বিশ্বজমিন
কথিত বাংলাদেশি সন্দেহে আটক
ভারতে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হয়রানি
মানবজমিন ডেস্ক
(৬ ঘন্টা আগে) ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:১১ অপরাহ্ন

ভারতে অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাংলাভাষী শ্রমিকরা। এসব শ্রমিক ভাল উপার্জনের সন্ধানে বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কাজ করছেন। সম্প্রতি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সরকার দমনপীড়ন শুরু করেছে। তাতে কথিত বাংলাদেশি সন্দেহে অনেক রাজ্যে আটক করা হয়েছে অনেক শ্রমিককে। তারা আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখিয়েও রেহাই পাচ্ছে না। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক সংগঠন পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ। এর সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও হরিয়ানার হিসার এলাকায় বেআইনিভাবে বসবাসের অভিযোগে সেখানকার পুলিশ কথিত ৩৯ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার গ্রেপ্তার করা এসব ব্যক্তির মধ্যে ১১ জনই নারী এবং ১৪টি শিশু রয়েছে। তারা গত একমাস সেখানকার তোশাম রোডে অবস্থিত একটি ইটভাটায় বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
অন্যদিকে রাজস্থানেও কথিত বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ অভিবাসীকে। তারা পাটান পুলিশ স্টেশন এলাকায় একটি ইটভাটায় কাজ করছিলেন। ৫ই মে তাদেরকে তুলে নেয় পুলিশ। তখন থেকেই তারা ও তাদের পরিবার পুলিশ স্টেশনের কাছেই একটি গেস্ট হাউজে বন্দি অবস্থায় নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য হিন্দুস্তান টাইমস ও টেলিগ্রাফ। হাঁসির পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, কথিত এসব বাংলাদেশি বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং এক মাস ধরে ওই ইটভাটায় কাজ করছিলেন। এসব ব্যক্তিকে দিল্লিতে একটি বন্দিশিবিরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। হাঁসির এসপি অমিত যশবর্ধন বলেন, একটি ইটভাটায় বাংলাদেশি নাগরিকরা কাজ করছেন এমন তথ্য পায় সদর পুলিশ। তার ভিত্তিতে তারা সেখানে পৌঁছে এবং তাদেরকে ডকুমেন্ট দেখাতে বলে। সব ডকুমেন্ট চেক করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে ওই ইটভাটার মালিক সন্দ্বীপ কুমার পুলিশকে বলেছেন, এসব শ্রমিক রাজস্থান থেকে তার ইটভাটায় কাজে গিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রায় এক মাস আগে তার ইটভাটায় কাজ করার জন্য রাজস্থান থেকে সেখানে গিয়েছে ৫টি পরিবার। তাদের সবার কাছেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে ইস্যু করার আধার কার্ড আছে। আমার জানামতে, তারা কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেই। তবে তাদের অতীত সম্পর্কে জানি না। পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, এর মধ্যে একটি পরিবার ২০০৮ সালে ভারতে গিয়েছে। অন্য দুটি পরিবার গিয়েছে ২০২১ সালে। তারপর থেকে তারা ইটভাটায় কাজ করছিলেন। এছাড়া মহেন্দগড় থেকেও পুলিশ একটি ইটভাটা থেকে কথিত ১৪ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করেছে ওই সংবাদ মাধ্যম। ২৩শে জানুয়ারি রেওয়ারি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ কথিত ১৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে সাহারানওয়াস গ্রামের একটি ইটভাটা থেকে। এর মধ্যে ৫টি শিশু রয়েছে।
পুলিশকে তারা বলেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে তারা বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ২৫ শে এপ্রিল হিসার জেলার বলসামান্দ গ্রাম থেকে কথিত ১৫ জন পাকিস্তানি হিন্দু নাগরিককে নিরাপত্তার কারণে নয়া দিল্লিতে একটি পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ওদিকে টেলিগ্রাফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কুচবিহারের দিনহাটা দ্বিতীয় ব্লকের পূর্বা জাগির বালাবাড়ি গ্রাম থেকে পুলিশ আটক করেছে ওবায়দুল খন্দকার ও তার স্ত্রী বিউটি বিবিকে। তারা ফোনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- আমাদের কাছে বৈধ আধার ও ভোটার কার্ড আছে। তা সত্ত্বেও পুলিশ আমাদেরকে তুলে এনেছে। তারা পশ্চিমবঙ্গের কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদেরকে ছেড়ে দিচ্ছে না। তাদের সন্দেহ আমরা বাংলাদেশি। আমরা ভারতে অনুপ্রবেশ করেছি। ওবায়দুল খন্দকার বলেন, একবার মুক্তি পেলে তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে যাবেন। আর কখনো নিজ রাজ্যের বাইরে কোনো কাজের খোঁজে যাবেন না।
উল্লেখ্য, ভাল উপার্জনের আশায় প্রায় এক বছর আগে রাজস্থানে চলে যান ওবায়দুল খন্দকার। ৫ই মে পাটান পুলিশের সদস্যরা তাদেরকে আগে থেকে কোনো নোটিশ না দিয়েই ইটভাটা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে পুলিশ নূর ইসলাম নামে এক শ্রমিককে কুচবিহারের মাথাভাঙ্গা থেকে আটক করেছে তার স্ত্রী ও সন্তানসহ। একই ইটভাটা থেকে আটক করা হয়েছে আসাম ও মেঘালয় থেকে কাজে যাওয়া অন্য দুটি পরিবারকে। এসব অভিবাসীদের কল্যাণে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক সংগঠন পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গে এর সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, কিছু রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না কেন ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। তারা ১লা এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ভারতজুড়ে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়ে চিঠি লিখেছে। ওদিকে আটক শ্রমিকদের বিষয়ে রাজস্থানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এমনটা জানিয়েছেন রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য সামিরুল ইসলাম।
পাঠকের মতামত
মুদির দুতির পরতে পরতে বাংলাদেশের আওয়ামী ৩ হাজার বাঙ্গালী জড়িয়ে আছে এদেরকে আগে আটক করতে বলেন।