শেষের পাতা
আহলান সাহলান মাহে রমজান
রোজা ভঙ্গের কারণ
আতিকুর রহমান নগরী
২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার
আজ দ্বিতীয় রমজান। মহান আল্লাহ্তায়ালা মুসলমানদের হিজবুল্লাহ তথা আল্লাহ্র বাহিনী বলে ঘোষণা করেছেন। দুনিয়ার শাসকরা যেমন তাদের বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়, মহান আলাহ্ তায়ালাও তেমনি করে মুসলমানদের চারিত্রিক, নৈতিক ও মানবিক গুণের বিকাশের জন্য মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। যেন মুসলমানরা সব লোভ, মোহ, অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে থেকে নিজেদের সব রকমের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করতে পারে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, মানবতার উপকারের জন্যই তোমাদের বাছাই করা হয়েছে।’ (আল- কোরআন) অপ্রাপ্ত বয়স্ক, রোগী, মুসাফির, পাগল, হায়েজ নেফাস সম্পন্ন মহিলা ও ইসলামী পরিভাষায় অক্ষম ব্যতীত প্রত্যেক নর-নারীর উপর রোজা পালন করা ফরজ।
রোজার নিয়ত: মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট। তবে ‘নাওয়াইতু বি সাউমি গাদিম মিন শাহরি রামাজান’ মুখে উচ্চারণ করার মাধ্যমে নিয়ত করা উত্তম। -বেহেশতি জেওর: ৩/৩
অথবা এরূপ করবে, ‘নাওয়াইতুআন আসুমা গাদাম মিন শাহ্রি রামাজান।’ অর্থাৎ ‘রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি। ’ এক কথায়, আরবিতে হোক বা বাংলায় হোক কিংবা নিজ নিজ ভাষায় হোক- আমি রোজা রাখছি এটা স্পষ্ট করতে হবে, এটাই রোজার নিয়ত।
সেহ্রি: সেহ্রি খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন যে, ‘তোমরা সেহ্রি খাও, কারণ এর মধ্যে আল্লাহ্তায়ালার বরকত নিহিত আছে।’ রাতের শেষভাগেই সেহ্রি খাওয়া উত্তম। হযরত যায়েদ ইব্নে সাবিত (রা.) নবী করিম (সা.)-এর যুগের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যে, ‘আমরা মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সেহ্রি খেয়েছি। তারপর নামাজে (ফজরের জন্য) দাঁড়িয়েছি। জিজ্ঞাসা করা হলো উভয়ের (সেহ্রি ও নামাজের) সময়ের মধ্যে কতটুকু ব্যবধান ছিল? হযরত যায়েদ রা: বললেন পঞ্চাশটি আয়াত তিলাওয়াত করতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু।’
ইফতার: সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করা উত্তম। মহানবী (সা.) বলেন- মানুষ ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেবে।
ইফতারের দোয়া: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়াআলা রিযকিকা আফতারতু। অর্থাৎ হে আল্লাহ্ আমি তোমার নামে রোজা রাখছি এবং তোমার রিযিক দ্বারাই ইফতার করছি। (আবু দাউদ-২৩৫৮)
ইফতার করানোর ফযিলত: মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে উক্ত রোজাদারের সমপরিমাণ সোয়াব পাবে।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ: রোজা রেখে শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে খানাপিনা ও স্ত্রী সম্ভোগ করার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। আর এতে ক্বাজা ও কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব। অনিচ্ছাকৃত ভাবে অজু, গোসলে পানি বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য গলানালীতে চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। এতে শুধু কাজা ওয়াজিব নাকের ছিদ্র পথে কোনো কিছু পেটে গেলে দাঁতের মধ্যকার কোনো খাদ্য বুট পরিমাণ পেটে গেলে মুখভরা বমি মুখের ভিতরে এসে আবার পেটে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। এতে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। নিন্দ্রা অবস্থায় কেউ কিছু খাইয়ে দিলে, পেটে বা মাথার ক্ষতস্থানে লাগানো ওষুধ পেটে বা মস্তিস্কে ঢুকলে।
যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়: অনর্থক কোনোকিছু চিবানো, শরীয়ত সম্মত কারণ (যেমন বদরাগী স্বামী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তরকারিতে লবণ হয়েছে কিনা দেখা) ব্যতীত কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করা গরম ও পিপাসা লাঘব করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি পানি ব্যবহার করা, গিবত বা পরনিন্দা করা, মিথ্যাচার করা, অশ্লীল গল্পে লিপ্ত থাকা, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদিতে লিপ্ত হওয়া, ব্রাশ, টুথপেস্ট, পাউডার, কয়লা বা ছাই জাতীয় মাজন দ্বারা দিনের বেলায় দাত পরিষ্কার করা।
রোজার ফিদইয়া: রোজার পরিবর্তে যে সদকা প্রদান করা হয় তাকে ফিদইয়া বলে। শায়খে ফানি তথা অতিবৃদ্ধ যার রোজা রাখার কোনো শক্তি নেই, বা এত দুর্বল হয়ে গেছেন যে, তাঁর আর ভালো হওয়ার আশা নেই। এরূপ লোকদের ফিদইয়া আদায় করতে হবে।
ফিদইয়ার পরিমাণ: একটি রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে দু’বেলা পেট ভরে খানা খাওয়াতে হবে। না হয় একটি রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে সদকায়ে ফিতর পরিমাণ গম, আটা বা শুকনো আঙ্গুর অর্ধ ‘ছা’ অর্থাৎ (পৌনে ২ সের বা ১ কেজি ৭০৬ গ্রাম) আর খোরমা, যব বা তার আটা এক ‘ছা’ (অর্থাৎ ৩ কেজি ৪১২ গ্রাম) পৌনে ২ সের গম অথবা সমপরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে। ফিদইয়া আদায় করা ওয়াজিব।