বিশ্বজমিন
রাশিয়ার অধীনে যেমন আছে ইউক্রেনের মারিউপোল শহর
মানবজমিন ডেস্ক
২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবারইউক্রেনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর একটি ছিল মারিউপোল। যদিও এখন শহরটিতে গেলে বুঝার উপায় নেই এই শহর ইউক্রেনের। সর্বত্রই উড়ছে রাশিয়ার পতাকা, চলছে রুশ মুদ্রা রুবল। এ ছাড়া সেখানকার বাসিন্দারা এমনিতেই রুশভাষী। শিক্ষা কার্যক্রম এখন চলছে রাশিয়ার কারিকুলাম অনুযায়ী। ইউক্রেনের দাবি, মারিউপোলসহ দখলকৃত অঞ্চলগুলোর স্কুলগুলোতে জোর করে রাশিয়ার পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। ইউক্রেন আমলে এই শহরের মেয়র ছিলেন ভাদিম বয়চেঙ্কো। তিনি মনে করেন, মারিউপোলকে রাশিয়ার করে নেয়া ছিল পুতিনের জন্য ব্যক্তিগত। আর সে কারণেই অন্য সব শহর বাদ দিয়ে মারিউপোলেই গিয়েছেন পুতিন। গত বছর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর তিন মাসের মাথায়ই মারিউপোল দখলে নেয় রাশিয়ার সেনারা।
পরে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে যান মারিউপোল। এটাই ইউক্রেন যুদ্ধে দখল করা অঞ্চলে প্রথম সফর পুতিনের। মারিউপোলে নিজেই গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যান পুতিন। বিভিন্ন স্টপে নেমে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন মারিউপোলকে পুনর্গঠনের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন পুতিনের কাছে। শহরটিতে নতুন নতুন আবাসিক এলাকা তৈরি করছে রাশিয়া। পাশাপাশি শিক্ষাকেন্দ্র, ইউটিলিটি অবকাঠামো এবং চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে সেখানে। সেগুলোর তদারকি করেন পুতিন। এ ছাড়া নেভস্কি জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পুতিনকে দেখে এক পথচারী তাকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় পুতিন ওই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যান। ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিনের শহরের মধ্যেকার সফর ছিল অনির্ধারিত। পুতিন তার নিজের মতো করেই ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নেন। ইউক্রেন আমলে এই শহরের মেয়র ছিলেন ভাদিম বয়চেঙ্কো। তিনি নির্বাসিত অবস্থায় থাকলেও কাগজে কলমে এই শহরের মেয়র। তিনি বিবিসিকে বলেন, পুতিনের কাছে মারিউপোল ছিল ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি এই শহর দখলের সময় যে তীব্রতা দেখিয়েছিলেন তাই এর সব থেকে বড় প্রমাণ। অন্য কোনো শহর দখলে রাশিয়া এত তীব্রতা দেখায়নি যা মারিউপোলে দেখিয়েছে।
এখন পুতিন এসেছেন তিনি এই শহরে কী করেছেন তা দেখতে। শনিবারের ওই সফরে মারিউপোলে রাশিয়ার অধীনে তৈরি আবাসিক ভবনগুলো ঘুরে দেখেন পুতিন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী খুসনুলিন। তিনিই পুতিনকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নতুন প্রকল্পগুলোর একাংশ দেখান। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ এলাকার নদী নেভা’র নামানুসারে নেভস্কি নামে মারিউপোলে একটি আবাসিক ডিস্ট্রিক্ট তৈরি করেছেন পুতিন। সেখানেও যান তিনি। তবে ইউক্রেনীয় মেয়র বয়চেঙ্কো বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া এসব উন্নয়ন করছে লোক দেখানোর জন্য। এই শহর পুনরায় গড়তে ২০ বছর লাগবে। যদিও মারিউপোলের বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, শহরে নতুন নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ভবনকে একেবারে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। নরওয়ের সাংবাদিক মর্টেন রিসবার্গ গত ডিসেম্বর মাসে মারিউপোল ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি জানান, শহরটির সর্বত্রই তিনি ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছেন। তবে সেখানে বড় মাত্রায় নতুন ভবন নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রমও দেখেছেন বলে জানান তিনি। রিসবার্গ বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া এখন মারিউপোলের রাস্তাগুলোর নাম বদলে ফেলছে। সর্বত্র তারা রাশিয়ার জাতীয় পতাকা আঁকছে। এ ছাড়া শহরের মধ্যে এখন প্রায়ই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল পতাকারও দেখা পাওয়া যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহর দখলে নিয়েছিল জার্মানি। তবে পরে সোভিয়েত সেনারা এক ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যদিয়ে মারিউপোল উদ্ধার করে।
সেই যুদ্ধে নিহতদের স্মরণে মারিউপোলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছিল। পুতিন সেই স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখেন। খুসনুলিন এসময় পুতিনকে জানান যে, যুদ্ধের কারণে মারিউপোলের যেসব বাসিন্দা অন্যত্র চলে গিয়েছিল, তারা আবার ফিরে আসছেন। নিয়মিত শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি রেকর্ড হচ্ছে। নতুন নতুন চাকরি তৈরি করা হচ্ছে। মারিউপোলের বন্দর ইউক্রেনের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতো। যুদ্ধের কারণে গুরুত্বপূর্ণ আজভ সাগর হারিয়েছে ইউক্রেন। এই সাগর এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ সাগরে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী জানান যে, মারিউপোল বন্দর এখন দারুণ কন্ডিশনে রয়েছে। এটি একটি সমুদ্র বন্দর হিসেবে কাজ করতে পারবে। দ্রুতই এই বন্দর ট্রান্সশিপমেন্ট ঘাঁটি হিসেবে কাজ শুরু করবে। এর আগে গত ১৩ই মার্চ রাশিয়ার নৌ পরিবহন দপ্তরের সহকারী প্রধান কনস্টান্টিন আনিসিমোভ বলেন, মারিউপোল এবং বার্দিয়ানস্ক বন্দরকে কাজে লাগিয়ে শিগগিরই কার্গো ট্রাফিকিং শুরু করবে রাশিয়া। গত বছর মারিউপোলের মতো বার্দিয়ানস্ক বন্দরও ইউক্রেনের কাছ থেকে দখলে নিয়েছে রাশিয়া।