বাংলারজমিন
পিতার লাশ দাফনে সম্পত্তিবঞ্চিত মেয়েদের বাঁধা, উঠানে লাশ রেখেই পালালো ছেলে
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
(১১ মাস আগে) ১ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১২:১২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন
খুলনা জেলার পাইকগাছায় মেয়েসহ স্ত্রীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে ছেলের নামে লিখে দেয়ায় পিতার লাশ দাফন আটকে দেয় মেয়েরা। বিষয়টি জানাজানি হলে লাশ দাফনের ব্যবস্থা না করেই স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যায় ছেলে। পরবর্তীতে পাইকগাছা থানা ওসির হস্তক্ষেপে লাশটি দাফন করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার গদাইপুরের ঘোষাল এলাকার মৃত কওসার গাজীর ছেলে সওকাত গাজী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে ওইদিন সকাল ৮টায় তার লাশ বাড়িতে নেয়া হয়। মৃত্যুর আগে তিনি শরিক হিসেবে ৫ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ স্ত্রীকে রেখে যান। তবে তিনি অসুস্থ হলে তার ছেলে মামুন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সকলের হক বঞ্চিত করে সমুদয় সম্পত্তি পিতার থেকে কৌশলে লিখিয়ে নেয়। আর এই ঘটনাটি স্বজনদের অজানা ছিল। এরপর ঐদিন সকালে তার লাশ বাড়িতে পৌঁছালে দাফনের জন্য গোসল করাতে নিলে সাকাত গাজীর হাতের বুড়ো আঙ্গুলে কালির ছাপ দেখা যায়। তারপর সম্পত্তি লিখে নেয়ার ঘটনা আঁচ করতে পেরে মৃতের ৫ মেয়ে মিলে পিতার লাশ দাফনে বাঁধা দেয়। আর শরিক ফাঁকি দেয়ায় স্থানীয়রাও তার জানাযাসহ লাশ দাফন করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে মঙ্গলবার থেকে দু’দিন লাশটি বাড়ির উঠানেই পড়ে ছিল।
এদিকে ঘটনা জানাজানির পর বাড়িতে পুলিশ উপস্থিত হলে বুধবার সন্ধ্যায় মামুন পিতার লাশ ফেলে রেখেই বাড়ি থেকে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে থানার ওসির হস্তক্ষেপে লাশ দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে মৃত সওকত গাজীর মেয়ে লাবনী আক্তারসহ ভুক্তভোগী সকলেই বলেন, পিতার অসুস্থতার সুযোগে চিকিৎসার নামে তাদের ভাই মামুন কাউকেই কিছু না জানিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। যার ফলে পিতার লাশ দাফনে তারা বাঁধা দিয়েছিল।
স্থানীয় ঘোষাল জামে মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেন বলেন, সওকত গাজীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মঙ্গলবার বাদ জোহর জানাজার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে মৃতের ৫ মেয়ে এসে তাদের জমির হক বঞ্চিত করায় জনাজা এবং লাশ দাফনে বাঁধা দেয়। ফলে মুসল্লীসহ গ্রামবাসী জানাযার নামাজ না পাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
পাইকগাছা থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের সম্পত্তির হক বঞ্চিত করায় তারা পিতার লাশ দাফনে বাঁধা দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হক বঞ্চিত মেয়েদেরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে মেয়েরা চাইলে তাদেরকে সার্বিক আইনি সহযোগিতাও করা হবে বলে জানানো হয়। সর্বশেষ থানা পুলিশ, ইমাম বেলাল হোসেন, মাওলানা আহমদ আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শত মানুষের উপস্থিতে বৃহস্পতিবার মৃতের জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
ইসলামের হুকুম মানুষ মারা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাজা দিয়ে দাফন করা। তারা এসব না করে তারা দুনিয়াবি মোহে ডুবে আছে। আমি মনে করি মরহুমের যাবতীয় সম্পত্তি মরহুমের নামেই মসজিদ মাদ্রাসায় দান করা উচিৎ। কি লাভ হল সম্পদ অর্জন করে এই যদি হয় অবস্থা। যার সম্পত্তি সে চলে গেল, কিন্তু তার মুল্যায়ন করা হল না। এখান থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মাতা-পিতা তাদের এই ছেলে-মেয়েদের কে পর্যাপ্ত পরিমান ইসলামী শিক্ষা দেয়নি, যার জন্য ছেলে তার মা-বোনদের হক নষ্ট করছে এবং মেয়েরা তাদের পিতার লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে, এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে, আমাদের সন্তানদেরকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে দ্বীন/ইসলামী শিক্ষা দেওয়া উচিৎ ।