বাংলারজমিন
শ্রীমঙ্গলে ডে-কেয়ার সেন্টারে নানা অনিয়ম
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে নিম্নবিত্ত কর্মজীবী মায়েদের সন্তান রাখার জন্য সারা দেশে ৪৪টি জেলা শহরে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে। এরমধ্যে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি রয়েছে। গত সোমবার সেখানে সরজমিন সাতজন শিশুর উপস্থিতি পাওয়া গেলেও তালিকায় ছিল ২৩ জন। এদিকে ঠিকাদার না পাওয়ায় সেন্টারটিতে খাবার সরবরাহ করেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাহিদা আকতার নিজেই। ব্যক্তি মালিকানাধীন তিনতলা একটি ভবনের নিচতলায় শ্রীমঙ্গল ডে-কেয়ার সেন্টার দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে। ভবনটিতে ছয়টি কক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে একটি কক্ষে প্রধান কর্মকর্তার অফিস। একটি রান্নাঘর, দুটি কক্ষে বিছানাসহ আসবাবপত্র, বাকি দুটি কক্ষ খেলাধুলার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ৮০ জন শিশু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। একজন শিশুর ভর্তিতে ১০০ টাকা ও মাসিক হারে আরও ১০০ টাকা দিতে হয়।
এর আগে গত রোববার বিকাল সাড়ে ৩টায় সেখানে সরজমিন পরিদর্শনে গেলে কোনো শিশুকে পাওয়া যায়নি। যদিও বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শিশুদের এখানে থাকার কথা। আগে বন্ধ করার ফলে অভিভাবকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পরদিন সোমবার দুপুর ২টার দিকে ডে-কেয়ার সেন্টার পরিদর্শনে গেলে সাতজন শিশু পাওয়া যায়। তবে তাদের রেজিস্টার্ড খাতায় ২৩ জনের একটি তালিকা রয়েছে। জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই ২৩ জন শিশুর তালিকা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু এ সেন্টারে প্রতিদিন সাত থেকে ৯ জন শিশু উপস্থিত থাকে। কোনো দিন ৫০ জন শিশুর উপস্থিতি দেখানো হয়েছে কাগজে-কলমে। গত সোমবার সকালে শিশুদের সকালের নাস্তা হিসেবে সুজি এবং দুধ বরাদ্দ থাকলেও সেখানে শুধু সুজি পরিবেশন করা হয়। দুপুরে ডিম-ডাল, সবজি ও আলু বরাদ্দ থাকলেও সেখানে শুধু ডিম ও সবজি দেয়া হয়। বিকালে ফল বরাদ্দ থাকলেও সেটা দেয়া হয় না। অনুসন্ধানে ডে-কেয়ার সেন্টারের জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাহিদা আকতারের নানা অনিয়মের চিত্র ফুটে উঠেছে।
তালিকার যেখানে শিশুর ছবি ও পিতা-মাতার নাম-ঠিকানা থাকে, সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। জানা যায়, ডে-কেয়ার সেন্টারে শিশুদের লেখাপড়া করানোর জন্য কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে চার থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুরা প্রাথমিক অক্ষর জ্ঞানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে মৌলভীবাজার জেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপ-পরিচালক ও অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত সাহিদা আকতার বলেন, নিজেই খাবার সাপ্লাই দেই। লোকবল সংকট। একাই পুরো জেলা দেখতে হয়। ২০১৫ সালে এই জেলায় যোগদান করেছিলাম। এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ডে-কেয়ার অফিসার না থাকায় ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৮ সাল থেকে নিজেই সবকিছু দেখতে হচ্ছে। গত ২৬শে জুলাই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেনি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেই বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য কিনে সাপ্লাই দেই। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ঊর্মি বিনতে সালাম বলেন, ডে-কেয়ার সেন্টার চলমান আছে, এতটুকু জানি। যেসব অনিয়মের অভিযোগ শুনলাম, সে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।