনিয়নের কার্যক্রমও পরিচালনা করেন। এমনকি মাঝে-মধ্যে সমন্বয় সভায় যোগ দেন। কানাইঘাট থানা পুলিশ জানিয়েছে, চেয়ারম্যান তমিজের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় একটি মামলা রয়েছে। বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা সেই মামলার পলাতক আসামি তিনি। ওই মামলায় কানাইঘাট আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আসামি। বর্তমানে একটি মামলায় পলাতক ছাড়া কানাইঘাটের আর কোনো মামলায় পলাতক নন তিনি। তবে কোতোয়ালি থানা পুলিশ বলছে, অভ্যুত্থানের সময় দায়ের করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নগরের বাইরের অনেক আসামিকে শনাক্ত করা যায় না। এ কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। বর্তমানে কতোটি মামলা রয়েছে- এ প্রশ্ন করা হলে গতকাল মানবজমিনকে তমিজ উদ্দিন জানান, ৩-৪টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় জামিন নেয়া হয়নি। পলাতক অবস্থায় নিজ বাড়িতেই রয়েছেন বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে ইউনিয়নের কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলেও জানান। বলেন, সমন্বয় সভা থেকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা বেরিয়ে যান তখন তিনি গিয়ে সেখানে যোগ দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ৩রা এপ্রিল খনিজ সম্পদ আইনে একটি, ২০১৭ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর একটি, ২০১২ সালের ৫ই মে একটি, ২০১১ সালের ১লা অক্টোবর একটি, ২০১৪ সালের ১৮ই মে একটি, ২০১৭ সালের ২০শে জানুয়ারি একটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলার বেশির ভাগই সিলেটের আদালতে চলমান রয়েছে। দু-একটি মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। 

তমিজ সম্পর্কে যা বললেন জনপ্রতিনিধিরা ও পুলিশ: পূর্ব লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের মেম্বার ও ইউপি বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘সিস্টেম’ করেই বাড়িতে থাকছেন ইউপি সদস্য। তার কললিস্ট তুললে দেখতে পাবেন প্রশাসন ও পুলিশের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। টাকার জোরে গ্রেপ্তার এড়িয়ে যাচ্ছেন তমিজ উদ্দিন- এমন দাবি ইউপি যুবদলের সাবেক সেক্রেটারি ও বর্তমান মেম্বার কুহিনুর আহমদের। তিনি বলেন, আসামি হওয়ার পরও প্রকাশ্যেই চলাফেরা করলেও তার সন্ধান পায় না প্রশাসন। তবে, কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তমিজকে গ্রেপ্তারে তিনিসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আর তার বাড়ি যে এলাকায়, সেটি দুর্গম এলাকা। ফলে সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, তমিজকে গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।  

 

পাঠকের মতামত

অবশ্যই এদের গ্রেফতার করতে হবে এবং দুদকে মামলা দিতে হবে।

motiur rahman
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৫ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status