বাংলারজমিন
অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে মাইকে ঘোষণা ৩ ড্রেজার ও বাল্কহেড জব্দ
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
১১ মে ২০২৫, রবিবার
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তিনটি ড্রেজার ও একটি বালুবোঝাই বাল্কহেড নৌকা জব্দ করেছে এলাকাবাসী। এ সময় দু’গ্রুপের হট্টগোলে তিনজন আহত হয়। আহতের মধ্যে সাইফুল ইসলাম নামে একজন গুরুতর বলে জানা গেছে। শুক্রবার উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ও ভৈরব সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক থেকে মেঘনার বালু মহাল থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে সরাইল থানার মেঘনার পাড় এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার ইজারাদার রিপন আলী। ইজারা পেয়ে নির্ধারিত সীমানায় বালু উত্তোলন না করে ভৈরব প্রান্তে গত তিনদিন ধরে রাতের আঁধারে লুন্দিয়া চরপাড়া এলাকায় বালু উত্তোলন করে। ৯ই মে শুক্রবার সকালে চরপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে মেঘনার মধ্য থেকে তিনটি ড্রেজার ও একটি বাল্কহেড আটক করে পাড়ে নিয়ে আসে। এ সময় ড্রেজারের পক্ষ নেন লুন্দিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সহিদ মিয়া। সকালে খবর পেয়ে আগানগর ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে এলাকাবাসীর পক্ষে ছুটে আসেন। এ সময় সহিদ মেম্বারের সঙ্গে আগানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে স্থানীয়দের মধ্যে হট্টগোল হলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), জালাল উদ্দিন (৪৫) ও সহিদ মিয়া (৪০) মেম্বার আহত হয়। এ ঘটনার পর আগানগর ও লুন্দিয়া গ্রামের দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এক সময় মেঘনায় ভৈরব প্রান্তে বড় চর ছিল তাই লুন্দিয়া চরপাড়া নাম হয়েছে। মেঘনা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে দিন দিন চর ছোট হয়ে গণবসতি গ্রামের দ্বারপ্রান্তে এসে ঠেকেছে। দু’দিন পরপর চরে ভাঙন দেখা দেয়। এ বিষয়ে লুন্দিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সহিদ মিয়া বলেন, আশুগঞ্জ এলাকার ইজারাদার রিপন মিয়া মেঘনার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রান্তে বালু উত্তোলন করছে। আমি রিপনের হয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি দেখাশুনা করছি। সকালে ভৈরব থেকে একটি মহল তিনটি ড্রেজার আটক করলে আমি বাধা দিই। এ সময় হট্টগোলে আমিসহ তিনজন আহত হই।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা আক্কাস মিয়া বলেন, গত দুইদিন আগে জেলা প্রশাসক এসে মেঘনার বালুমহাল ঘুরে দেখে গেছেন। মেঘনার ভৈরব প্রান্তে ছাইতনতলা থেকে মেন্দিপুর পর্যন্ত হয়ে টুকচানপুর ও সাদেকপুর এলাকায় বালু উত্তোলনের টেন্ডার পাই আমরা। আমরা এখনো কাজ শুরু করিনি। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল হঠাৎ দুইদিন যাবত মেঘনার ভৈরব প্রান্তে বালু উত্তোলন করছে। শুক্রবার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। বালু উত্তোলনের নির্ধারিত স্থানের বাইরে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। বিশেষ করে গ্রামবাসীর ক্ষতি করে বালু উত্তোলনের পক্ষে আমরা নই।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইজারাদার রিপন মিয়া বলেন, আমি সরাইল থানায় মেঘনার প্রান্তে বালু উত্তোলনের কাজ পেয়েছি। ভৈরবে একটি ঝামেলা হয়েছে বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। পরে একাধিক ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে ভৈরব থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু তালেব বলেন, সকালে বালু উত্তোলন নিয়ে লুন্দিয়া গ্রামে মারামারি হয়েছে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ও ভৈরব সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি ড্রেজার ও একটি বাল্কহেড নৌকা জব্দ করেছি। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।