বিশ্বজমিন
চীন-ভারতের দ্বন্দ্ব, নেপালে পর্যটন খাতে ধস
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

ভারত ও চীন পরস্পরের বিরোধিতার কারণে নেপালের বিমানবন্দরে আসছে না আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বিমান। এতে সেখানকার পর্যটন খাতে বড় রকম লোকসান দেখা দিচ্ছে। যারা এ খাতে ঋণ করে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদের এখন মাথায় হাত। নেপালি কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রীবাহী বড় বিমানগুলোকে দিল্লি তার পশ্চিমাঞ্চলীয় আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। এর অর্থ গৌতম বুদ্ধ বিমানবন্দরে যেতে বিমানগুলো ভারতের ওপর দিয়ে উড়তে পারছে না। এমন সুবিধা দেয়া হলে এসব ফ্লাইটের খরচ কম হয়। এ নিয়ে অনলাইন বিবিসিতে বিস্তারিত এক রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, উজ্বল কমলা রঙের হোটেল থেকে বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এর মালিক বিষ্ণু শর্মা চোখে তেমন কিছু দেখতে পান না। তার হোটেল নেপালে বৌদ্ধের জন্মস্থান লুমবিনি শহরে। সেখানে তার হোটেল থেকে দূরে পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়। তিনি আশা করেছিলেন পর্যটকে ভরে যাবে এলাকা। কিন্তু সেই আশা সুদূরপরাহত। এর জন্য তিনি চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনাকে দায়ী করেন। লুমবিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের মতে, লুমবিনিতে ২০২২ সালে ১০ লাখের মতো পর্যটক গিয়েছিলেন। অথচ এই এলাকাকে পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত করতে সরকার ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার খরচে নির্মাণ করেছে গৌতম বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। তা খুলে দেয়া হয়েছে গত বছর মে মাসে। তারপর যেসব পর্যটক গিয়েছেন সেখানে, তার বেশির ভাগই নেপালের। এক তৃতীয়াংশের কম আছেন প্রতিবেশী ভারতের। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে স্থলপথে লুমবিনি যেতে দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। কিন্তু বিমানপথে পর্যটকরা কাঠমান্ডু থেকে খুব সহজেই এই বিমানবন্দরের যেতে পারেন। কিন্তু প্রত্যাশিত সেই পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেনি।
বিষ্ণু শর্মা বলেন, সরকার আমাদেরকে বলেছে পর্যটন বিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণ করতে। তারা বলেছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আসবে। কিন্তু আমার হোটেলের দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁকা। কিভাবে ঋণ শোধ করবো, সেই চিন্তায় এখন অস্থির আমি। এখনও তার ঋণের পরিমাণ কয়েক লাখ রুপি। পর্যটন বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেখান, পর্যটক বাড়তো, যদি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারতো নিয়মিতভাবে। কিন্তু তাতে দিল্লির আপত্তি আছে। তারা বিদেশি যাত্রীবাহী বড় বিমানকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই বিমানবন্দরটি ভারত সীমান্তের কাছে। এই সীমান্তেই গত বছর ডিসেম্বরে অরুণাচল প্রদেশে ভারত ও চীনের সেনারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। বিমানবন্দরটি উদ্বোধনের মাত্র সাত মাস পরের ঘটনা এটি। ২০২০ সাল দুই দেশের সেনাদের মধ্যে বড় রকম এনকাউন্টার হয়। তাতে কমপক্ষে ২০ সেনা সদস্য নিহত হন। দুর্বলভাবে চিহ্নিত ৩৪৪০ কিলোমিটার সীমান্ত, যা লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নামে চিহ্নিত। এই সীমান্তে আছে নদী, হ্রদ, তুষারচূড়া। এর ফলে সীমান্ত নির্ধারণ করা কঠিন। অনেক স্থানে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ভারত ও চীনের সেনারা।
সীমান্তের এই উত্তেজনা ক্রমবর্ধমান রাজনীতিতেও লেগেছে। উত্তেজনা আছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই উত্তেজনা কমানোর একমাত্র মাধ্যম আলোচনা দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৬২ সালে তারা একটি যুদ্ধ করেছে। তখন তাতে অমানবিক পরাজয়ের মুখে পড়ে ভারত।