বাংলারজমিন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে নিহত ৬
বাংলারজমিন ডেস্ক
(১৯ ঘন্টা আগে) ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ৮:০০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তিনজন, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুইজন ও কুলিয়ারচরে ১ জন রয়েছেন। রোববার বিকালে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে আকস্মিক বজ্রপাতে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুজন ও কুলিয়ারচরে ১ জনসহ বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার বিকালে ঝড় বৃষ্টির পূর্ব মুহূর্তে পৃথক স্থানে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহতরা হলেন, ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকার আফসর উদ্দিন মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৬০), শ্রীনগর ইউনুছ মিয়ার ছেলে ফয়সাল মিয়া (তৌহিদ) (২৮) ও কুলিয়ারচর উপজেলার হাজারী নগর এলাকার সফিক ইসলাম সফু মিয়ার ছেলে কবির মিয়া (২৫)। তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক ডা. ওম্মে হাবীবা জুঁই বলেন, তিনজনকে হাসপাতালে আনার পর মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত জেনে নিহতের স্বজনরা তাদের বাড়ি নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে নিহত ফারুক মিয়ার ভাতিজা খোকন মিয়া বলেন, বাড়ির পশ্চিম পাশে জমিতে কাজ করছিল আমার চাচা ফারুক মিয়া। আকাশ মেঘলা দেখে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বাড়িতে আসার মুহূর্তে বজ্রপাতে আহত হোন। এসময় স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমার চাচার পরিবার কৃষি নির্ভর। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
নিহত কবির মিয়ার ফুফাতো ভাই ডা. এমাদ সরকার বলেন, আমার ভাই বাড়ির পাশে মাঠ থেকে ধানের খড় আনতে গিয়েছিল। হঠাৎ সাড়ে তিনটায় বজ্রপাতে আহত হয়। এসময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন, কবির চলতি বছরে ভৈরব সরকারি হাজী আসমত কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সংসারে ছয় ভাই ও ১ বোন। ভাইবোনদের মধ্যে সে পঞ্চম। এ বিষয়ে ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব বলেন, ভৈরবে প্রচুর ঝড় বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়েছে। বজ্রপাতের সময় আমাকেও কাজে বাইরে থাকতে হয়েছে। বজ্রপাতে ভৈরব ও কুলিয়ারচরে তিনজনের মৃত্যু বিষয়টি জেনেছি। আমি পুলিশ পাঠিয়ে নিহতদের পরিবারের খোঁজ নিচ্ছি।
এদিকে নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বজ্রপাতে ৮ বছরের শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার তিনটি পৃথক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা নাসরিন। নিহতরা হলেন- চাতলপাড় ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের জাকিয়া আক্তার (৮), গোকর্ণ ইউনিয়নের গোকর্ণ গ্রামের শামসুল হুদা (৭০) এবং ধান কাটতে আসা মৌসুমি শ্রমিক রাজ্জাক মিয়া (৪০)। ভলাকুট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য তারু মিয়া জানান, জাকিয়া আক্তার নামের শিশুটি চাচার বাড়ি বেড়াতে এসেছিল। বিকেলে চাচার সঙ্গে মাঠে ধান শুকানো হয় কীভাবে- তা দেখতে যায়। সেখানে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় জাকিয়া। এ সময় আহত হয় আরও কয়েকজন শিশু।
গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন বলেন, শামসুল হুদা মাঠে গিয়েছিলেন ধানি জমি দেখতে। বিকেলে বজ্রপাতের পর তার মরদেহ মাঠে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন।
স্থানীয়রা জানায়, সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামের রাজ্জাক মিয়া মৌসুমি কৃষিশ্রমিক। তিনি টেকানগর এলাকায় হারুন মিয়ার জমিতে ধান কাটতে এসেছিলেন। বজ্রপাতে মাঠেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ভলাকুট ইউনিয়নের হামিদা বেগম (৫০) নামে এক নারী ধান শুকাতে গিয়ে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন। তার কণ্ঠনালী পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তারা।
নাসিরনগর ইউএনও শাহিনা নাসরিন বলেন, ‘বজ্রপাতে একদিনে তিনজনের মৃত্যুর খবর খুবই মর্মান্তিক। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনগণকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’