খেলা
শামীমের ফিফটিতে মান রক্ষা
স্পোর্টস রিপোর্টার
১ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার
‘যদি এক ধাঁচে আমরা খেলতে পারি ভবিষ্যতে কাজে দেবে, এটাই আমরা ধারণ করতে চাচ্ছি। দলগতভাবে আমরা যে ব্যাপারটা সবার মধ্যে দিতে চাচ্ছি, তা হলো আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা’- আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টির আগে এমনটাই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার রনি তালুকদার। প্রথম দুই ম্যাচে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্কোর বোর্ডে জমা পড়েছিল ২’শর বেশি রান। কিন্তু এমন ক্রিকেট খেললে ঝুঁকিও থাকে। সেটির একটি চিত্র দেখতে পেলো টাইগাররা। গতকাল সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ পড়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে। টসে জিতে মারমুখী ব্যাট করতে গিয়ে বাজে শটে একের পর উইকেট হারাতে থাকেন টাইগাররা। ৯.৩ ওভারে স্কোর বোর্ডে যখন ৬১ রান তখন বাংলাদেশ হারিয়েছে ৭ উইকেট! সেখান থেকে দলের মান রক্ষা করেন তরুণ ব্যাটার শামীম হোসেন পাটোয়ারি। তার ক্যারিয়ার সেরা লড়াকু হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে আইরিশদের বিপক্ষে টেনেটুনে ১২০ পার করে বাংলাদেশ। চার বল বাকি রেখে ১২৪ রানে অলআউট হয় সাকিবের দল।
দ্বিতীয় ম্যাচে ১৮ বলে ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন ওপেনার লিটন দাস। রেকর্ড গড়া ব্যাটিংয়ের পর গতকাল পুরোপুরি ব্যর্থ তিনি। ইনিংসের প্রথম বলে চার হাঁকিয়ে শুরু করলেও সেটা ধরে রাখতে পারেননি। সাজঘরে ফেরেন দ্বিতীয় ওভারেই মাত্র ৫ রান করে। মার্ক অ্যাডায়ারের করা প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে ছিল, খাটো লেন্থের বল ডিপ পয়েন্টের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা ডকরেলের হাতে ধরা পড়েন লিটন। তার বিদায়ের পর উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি শান্তও। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে শেষ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে ছিল, সেখানে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি তিনি। তাতে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে তিনি দলের বিপদ বাড়ান। ৮ বলে ৪ রান করেন তিনি। তখন আশা দলের আরেক ওপেনার রনি। প্রথম ম্যাচে ফিফটি আর পরের ম্যাচে খেলেছেন ৪৬ রানের ইনিংস। কিন্তু তিনি এই ম্যাচে ব্যর্থতার পথেই হাঁটলেন। শুরুটা ভালো ছিল এই ওপেনারের। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না। চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১৪ রান। তার বিদায়ে ২৪ রানের মধ্যেই টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটারকে হারায় বাংলাদেশ।
এদিন ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পুল করতে গিয়ে হোয়াইটের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন অধিনায়ক। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬ রান। তার বিদায়ে পাওয়ার প্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
সাকিবের পর দলের সবশেষ স্বীকৃত ব্যাটিং জুটি ছিল তাওহিদ হৃদয় এবং শামীম। কিন্তু ইনফর্ম হৃদয় এদিন দলের হাল ধরতে পারেননি, বরং বিপদ আরও বাড়িয়েছেন। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল সোজা উপরে উঠে যায় আর সহজ ক্যাচ লুফে নেন হ্যারি ট্যাক্টর। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১২ রান। হৃদয়ের বিদায়ে দলীয় অর্ধশতক স্পর্শ করার আগেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এমন বিপর্যয়ের মুখে উইকেটে আসেন রিশাদ হোসেন। অভিষিক্ত এই স্পিনারের আসল কাজটা বল হাতে তবুও এদিন দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও লড়াই করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় বলেই রানের দেখা পেয়েছেন তিনি। সেটাও আবার বোলারের মাথার ওপর দিয়ে স্টেট ড্রাইভে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে। এমন দুর্দান্ত শুরুর পরও নিজের অভিষেক ইনিংসটা খুব বেশি লম্বা করতে পারেননি। দশম ওভারের প্রথম বলে হ্যাম্পেয়ার্সের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে নামের পাশে যোগ করেছেন ৮ রান। রিশাদের এক বল পরই সাজঘরে ফিরেছেন তাসকিন। বিপর্যয়ের মুখে অনেকবারই তার ব্যাটে লড়াই করার পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আজ সেই আশার গুড়েবালি দিয়ে ডাক খেয়ে ফিরেছেন তাসকিন। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই ৭ ব্যাটারকে হারিয়ে অলআউটের শঙ্কায় পড়ে স্বাগতিকরা। তবে সেই শঙ্কার মেঘ কেটেছে শামীমের ব্যাটে। নাসুমকে সঙ্গে নিয়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। এই দুইজনের জুটিতে কিছুটা হলেও বিপর্যয় সামাল দেয় বাংলাদেশ। ১৭ বলে ১৩ রান করে নাসুম বিদায় নিলে ভাঙে ৩৩ রানের জুটি।
ব্যাটারদের এই আসা-যাওয়ার মাঝেও এক প্রান্ত আগলে ধরে লড়াই করেছেন শামীম। তার দৃঢ়তায় ১৬ ওভারেই দলীয় ১০০ রানের সীমানা পার করেন। এরপর ১৯তম ওভারে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ৪০ বলে। তবে এরপর আর বেশি দূরে যেতে পারেননি তিনি। তার বিদায়ে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।