অনলাইন
বে অফ বেঙ্গল কনভারসেশনে বক্তারা
‘সমালোচনা সহ্য না করলে ক্ষমতায় থাকলেও রাজনীতিকরা সফল হন না’
তারিক চয়ন
(১ বছর আগে) ৮ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ৮:০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ অপরাহ্ন

অভিজ্ঞতা ছাড়া রাজনীতি কিছুই নয়। জনতুষ্টিবাদের এই যুগে গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ হওয়া খুব কঠিন। রাজনীতিতে আসলে তরুণদের অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। রাজনীতি করা এখন ক্ষতিকর। অধ্যাপকসহ অনেক বিজ্ঞ লোকরাও রাজনীতি বুঝেন না। রাজনীতি খুবই জটিল কাজ। রাজনীতির সঙ্গে সবকিছুই যুক্ত।
রোববার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অফ বেঙ্গল কনভারসেশন-বিওবিসি’র দ্বিতীয় দিনে জার্মানির বিখ্যাত সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক আলি আসলানের সঞ্চালনায় ‘দি ভিউ ফ্রম দ্য টপ, পলিটিক্যাল লিডারশিপ ইন দ্য মডার্ন এইজ’ শীর্ষক আলোচনায় সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ এমন মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাজনীতিতে মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে আপনাকে ক্ষমতায় যেতে হয়। সফল রাজনীতিবিদ হতে হলে ‘ব্যালেন্স’ করতে হয়। সেক্ষেত্রে নীতি- নৈতিকতার সঙ্গে আপস করতে হয়। আপস করলে মানুষ আবার ভালোভাবে নেয় না। সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা রাজনীতিকদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে তাদের সঠিক পথে রাখেন। কিন্তু, সাংবাদিকরাও রাজনীতিবিদদের মতো দুই প্রকার: নোংরা অথবা সৎ।
সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মনে করেন, রাজনীতিবিদরা অন্যদের মতোই মানুষ হলেও সাধারণ মানুষ ভাবে তাদের নেতা নির্বাচিত করে যেন দেবদূত বানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিরোধী দলে থাকতে আমিও জেলে গিয়েছিলাম। সমালোচনা ছাড়া ক্ষমতায় থেকেও কেউই সফল হতে পারে না।
মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মৌসা মারা বলেন, আমরা রাজনীতিক, সুশীল সমাজের কাছ থেকে এখন অনেক বেশি মিথ্যা তথ্য আর গুজব ছড়াতে দেখছি। আপনি যখন দায়িত্ব নেবেন, তখন বুঝবেন প্রত্যাশার চাইতে বাস্তবতা ভিন্ন। রাজনীতি জটিল কাজ হলেও এটা সম্মানের। এটা মানুষের দেয়া সম্মান। রাজনীতিকরা সৌভাগ্যবান। সফল রাজনীতিক হতে হলে ধৈর্য থাকাটা খুব জরুরি। পরিবার পরিজন চাইবে না আপনি রাজনীতি করুন।
৩৯ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হওয়া মৌসা মারা বলেন, গণতন্ত্রে কিছু নিয়ম আছে, কিছু নৈতিকতা আছে। সমালোচনা গণতন্ত্রেরই অংশ। সত্যিকার গণতন্ত্র চাইলে সমাজে সব ধরনের সমালোচনার দরজা খুলে দিতে হবে। প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে হবে। গণতন্ত্র শতভাগ নিখুঁত না হলেও প্রতিনিয়ত একে শক্তিশালী করা যায়।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তরুণরা রাজনীতি করতে চাইলে, দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে আগে তৃণমূল থেকে কাজ শুরু করুন। স্থানীয় কাউন্সিলর, মেয়র হলেও হোন। কখনো হাল ছাড়বেন না।
ওদিকে, দুপুরের সেশনে বরিস তাদিচ বলেছিলেন, যুদ্ধের পর শান্তি আনয়নের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার না দিয়ে যুদ্ধ প্রতিরোধ করার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া উচিত। দুপুরের অন্যান্য সেশনে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রুনেই দারুসসালামের হাইকমিশনার হাজী হারিস বিন উসমান, ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস, চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজসহ দেশি-বিদেশি অনেক বক্তা বক্তব্য রাখেন।
একেবারে সকালের আলোচনায় ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফাং (এফইএস) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কলবিজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন, মাদাগাস্কারের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডমিনিক রাকোতোজাফি এবং এফইএস-এর আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক কার্যালয়ের প্রধান মার্ক সেক্সার।
এ ছাড়া, মালয়েশিয়ার শিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল্লাহ রাশীদ আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর এবং ভারতসহ কয়েকটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দ্বিতীয় দিনের বিভিন্ন সেশনে বক্তব্য রাখেন।