শেষের পাতা
ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের সালমান এফ রহমান
বাংলাদেশ বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থান
এমএম মাসুদ, প্যারিস, ফ্রান্স থেকে
২৫ অক্টোবর ২০২৩, বুধবারফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে আকর্ষণীয় প্যাকেজ ও ট্যাক্স ইনসেনটিভ রয়েছে। শতাধিক অর্থনৈতিক জোন এবং হাইটেক পার্ক রয়েছে। এসব স্থানে বিনিয়োগ করলে অর্থ বিফলে যাবে না। তাই বাংলাদেশে আসুন এবং বিনিয়োগ করুন।
গতকাল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের অপেরা বলরুমে ‘বাংলাদেশ-ফ্রান্স ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এটি গত ১৫ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আশাবাদী শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকবার ফ্রান্স সফর করেছেন। সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। অতএব, এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন অনেক গভীরে। তাই ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের কাছে আহ্বান জানাই আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। বিনিয়োগের সুফল ঘরে তোলার সুযোগ গ্রহণ করুন। বাংলাদেশ এখন ইমার্জিং টাইগার।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে অনেকেই তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে অভিহিত করেছিল। সেখান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৯ সালে আবারো ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের চেহারা পরিবর্তন করেছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের জিডিপি’র আকার ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে তা বেড়ে বর্তমান ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
মাথাপিছু আয় প্রায় ২৯০০ ডলার। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে অষ্টম। এরপরেও খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছি।
চাল উৎপাদনে আমরা বিশ্বে চতুর্থ। মাছ উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে আমরা তৃতীয়। এ ছাড়া সবজি উৎপাদনে আমরা বিশ্বে তৃতীয়। দুধ ও পোল্ট্রি উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর খাদ্য নিরাপত্তা সংকট বিশ্বে একটি আলোচিত বিষয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ ভালো জায়গায় অবস্থান করছে। এই দিক থেকে আমরা খুবই ভাগ্যবান।
বিদ্যুৎ উৎপাদনেও আমরা সাফল্য দেখিয়েছি। একসময় দিনে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। এখন সেটা অনেক কমে এসেছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। এ ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রবেশ করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ব্যবহারে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, দেশে গত ১৫ বছরে বেসরকারি খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমান সরকারও সার্বিক দিক দিয়ে সহযোগিতা করছে। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই, ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা, ফ্রান্স-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পিয়েরে জিন মালগুয়েরেস প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অবকাঠামোগত সুবিধা, সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর, আন্তঃদেশীয় রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ নানা কারণে বাংলাদেশ আজ সবচেয়ে বিনিয়োগবান্ধব এবং সম্ভাবনার দেশ।
তিনি বলেন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে যেহেতু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, সেখানে আমাদের মাথাপিছু আয় শুধু দ্রুত বৃদ্ধিই পাচ্ছে না, প্রায় ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ৫০০০ ডলার। আগামী এক দশকে এই সংখ্যা ৭ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ‘পাশাপাশি আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা পণ্যের বাজার ভারত, মিয়ানমার, নেপাল এমনকি চীন পর্যন্ত বিস্তার করা সহজতর’ বর্ণনা করেন হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের চিন্তা করছে প্যারিস।’ বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বে ফ্রান্স একটি বৃহত্তম বাজার। এই বাজারে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক তথ্য পৌঁছে দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশকে ফ্রান্স পার্টনার মনে করে। এটাই আজকের পরিবর্তন।’
ফ্রান্স-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পিয়েরে জিন মালগুয়েরেস বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য জানতে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসে বিজনেস ডেলিগেশন যাবে। তারা সেখানের পরিস্থিতি দেখে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত এই সম্মেলনে বাংলাদেশের বক্তারা আগত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ও অংশীজনদের কাছে এ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতার বিষয় তুলে ধরেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দুই দেশের দূতাবাস এ সম্মেলনের সহযোগী।