বাংলারজমিন
সংস্কারের ১৪ মাসেই সড়কে বেহাল অবস্থা
ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সুপারিশ
আমিরজাদা চৌধুরী, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
১ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
সংস্কারের মাত্র ১৪ মাস না যেতেই বেহাল হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলাধীন হরষপুর-মির্জাপুর আঞ্চলিক সড়ক। বিজয়নগর উপজেলা সদর থেকে হরষপুর বাজার পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হয় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর অধীন। এলজিইডি’র বিজয়নগর উপজেলা কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই সড়কটি সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। চার কোটি ছয় লাখ টাকায় কাজটি পায় মেসার্স রাঙ্গামাটি-রিপন-পিন্টু কনস্ট্রাকশন নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর মার্চ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিন্টু কনস্ট্রাকশন সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করে। তারা পরবর্তী ছয় মাসে সড়কটির মাত্র আড়াই কিলোমিটার অংশ সংস্কার? করতে থাকাবস্থায় স্থানীয়রা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিম্ন্নমানের কাজ করার অভিযোগ দেয়। এরপর এলজিইডি’র পক্ষ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আতাউর রহমান পিন্টুকে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তিনি কর্ণপাত না করায় কাজের চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করে এলজিইডি। সোমবার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
অনেক স্থান থেকে পিচ-খোয়া উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। দু’-এক জায়গায় পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা গর্তে আটকে যেতেও দেখা গেছে। ওই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার চালক সোহাগ মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা তো এখন অল্প গতিতে হলেও চলতে পারছি। কিন্তু সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি হলেই গাড়ি চলাচল দায় হয়ে পড়ে। স্থানীয় পাঁচগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইকের চালক সবুজ মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন আগে হওয়া বৃষ্টিতে সড়কটির বেহাল অবস্থা হয়েছিল। সে সময় একটি ইজিবাইক উল্টে গিয়ে কয়েকজন যাত্রী আহত হন। জানা যায়, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ও হরষপুর ইউনিয়নের লোকজনসহ পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংস্কার কাজ শুরুর আগে রাস্তায় থাকা পুরাতন ইটের খোয়া ব্যবহারের পর উপর দিয়ে চার ইঞ্চি পরিমাণ নতুন ইটের খোয়া বিছানোর কথা শিডিউলে উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদারেরা তা করেননি। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি সড়কটির সংস্কার কাজ অনেক বিলম্বিত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি’র বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী আশিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ্তুঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজ এবং দীর্ঘসূত্রিতার যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তা প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সঙ্গে কাজের চুক্তি বাতিলের সুপারিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিন্টু কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমান পিন্টু বলেন, এই সড়কে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে লোড ক্যাপাসিটি কেউ মানে না। এই সড়ক দিয়ে বড়জোর পাঁচ টনের গাড়ি যাওয়ার সক্ষমতা থাকলেও এটা দিয়ে নিয়মিত অনেক বেশি পরিমাণের গাড়ি যাতায়াত করে। সড়কের পাশে গড়ে ওঠা তিনটি ইটের ভাটায় ৩০ টন পরিমাণের কয়লার গাড়ি নিয়মিত যাতায়াত করে। এতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবাই শুধু ঠিকাদারকে দোষ দেয়।’