ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

র প্রধান গোয়েলের শেষ দিনে নিখিল গুপ্তকে গ্রেপ্তার করে চেক পুলিশ

মানবজমিন ডেস্ক

(১ বছর আগে) ৩ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৬:৪১ অপরাহ্ন

mzamin

গত জুন মাসে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যা করা হয়। ওই একই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে আরেক কথিত খালিস্তানপন্থী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এই দুই হামলার সঙ্গে যে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জড়িত তা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই। যদিও একটি চেষ্টাকে আপাত সফল মনে হলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পরে যাওয়ায় সেটিকেও ব্যর্থ বলেই ধরে নিতে হবে। নর্থইস্ট নিউজের এক বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে। 

এতে আরও বলা হয়, ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে- মূলত যথেষ্ট পরিকল্পনা না থাকায়ই এই অপারেশন দুটি ব্যর্থ হয়েছে। নিজ্জর ও পান্নুনকে হত্যার চেষ্টা যে একটা গুপ্ত পরিকল্পনার অধীনে ছিল তা সহজেই বুঝা যায়। আইন অনুযায়ী এমন ধরনের অপারেশন পরিচালনা করা যায় না। ভারতের বিদ্রোহ প্রবণ রাজ্যগুলোতে এমন অপারেশন চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আইবি ও র-এর। 

নিজ্জর এবং পান্নুন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার কারণ কী তা খুজে বের করতে ভারত এরইমধ্যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। ঠিক কী ভুলের কারণে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই খুনের প্লট টের পেয়েছে তা যাচাই করা হচ্ছে। তবে ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলি ছিল একেবারেই সাধারণ। প্রথমত এই দায়িত্ব ভুল কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছিল এবং তিনি অপারেশনটির জন্য প্রয়োজনীয় সাবধানতা বজায় রাখতে পারেননি।

দুটি অপারেশন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ঘটনা দুটির স্থান একেবারেই কাছাকাছি ছিল, একটি ভ্যাঙ্কুভারে এবং অপরটি নিউ ইয়র্ক সিটিতে। আবার দুটি ঘটনা ঘটেছিল দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে। এমন একটি কাজের জন্য জুনিয়র পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়াও আরেকটি বড় ভুল ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা বলছেন, পান্নুন’কে হত্যার পরিকল্পনা সাজান ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা। তিনি এ জন্য নিখিল গুপ্ত (৫২) নামে ভারতীয় নাগরিক এক ব্যক্তিকে এ কাজে নিয়োজিত করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিখিল অন্য এক ‘ক্রিমিনাল’কে ভাড়া করেন গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুন’কে হত্যা করতে। এ জন্য এক লাখ ডলার দেয়ার চুক্তি হয়। কিন্তু আসলে নিখিল যাকে ‘ক্রিমিনাল’ হিসেবে হত্যা মিশনে দায়িত্ব দেন তিনি প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ছদ্মবেশধারী একজন গোয়েন্দা এজেন্ট। তার ফাঁদে পা দিয়েই ধরা পড়ে যান নিখিল গুপ্ত। 

নিজ্জর ও পান্নুনকে হত্যার এই পরিকল্পনা যখন করা হয়, তখন র-এর প্রধান ছিলেন সামন্ত গোয়েল। তিনি ২০১৯ সালের ২৯শে জুন র-এর দায়িত্ব নিয়ে ২০২৩ সালের ৩০শে জুন অবসরে যান। যে কোনো তদন্তের ক্ষেত্রে তাই গোয়েলকে ডাকা হবে তা নিশ্চিত। তবে গোয়েলের পর র-এর দায়িত্ব নেয়া রাভি সিনহা এই অপারেশন সম্পর্কে জানতেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। জেনে থাকলেও সে সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তার সরাসরি কোনো হাত থাকার কথা নয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের ডকুমেন্ট বলছে, ১৮ই জুন মুখোশ পরা বন্দুকধারী হরদ্বীপ সিং নিজ্জরকে হত্যা করে। নিজ্জর ছিলেন ভিক্টিমের (পান্নুন) সহকারী এবং পান্নুনের মতোই একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতা। তাকে ভারত সরকারের একজন সমালোচক হিসেবেও উল্লেখ করে মার্কিন আদালত। নিজ্জরকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর নিখিল গুপ্তর কাছে একটি ভিডিও পাঠান ভারতীয় এক কর্মকর্তা। তাকে সিসি-১ নামে উল্লেখ করা হয় নথিতে। ওই ভিডিওতে নিজ্জরের রক্তাক্ত মরদেহ দেখা যায়। এর এক ঘণ্টা পর নিখিলকে পান্নুনের ঠিকানা পাঠান সিসি-১। 

২০শে জুন সিসি-১ নিখিলকে পান্নুন সম্পর্কে একটি সংবাদের লিংক পাঠান। তিনি নিখিলকে বলেন, পান্নুনকে হত্যা করা এখন আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে পরে। অর্থাৎ, সবমিলিয়ে পান্নুনকে হত্যায় বেশ তাড়াহুড়ো ছিল তা স্পষ্ট। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে এ নিয়ে সিসি-১ ও নিখিলের মধ্যে বেশ কিছু মেসেজ আদান প্রদান ও ফোনালাপ হয়েছে। আর এ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হয়েছে যে, পান্নুনকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে তার অফিস কিংবা বাসা যে কোনো এক স্থানে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে পান্নুনকে হত্যার এই পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়। কারণ ৩০শে জুন নিখিল গুপ্ত ভারত থেকে চেক রিপাবলিক সফরে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রই চেক রিপাবলিক কর্তৃপক্ষের কাছে নিখিলকে গ্রেপ্তারের আবেদন জানায়। তার বিরুদ্ধে পান্নুনকে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়। ওই দিনই ছিল গোয়েলের র প্রধান হিসেবে শেষ দিন।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status