ঢাকা, ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

চান্দুরা টু আশুগঞ্জ: সরজমিন ৫ ঘণ্টা

হাইওয়ে পুলিশও আছে, সিএনজিও চলছে, দালালদের দৌড়ঝাঁপ

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার
mzamin

হাইওয়েতে চলাচল নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার। এ আদেশ কাগজেই বন্দি। প্রায়ই চলে হাইওয়ে পুলিশের অভিযান।  বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দুরা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে সরজমিন দেখা যায় মহাসড়কে সিএনজি’র দাপট। অভিযানে নামা হাইওয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই চলছে সিএনজি। চালকদের কথা মান্থলি দিয়েই চালাচ্ছি গাড়ি। সাংবাদিক পরিচয়ধারী কয়েকজন সহ ১৪-১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট নিযন্ত্রণ করছে এসব সিএনজিকে।  ওইদিন সকাল ৯ টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চান্দুরায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ১০-১২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। যাত্রীরা উঠছেন। ছেড়ে যাচ্ছে সরাইল, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। মহাসড়কের শাহবাজপুর, বাড়িউড়া এলাকায় সড়কের ওপরই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে সিএনজি। যাত্রী বোঝাই করে চলে যাচ্ছে। সরাইলের খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে মহাসড়কের কুট্টাপাড়া মোড়। সেখানে সড়কের ওপরই সিএনজি স্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী টানছে। চলমান সিএনজিগুলোর মধ্যে নিবন্ধনবিহীন বেশি। আর ‘মায়ের দোয়া’, ‘সাফা মারূয়া’, ‘ভাই ভাই পরিবহন’, ‘রাহিম পরিবহন’, ‘ইভা পরিবহন’, ‘মা বাবার দোয়া’, নিহাদ-জিহাদ পরিবহন’, ‘শিহাব শাফায়েত পরিবহন’, ‘শামীম পরিবহন’, ‘শের আলী পরিবহন’, ‘তাকিয়া-তাছফিয়া পরিবহন’, ‘তাহমিদ পরিবহন’, ‘হাবিব পরিবহন’, ‘আরিফ-সাওদা পরিবহন’, ‘জেনি-সাদিয়া পরিবহন’গুলো নিশ্চিন্তে বীরদর্পে মহাসড়কে চলছে। 

হাইওয়ে থানার সামনে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান। পাশেই সিএনজি ধরতে দাঁড়িয়ে আছেন ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য। অবাক করা বিষয় হচ্ছে- পুলিশের সামনে দিয়েই অগণিত সিএনজি আপ-ডাউন করছে। মাঝে-মধ্যে কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে সিগন্যাল দিচ্ছেন। চালকরা বলেন, আমরা সিস্টেমে টেহা দেয়। তাই আমডারে ধরে না। আমডারে ধরলেও ছাড়ানোর লোকও রাস্তায় আছে।’ অথচ চান্দুরা এলাকা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ধরে এনে ৫-১০ হাজার টাকার মামলা দিচ্ছেন হাইওয়ে পুলিশ। সকাল ১১টার পর দেখা যায় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছে দালাল চক্রের সদস্যরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, কুট্টাপাড়া মোড় থেকে চান্দুরা মাধবপুর পর্যন্ত। আর বিশ্বরোড মোড় থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে সিএনজি (থ্রি হুইলার) চলাচলে দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। 

এরা মাঝেমধ্যে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির নামও বিক্রি করে। সিন্ডিকেটে রয়েছে জেলা-উপজেলার সাংবাদিক পরিচয়ের বেশ কয়েকজন, জেলা-উপজেলার একাধিক শ্রমিক নেতা ও হাইওয়ে পুলিশের একাধিক সোর্স। নিজেরা মালিক না হলেও এদের জিম্মায় মহাসড়কে দাপটে চলে আড়াই শতাধিক সিএনজি। চালক/মালিকদের প্রতি মাসে গুণতে হয় ২/৩ হাজার টাকা। এই পদ্ধতিকে তাদের ভাষায় বলা হয় ‘মান্তি’। এই মহাসড়কে শুধু সিএনজি থেকে মাসিক ‘মান্তির’ টাকা ওঠে ৭ লক্ষাধিক টাকা। হাইওয়ে পুলিশ, শেল্টার দাতা ও দালালদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয় সেই টাকা। আর তাই অভিযানের সময় মান্তির বাহিরে যে সিএনজিগুলো আছে সেইগুলো আটকে মামলা দেয়। মাসের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে মান্তির টাকা দিতে হয়। তাদের দেয়া চাবির রিঙ, গাড়িতে সাঁটানো স্টিকার দেখলে পুলিশ ছেড়ে দেয়। মোবাইল কোর্ট বা অভিযান থাকলে আমাদের মান্তির স্যারেরা আগেই জানিয়ে দেয়। এ বিষয়ে সরাইলের কুট্টাপাড়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাস সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রবাদ আছে- ‘কইলে মাইর খায়, না কইলে বাবা হারাম খায়।’ আমাদের অবস্থা হয়েছে এমন। মহাসড়ক থ্রি-হুইলার মুক্তকরণ হচ্ছে চলমান পক্রিয়া। আসলে কিছু লোককে আমরা সম্মান করে থাকি। যারা বিভিন্ন পরিচয়ে চালক/মালিক থেকে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে মাসিক মাসোহারা আদায় করে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status