ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

কর্মীদের বেতন আটকিয়ে নারীদের ধর্ষণ করতো খায়ের

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ, সদর দক্ষিণ (কুমিল্লা) থেকে
২৪ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

আবুল খায়ের। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করেন চিকিৎসাখাতে। কাগজে-কলমে কোনো চিকিৎসা বিদ্যা না থাকলেও দীর্ঘদিনের ফার্মেসি দোকান দিয়ে রাতারাতি করে ফেলেন কুমিল্লার পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়নের সুয়াগাজী বাজারে সুয়াগাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তার প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মীদের বেতন মাসের পর মাস আটকিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে। খায়ের সুয়াগাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসব অপকর্ম চালান তিনি। তারই এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে তার প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী অথবা আশেপাশে ব্যবসায়ী প্রতিবাদ করলে হত্যার হুমকি আসতে থাকে অজ্ঞাত স্থান থেকে। গত সোমবার আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর ও শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ করেন তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক এক নারী কর্মী। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বুধবার সকালে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, খায়ের নিজে ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছেন শতাধিক নারী রোগী। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোথায় কোনো ডাক্তার নেই।

বিজ্ঞাপন
দুই-একজন আয়া ও অফিস সহকারী (নারী) কর্মীরাই প্রেসক্রিপশন করছেন রোগীদের। রোগীদের দিচ্ছেন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আবার এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন আবুল খায়ের নিজে। প্রেসক্রিপশনে স্বাক্ষরটির ব্যাপারে তিনি স্বীকারও করেন। প্রেসক্রিপশন করা এই  ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক নারী কর্মী বলেন, অনেকদিন ধরে এখানে  ডাক্তার নেই। রোগী চাপ থাকায় আমি আর খায়ের স্যার রোগী দেখছি। তবে রোজা শুরু হলে আমাদের এখানে ডাক্তার আসবে। এদিকে খায়েরের বিরুদ্ধে একাধিক নারী রোগী ও তার কর্মীরা অভিযোগ করেন, তিনি ডাক্তার সেজে নিজেই প্রতিনিয়ত রোগী দেখেন। এতে অনেক নারী রোগী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এতে অনেক নারী রোগীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে চেকাপ করেন বলেও অনেক রোগী অভিযোগ করেন। চৌদ্দগ্রাম উজেলার মিয়াবাজার এলাকার ছদ্মনাম ফাহিমা আক্তার (২৩) বলেন, ওনার প্রতিষ্ঠানে আমি আট মাস চাকরি করেছি। ওনি সবসময় আমাকে বেতন চাইলে তার কক্ষে নিয়ে শরীরে হাত দিতো এবং আমার কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলতো। এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে মেরে জঙ্গলে ফেলে দেয়ার ভয় দেখাতো। আমি কয়েক মাস আগে ভয়ে ওই হাসপাতাল থেকে চাকরি ছেড়ে লুকিয়ে চলে আসছি। অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আবুল খায়ের বলেন, আমার নামে যত অভিযোগ তার কোনো প্রমাণ নেই। আমার নামে সবাই মিথ্যা অভিযোগ করতেছে। থানার ওসি ও এস আই আমার কাছে এসে বসে থাকে। তারাও আমার সম্পর্কে যথেষ্ট ভালো ধারণা রাখে। আমি অপরাধী নই। এক নারী অভিযোগ করার পর তার মাকে কেন হাসপাতালে আটক করে রেখেছিলো এবং ওই নারীকে হত্যার হুমকি দিয়ে থানা থেকে অভিযোগটি তুলে নিতে বলেছে সে বিষয় জানতে চাইলে তিনি কথা এড়িয়ে গিয়ে কল কেটে দেন। এ ছাড়া হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে খায়ের বলেন, ডাক্তারের হাত-পা ভেঙে বাসায় পড়ে আছে। তাহলে আমি কি করবো রোগীরা আমার কাছে এসে বসে থাকে। আর যেহেতু এই লাইনে আমি দীর্ঘ বছর অভিজ্ঞ। তাই সেই অভিজ্ঞতার আলোকে রোগীদের যতটুকু ভালো হয় সেই চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এক রোগীকে নিজেই এক্স-রে করাচ্ছেন সেই বিষয়ে বলা হলে তিনি বলেন, এই এক্স-রের বিষয়েও আমার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাকে রোগীরা ভালোবাসে, তাই আমার কাছে এক্স-রে করাই। এক্স-রের টেকনিশিয়ান এখন না থাকাতে আমি এক্স-রে করে থাকি। সদর দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে ভয়ভীতির কারণে অভিযোগটি পুনরায় তুলে নিয়েছে তা আমার জানা নেই। সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীস ঘোষ বলেন, সুয়াগাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে অভিযান পরিচালনা করতে কিছুক্ষণ পরে যাবো। কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন নাছিমা আক্তার বলেন, এমন কাজ করে থাকলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status