শেষের পাতা
অবরোধে গাড়িতে আগুন, বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবারসরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের ১০ম দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শেষদিনে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৯টি যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। বুধবার দিবাগত রাত ও বৃহস্পতিবার সকাল এবং দুপুরে এসব গাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে ঢাকায় তিনটি এবং সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জে ৬টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। তবে এসব ঘটনায় পুলিশ জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি এবং কেউ হতাহতও হয়নি। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আগামী রোববার ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
গতকাল দিনের বিভিন্ন সময়ে অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর শাহবাগ, ধানমণ্ডি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, আনসার ক্যাম্প, খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি সেগুনবাগিচা, বিশ্বরোড বাসাবো, নাইটিঙ্গেল, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা এবং শাহজাহানপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপিসহ বিরোধীরা। বিএনপি’র পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক এবং ছাত্রদলসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ওদিকে অবরোধে দূরপাল্লার বাস তেমন চলাচল না করলেও রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল ছিল অনেকটা স্বাভাবিক।
শাহবাগ ও মতিঝিলে বাসে আগুন: অবরোধের শেষদিনে বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীর শাহবাগ ও মতিঝিলে দুটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। গতকাল সকাল ও দুপুরে এসব বাসে আগুন লাগানো হয়। বেলা দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনে তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট পুলিশ পাহারায় গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এরআগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের কাছে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগানো হয়। ওদিকে বুধবার রাত সোয়া ১২টার দিকে আগারগাঁওয়ে একটি ব্যাংকের সামনে থেমে থাকা একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে একটি চালভর্তি ট্রাকে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের শাহজাদপুর উপজেলার টেটিয়ারকান্দা নামক স্থানে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকায় একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা চালক আহত হয়েছেন।
জামায়াতের বিক্ষোভ ও মিছিল: কেন্দ্র ঘোষিত টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও পিকেটিং করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকালে কাজীপাড়া, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, ডেমরা ও পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এসব মিছিল করে তারা। সকালে ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে কাফরুল অঞ্চলের নেতাকর্মীরা মিরপুর কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুল মতিন খান। মিরপুর-১ নম্বর আনসার ক্যাম্প এলাকায় অবরোধ সমর্থনে মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন মজলিসের অন্যতম সদস্য জসিম উদ্দিন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করেছেন কর্মীরা। উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে এ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুস সবুর ফরহাদের নেতৃত্বে বাড্ডায় মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা।
এছাড়া অবরোধ সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সকালে ডেমরা ও সিদ্দিক বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। পুরান ঢাকায় সড়ক অবরোধ করে মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য এম আর আজাদ।
তোপখানা রোড, বিজয় নগর ও নয়াপল্টনে সড়কে মিছিল করেছে গণফোরাম, পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি এবং লেবার পার্টিসহ বিভিন্ন জোট ও দলগুলো।
অন্যদিকে অবরোধ চলাকালে গত ২৪ ঘণ্টার তথ্য তুলে ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, এসময়ে ৪১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আহত হয়েছে ১০০ জন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৯টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০৪৫ জন নেতাকর্মীকে।
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, একদফা দাবি ও তফসিল বাতিলের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে নান্দাইলে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অবরোধের সমর্থনে বিএনপি’র মিছিলে পুলিশের বাধা দেয়ায় বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ সংঘর্ষ ঘটে। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের এসআই কামাল হোসেন ও পুলিশ কনস্টেবল জাহিদুলসহ বিএনপি’র ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) সুমন মিয়া ও নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রাশেদুজ্জামান রাশেদ ঘটনাস্থল যান। এ সময় বিএনপি’র এক কর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র সদস্য ও উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসের খান চৌধুরী সমর্থিত নেতাকর্মীরা মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের বেলালাবাদ গ্রাম থেকে একটি অবরোধ মিছিল বের করে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উঠতে চাইলে পুলিশ বাধা প্রদান করে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে বিএনপি নেতা খাইরুল ইসলাম মানিক, বাদল মিয়া, সোহেল, আব্দুল জলিল, ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান খান ইভাদ, সাহাদাত হোসেন রাব্বী, দেলোয়ার হোসেন রানা ও হৃদয় হাসানসহ ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) সুমন মিয়া বলেন, মিছিলটি ময়মনসিংহ টু কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে উঠতে চাইলে তাদেরকে নিষেধ করা হয়। পরে নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪টি টিয়ারশেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। উক্ত ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।