অনলাইন
ওসির অডিও ফাঁস
নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে চারঘাটে এনেছেন
অনলাইন ডেস্ক
(৬ দিন আগে) ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৩:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০১ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের এক অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। যেখানে তিনি এক মাদক ব্যবসায়ীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন। ওই অডিওতে ওসি বলেন, নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) আমাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাট থানায় নিয়ে এসেছেন। এছাড়াও ৫ লাখ টাকায় মাদক ব্যবসার অনুমতি দেয়া ও দুই লাখ টাকার বিনিময়ে জেলা ডিবির দুই কর্মকর্তাকে বদলি করে দেবেন বলেও জানান। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজশাহীতে। অবশ্য ওসি যে নারীর সঙ্গে এসব আলোচনা করছেন সেই নারীই শনিবার দুপুরে ওসি মাহবুব, ডিবির পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার দাবি, ডিবি পুলিশ তার স্বামীকে সাজানো মাদক মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করেছেন।
ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) আমাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাট থানায় নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া আর কারও কথা শুনি না। চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একজন পরিদর্শকের সমালোচনা করেন ওসি। তিনি বলেন, আমাকে দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির আতিককে বদলি করে দেব।
এর পর ওসি বলেন, এখনো তোমার গায়ে আমি আঁচড় দিইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া টাকার আর কোনো উৎস নেই।
ওসি আরও বলেন, মুক্তার বিরুদ্ধে (চারঘাটের মাদকসম্রাট ও নারীর প্রতিপক্ষ) এখন অ্যাকশন নিতে পারবো না, শুভর বিরুদ্ধেও (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবো না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব আমি। তোমরা এলাকার বাইরে থেকে মাদক ব্যবসা করবে। কোনো সমস্যা নেই।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার আতিকের সমালোচনা করে ওসি মাহবুবকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারবো না। সব কথা ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও আরও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।
ওসি মাহবুবকে আরও বলতে শোনা যায়, ৫ লাখ আর ২ লাখ মিলে মোট ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর মন্ত্রীকে বলে ওই দুজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ই সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসি থানা কম্পাউন্ডে তার শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামে ওই নারীর কাছে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। শনিবার সকালে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করার পর অভিযোগকারী সাহারা বেগম ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
জানা গেছে, গৃহবধূ সাহারা বেগম রাজশাহীর চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কালু কিছু দিন ধরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।
এ বিষয়ে সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করেন। চারঘাট এলাকায় তার সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক উদ্ধার করেছে র্যাব-পুলিশ। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি সদস্যপদে ভোট করেন। এর পর থেকে এলাকার মুক্তা, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করায় তারা। ডিবিকে তারা ম্যানেজ করে।
সাহারা আরও বলেন, চারঘাটের চামটা গ্রামের মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একইসঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানায় গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, আমার কাছেও অডিওটা এসেছে। কিন্তু কীভাবে হয়েছে আমি জানি না। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।
পাঠকের মতামত
সরিষার ভিতরে ভূতের বসবাস সেই ভূত তাড়াবে কেমনে ???
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মুখে অনেক নীতিবাক্য শোনা যায়।এখন তিনি কি বলবেন!!
এইটা হলো বাংলাদেশের ডিজিটাল পুলিশ। হায়রে বাংলা জাতি, কবে যে এই সমস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে জাতি মুক্ত হবে।
সত্যি ই মাছের রাজা ইলিশ। আর দেশের রাজা পুলিশ ! বর্তমান ভোট ডাকাত লুটেরা সরকার, নিজেদের অনৈতিক রাস্ট্র ক্ষমতা কে দির্ঘস্হায়ী করতেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্র কে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিনত করেছে! সাধারণ জনগণ রাষ্ট্র যন্ত্রের কাছে অসহায়!
এটাই হল উন্নত, ডিজিটাল দেশ। অধিকাংশ থানার এই অবস্থা কি না তা উর্ধতন মহলের খতিয়ে দেখা উচিৎ। অবশ্য.........