ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে ইসি’র প্রতি আহ্বান ফখরুলের

স্টাফ রিপোর্টার
১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে রাখার নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমি আজকে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ দিতে চাই এই ফোরাম থেকে যে, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা আশা করবো যে, নির্বাচন কমিশন এই কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে তারা একটা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন।  

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে জুলাই ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে মির্জা ফখরুল জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা দাবি করছি, যেন এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেই ধরনের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারে এবং সেইভাবে যেন তারা কাজ করেন।

‘নির্বাচন হবে কি হবে না’- রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন গুঞ্জনের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। এখানে মান্না ভাই জানতে চেয়েছেন নির্বাচন হবে কী হবে না। অনেকে বলেছেন যে, হবে না। কেন? নির্বাচন তো এদেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো এদেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে। সমস্যা হলো যে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংস্কারের কাজগুলো করে নির্বাচিত সরকারের দিকে যাই, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পণ্যের ওপরে ৩৫% ট্যারিফ আরোপ করেছে। মূল যেটা আমরা রপ্তানি করি- সেটা হচ্ছে, আরএমজি তৈরি পোশাক, এই পোশাক শিল্পের ওপরে যদি ৩৫% ট্যারিফ আসে তাহলে এই পোশাক শিল্প মাটিতে শুয়ে পড়তে পারে, উঠতে পারবে না। তাতে আমাদের অর্থনীতির যে মেরুদণ্ড, সেই মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। এটা অত্যন্ত আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতোটুকু এব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছেন, আমি জানি না। সময় বোধহয় এখনো চলে যায়নি। এখনো সময় আছে।

সীমান্ত হত্যা ও পুশইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা এবং পুশইন, এই কথাগুলো আমরা সেইভাবে ঠিক বলছি না। পত্রিকায় ছোট ছোট করে নিউজ দিচ্ছি। আামি সকল সংবাদকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীদেরকে অনুরোধ করবো, ব্যাপারটিকে সিরিয়াসলি দেখার জন্য, এটা কোনো হালকা ব্যাপার নয়। প্রতিদিন ঘটছে এসব, সীমান্তের চারদিকে ঘটছে। সুতরাং এই বিষয়টাকে আরও গুরুত্ব সহকারে জনমত সৃষ্টি করার জন্য আপনাদের নিয়ে আসা দরকার এবং এই ব্যাপারে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানাবো যে, তারা এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, জুলাই সনদ প্রথম যখন কথা উঠলো, যখন সরকার চাইলো, তোমরা তোমাদের মতামত দাও, আমরা তখনই দিয়ে দিয়েছি। এরপর কয়েকদিন আগে সরকারের তরফ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে, আমরা বুধবার রাতে সেই মতামত দিয়ে দিয়েছি। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চাই। কেন? নির্বাচন যদি সংসদের না হয় তাহলে দেশে একটা অন্ধকারী শক্তি আবার ক্ষমতায় আসবে। অতএব আমাদের সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে নির্বাচন হয়। আমি মনে করি, নির্বাচন একটা হবে, সেই নির্বাচন সবাইকে করতে হবে। যারা মনে করছে যে, এভাবে নির্বাচন করা যাবে না তারাও দেখবেন, এভাবে যদি নির্বাচন না করি তাহলে যেই অবস্থা আসবে, যেই ভাব তৈরি হবে-সেইভাবে ভাবের মধ্যে রাজনীতিই করতে পারবেন না। এই কারণে সবাই যুক্তির কাছে আসতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি, বার বার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধার সৃষ্টি করছে। কিছু দূর এগিয়ে আবার কিছু দূর পিছিয়ে। গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী এই ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় হয়েছে। আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ তো নেই, দুঃশাসন তো বিদায় নিয়েছে, নো। আমরা তো তাকিয়ে দেখতে পাই, আমাদের সামনে কিন্তু এখনো দেখতে পাচ্ছি, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো বিরাজমান। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের  প্রেত্মাতারা, দিল্লির আধিপত্যের কালো থাবা চতুর্দিকে ছেয়ে বসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-আন্তর্জাতিক নীতি-কূটনীতি ইভেন সামনের নির্বাচনে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কীভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া যায় তার চক্রান্ত কিন্তু এখনো বিদ্যমান।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, একেএম মহসিন, ইরফানুল হক জাহিদ, সাঈদ খান, দিদারুল আলম, খন্দকার আলমগীর হোসেন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভায় ফ্যাসিবাদ বিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক। অনুষ্ঠানে বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ৬ সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা প্রদান করেন বিএনপি মহাসচিব।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status