বাংলারজমিন
সেতু বন্ধের সুযোগে অবৈধ ট্রলার বাণিজ্য, রাতে ভাড়া দ্বিগুণ
গোলজার হোসেন, মুন্সীগঞ্জ থেকে
৬ জুন ২০২৩, মঙ্গলবারমুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী-সিরাজদিখান উপজেলার কুণ্ডেরবাজার বেইলি সেতুর সংস্কারের জন্য ১৬ই মে থেকে যানবাহনসহ লোকজন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে ৪-৫ জনের একটি দল এ নৌপথে অবৈধ ট্রলার বাণিজ্যে নেমেছে। এসব ট্রলারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার ও আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। গত ১৯ দিন ধরে কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী দলটি প্রশাসনের নাকের ডগায় কাজটি করে যাচ্ছে। ২৩ বছর আগে ৯৮ মিটার দীর্ঘ বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে সরজমিন দেখা যায়, দুই পাড়ে প্রায় শতাধিক জনসাধারণ ও মোটরসাইকেল অপেক্ষা করছে। ট্রলার ঘাটে ঢোকার আগেই দুই পাড়ে কয়েকজন ব্যক্তি চেয়ারে বসে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। উপরে কুণ্ডেরবাজার সেতুর সংস্কার কাজ চলছে। ট্রলার আসামাত্র মুহূর্তে যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ সময় যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না রেখেই সংস্কার কাজ শুরু করলো। প্রশাসন থেকে যাত্রীদের নদী পারাপারের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখলো না। এ সুযোগে খালের দুই পাড়ের প্রভাবশালীরা অবৈধ সিন্ডিকেট করে ট্রলার ব্যবসা শুরু করেছে। বেশি টাকার লোভে ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী তুলছেন, আবার যাত্রী কম থাকলে ট্রলার ছাড়তে চায় না, তখন আরও বেশি টাকায় ট্রলার রিজার্ভ করে খাল পাড়ি দিতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও যাত্রীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ রোডে (সেতু) দিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী, সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার যাতায়াতের জন্য রোডটি ব্যবহার হয়। প্রতিদিন ট্রলারে করে ১১-১২ হাজার যাত্রী এবং দেড় থেকে দুইশ’ মোটরসাইকেল পারাপার করছেন তারা। টঙ্গিবাড়ী অংশে বেতকা ইউপি চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামানের লোক হিসেবে পরিচিত হান্নান মোড়ল ও তার এক হেলপার এবং সিরাজদিখান অংশে মো. খোকন ও সুমন নামের মাঝিরা দু’টি ট্রলার চালাচ্ছেন। প্রথম এক সপ্তাহ যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ টাকা, মোটরসাইকেলপ্রতি ৩০ টাকা করে নিলেও এখন কোনো যাত্রীর সঙ্গে বাজার সদাই থাকলে ১০ টাকা এবং মোটরসাইকেলের জন্য ৪০-৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। রাতের সময় নেয়া হচ্ছে দিনের দ্বিগুণ ভাড়া। এতে প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
ট্রলার চালানোর বিষয়ে হান্নান মোড়ল বলেন, আমাদের বেতকা ইউপি চেয়ারম্যান থানা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। অনুমতির প্রেক্ষিতে আমরা ট্রলার চালাচ্ছি। অনুমতি লিখিত না মৌখিক নিয়েছেন জানতে চাইলে হান্নান বলেন, এটি ইউপি চেয়ারম্যান জানেন। অনুমতির বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান শিকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজীব খান বলেন, এটি আমাদের দেয়ার এখতিয়ারও নেই। যারা চালাচ্ছেন তারা অবৈধভাবেই চালাচ্ছেন। সিরাজদিখান উপজেলার মালাখানগর এলাকার মমতাজ বেগম বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে আমার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বেশ কয়েকদিন মুন্সীগঞ্জে যাওয়ার জন্য ট্রলারে উঠেছিলাম। সবসময় ট্রলার ভর্তি করে যাত্রী তোলা হয়। কখনো কখনো পা ফেলার জায়গাও থাকে না। ঢেউ আর স্রোতে ট্রলারের ডুবিডুবি অবস্থা হয়ে যায়। নারী ও শিশুরা প্রায় ভয়ে কান্নাকাটি করে। প্রতিদিন এভাবে ট্রলার চলছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শরিফুল আলম তানভীর জানান, ট্রলার চলাচলের বিষয়ে কেউ আমাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি নেয়নি। যারা অনুমতি ছাড়া ট্রলার চালাচ্ছেন তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা বলেন, সেতুর সংস্কার কাজ ৮০ ভাগের বেশি শেষ হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই সংস্কার শেষ হবে। সংস্কার শেষে পরীক্ষামূলকভাবে যানবাহন চলাচল করবে। সফল হলে তারপর দিন থেকেই সবার জন্য খুলে দেয়া হবে।
গত ১১ই মে মুন্সীগঞ্জ সওজ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কুণ্ডেরবাজার বেইলি সেতুটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত শুরু করার কথা জানায়। কাজটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদে সম্পন্ন করতে ১৬ই মে থেকে আগামী ১৬ই জুন পর্যন্ত এক মাস সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত যানবাহনগুলোকে বিকল্প সড়ক হিসেবে ফতুল্লা-মুন্সীগঞ্জ ও লৌহজং-মাওয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করার জন্য অনুরোধ করে সওজ। তবে ১৭ই মে থেকে কাজের সুবিধার জন্য যান চলাচলের পাশাপাশি পায়ে চলাচলের পথ বন্ধ রাখে তারা।