ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

ভারতীয় ও রোহিঙ্গাদেরও পুশইন করছে বিএসএফ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, পুশব্যাক বা পুশইন যেটাই বলেন এটা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে প্রতিনিয়ত কড়া প্রতিবাদ সব সময় জানাচ্ছি। এরপরও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পয়েন্টে আগে সেই দেশে যাওয়া বাংলাদেশিদের সঙ্গে রোহিঙ্গা ও ভারতীয় নাগরিকদেরও পাঠানো হচ্ছে। যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। গতকাল চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবি’র ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি)’র বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি’র ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, পুশইন-পুশব্যাকের বিষয়ে আমরা বিএসএফকে বলেছি। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার ভারতীয় হাইকমিশনে লেখালেখি হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসেও লেখা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের হাইকমিশনারের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখছি। আমরা তাদের (বিএসএফ) বলেছিলাম নিয়মমাফিকভাবে হ্যান্ডওভার করতে। যদি আমাদের কেউ বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে থাকে, তাহলে আমরা বিএসএফকে বুঝিয়ে মিটিংয়ের মাধ্যমে সমঝোতা করে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় তারা আমাদের কাছে অফিসিয়ালি হ্যান্ডওভার করছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে বিএসএফ শুনছে না। কিছু কিছু জায়গায় পুশব্যাক বা পুশইন এখনো চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যারা আসছেন তারা বাংলাদেশি, যারা আগে ভারতে গিয়েছিল। তবে শুধু বাংলাদেশিকেই পুশব্যাক করানো হচ্ছে না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিককে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককেও পাঠিয়ে দিচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তাই আমরা কঠোর প্রতিবাদ করেছি। জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে। 

এ সময় বিজিবিতে জনবল সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, জনবলের সংকট রয়েছে। তবে, এটা আপেক্ষিক একটা বিষয়। আমাদের জনবল সব মিলে প্রায় ৫৭ হাজার। আমাদের ৪,৪২৭ কিলোমিটারের অত্যন্ত দীর্ঘ বর্ডার। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল ভূমিও আছে। সে তুলনায় জনবল আমাদের আরও বাড়ানো প্রয়োজন। জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে উখিয়াতে একটা ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।  আরও বিভিন্ন জায়গায় আরও কিছু ব্যাটালিয়ন চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন নতুন বিওপি বাড়ানো হচ্ছে। অচিরেই আরও ৫ হাজারের মতো জনবল বৃদ্ধির আশ্বাস আমাদেরকে দিয়েছে বর্তমান সরকার। আমরা হয়তো এই রিক্রুটমেন্ট এবং ট্রেনিং শেষ করে বর্ডারে অন্যান্য কার্যক্রমসহ আসন্ন যে জাতীয় নির্বাচন, সেখানেও আমরা কাজে লাগাতে পারবো। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের এ সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়েছে। শুধু বিজিবি না, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও জনবলসহ অন্যান্য সংকট দূরীকরণে সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, জাতীয় নির্বাচন সম্পন্নে প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সীমান্ত রক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই বাকি জনবলগুলো আমরা সুষ্ঠু-সুন্দর ফেয়ার জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে সাপোর্টটুকু দেয়া দরকার, তা যেন দিতে পারি। তিনি বলেন, সীমান্তের ৮ কিলোমিটার এলাকায় ভোট কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, ভবিষ্যতে এটা নির্বাচন কমিশন বা সরকার যেভাবে দায়িত্ব দেয় আমরা সেভাবে কাজ করবো। এ ব্যাপারে নির্বাচন কেন্দ্রে বা ভোট কেন্দ্রে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় বা জনজীবনের নিরাপত্তা হানি ঘটে সেজন্য শুধু বিজিবি নয় পুলিশ, আনসার, কোস্ট গার্ডসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সকল বাহিনীকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে একই স্থানে বিজিবি’র ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজিবি প্রধান বলেন, দেশমাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষায় নবীন সৈনিকরা প্রয়োজনে তাদের জীবন দেবে তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে না। 

নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহীয়সী নারীদের অংশগ্রহণ, অবদান ও আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। আজ নারীরা বিভিন্ন অঙ্গনে যথাযথ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। আজ নবীন নারী সৈনিকরা দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দীপ্ত শপথ নিয়ে সৈনিক জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। নবীন নারী সৈনিকরা বিজিবি’র সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আরও গতিশীল ভূমিকা রাখাসহ বাহিনীর সুনাম-সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করবে বলে বিজিবি মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের তেজদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বৃহত্তর কর্মজীবনে কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। নবীন সৈনিকরা যখন সীমান্তে নিয়োজিত থাকবে তখন তাদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার ওপরই নির্ভর করবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব। প্রতিপক্ষ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে কোনো অবস্থাতেই নমনীয় আচরণ না করার জন্য নবীন সৈনিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান বিজিবি মহাপরিচালক।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status