অনলাইন
এমরানকে মার্কিন দূতাবাস ডেকে নিয়েছে, জায়গা দেয়া ঠিক হয়নি: বার সভাপতি
স্টাফ রিপোর্টার
(১ বছর আগে) ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৮:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৩ অপরাহ্ন
সদ্য বরখাস্তকৃত ডিএজি এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে মার্কিন দূতাবাসে জায়গা দেয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বারের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) সাব-সিকোয়েন্ডলি গেছেন। আমাদের কথা হলো আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে তাকে জায়গা দেয়াটা ঠিক হয়নি। কারণটা হলো- আপনি-আমি এদেশের নাগরিক। আপনি-আমরা যেতে পারবো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া? কেন তাকে ডেকে নেয়া হলো। কোন উদ্দেশ্যে তাকে ডেকে নিয়েছে? পরিবারসহ, বাচ্চা-কাচ্চাসহ। কেন?
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি বলেন, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে স্ব-উদ্যোগে তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) গেছেন। তিনি তার ইনটেনশনটি ফুলফিল করার জন্যই গেছেন। কারও প্রেশারে বা কারও কারণে যাননি। কোনো ভয়-ভীতিতে তিনি এ কাজ করেননি, সেটা তিনি নিজেই বলেছেন। তবে মার্কিন দূতাবাসে তাকে জায়গা দেয়াটা ঠিক হয়নি। তার পরিবার, বাচ্চাসহ সেখানে গেছে কেন? এটি একেবারে পূর্বপরিকল্পিত ছিল, তা প্রমাণ হয়েছে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, যেসব শ্রমিক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, ওই শ্রমিকগুলো একটা কোম্পানির। আর সেই কোম্পানির মালিক কে? গ্রামীণ টেলিকমের মালিক কে? শ্রমিকের মালিক হলেন ড. ইউনূস। আর শ্রমিকরা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এখানে সরকার বা কারও কিছু করার নেই। আইএলও’র নিয়ম অনুযায়ী তারা মামলা করেছেন। কাজেই এখানে বিদেশিরা যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে ইনফরমেশন গ্যাপ আছে, সেই কারণে তারা এই বিবৃতি দিয়েছেন। এ ছাড়া পারপাসলি দেশের সার্বভৌমত্ব বিচারব্যবস্থা নষ্ট করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, বরখাস্ত ডিএজি এমরান যে বক্তব্য দিয়েছেন- তা পুরোপরি আইনের লঙ্ঘন। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে থেকে এ ধরনের বিবৃতি তিনি দিতে পারেন না। উনি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাদের (সাংবাদিকদের) ডেকে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তার ইনটেনশনটি খারাপ ছিল। বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য এটা করেছেন। ইতিমধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি (এমরান আহমদ ভূঁইয়া) বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্যই না। তাই তাকে নতুন করে বরখাস্ত করার প্রশ্নই আসে না।
আজ দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবিতে বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেয়া খোলা চিঠির প্রতিবাদে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ৫১০ জন আইনজীবী পাল্টা বিবিৃতি দিয়েছেন। বিবৃতি দাতাদের মধ্যে বেশির ভাগ ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল (এএজি) এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক এডভোকেট নূরে আলম উজ্জ্বল, কোষাধ্যক্ষ এম মাসুদ আলম চৌধুরী, বারের সাবেক সম্পাদক এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ড. মোহাম্মদ জগলুল কবির, ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক প্রমুখ।
লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের লেখা খোলা চিঠি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে চলমান মামলাসমূহের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়, যা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে আমরা বিবেচনা করছি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার উপর এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
আইনের শাসন ও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আইনের চোখে সবাই সমান। যেকোনো সভ্য দেশে কেউ অপরাধ করলে সেদেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে- এটাই স্বতঃসিদ্ধ। আমরা ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি যে, তার প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী শ্রমিকরাই দেশের প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। উক্ত খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিদেশি নাগরিকগণ ভুক্তভোগী শ্রমিকদের স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে অন্যায়ভাবে ড. ইউনূসের স্বার্থ রক্ষায় বিবৃতি প্রদান করেছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।
আমরা যতদূর জেনেছি, জনাব ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার ২/১টি ছাড়া সবগুলো মামলাই তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা দায়ের করেছেন। আমরা আদলত সূত্রে জানতে পেরেছি, একজন কারখানা পরিদর্শক ড. ইউনূস ও অন্যদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ৪ (৭) (৮) লঙ্ঘনের কারণে শ্রম আদালত, ঢাকায় একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও অপর আসামিরা হাইকোর্ট বিভাগে দু’টি ফৌজদারি বিবিধ মামলা করলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ মামলা দু’টি খারিজ করেন। হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে জনাব ইউনূস আপিল বিভাগে লিভ পিটিশন দায়ের করলে মহামান্য আপিল বিভাগ উক্ত পিটিশনও খারিজ করেন এবং হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের আলোকে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকার আদেশের পর বিদেশি সুশীল নাগরিকেরা ড. ইউনূসের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করে অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছেন। উক্ত অনুরোধ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের অসম্মান প্রদর্শন করারও শামিল, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বা সরকার কর্তৃক কোনো মামলা প্রত্যাহার, স্থগিত বা বিচার প্রক্রিয়ার হস্তক্ষেপ করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া, বাংলাদেশ আইএলও এবং জাতিসংঘের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংক্রান্ত দলিলের অনুস্বাক্ষরকারী হিসেবে এ সংক্রান্ত সকল অনুশাসন সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্ব দিয়ে অনুসরণ করে।
উল্লেখ্য, উক্ত চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে তা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমাননাকর- যা সচেতন ও বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমাদের ব্যথিত করেছে। আমাদের প্রত্যাশা সম্মানিত বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক জনাব ইউনূসের পক্ষে তাদের প্রদত্ত বিবৃতি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করা থেকে নিজেদের নিবৃত রাখবেন