ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

রোজায় চিনিসহ কিছু কিছু পণ্যের দাম কমতেও পারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, রমজান মাস সামনে রেখে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে নিত্যপণ্য মজুত রয়েছে। ব্যবসায়ীদের চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমানোর অনুরোধ করেছি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আশা করি, রোজার প্রথম সপ্তাহেই চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমবে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৬ষ্ঠ সভা’ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রোজার প্রথমদিকে অধিক হারে কেনাকাটা করে মজুত করেন ভোক্তারা। এতে অনেক সময় সাময়িক দাম বেড়ে যায়। পুরনো   
অভ্যাসবশত এমন কেনাকাটা না করলে দাম বাড়বে না। এমনকি ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছু কিছু পণ্যের দাম রোজায় কমতেও পারে। বিশেষ করে রোজার প্রথম সপ্তাহে চিনির দাম কমতে পারে।
দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভায় চিনি ছাড়াও ভোজ্য তেল, মসুর ডাল, ছোলা, পিয়াজ, খেজুর, ডিম ও ব্রয়লার মুরগি নিয়ে আলোচনা হয়। রোজার শুরুতে চিনির দাম কমার আভাস দিলেও সয়াবিন তেলে দাম কমানোর সুযোগ দেখছেন না টিপু মুনশি।

বিজ্ঞাপন
দেশে প্রচুর পরিমাণ তেল মজুত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যে দাম নির্ধারণ করেছি (সয়াবিন তেল), অনেক হিসাব করে দেখেছি, দাম কমানোর সুযোগ আমরা পাচ্ছি না। আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দেশে আবার ডলারের দাম বেড়ে সেটা সমন্বয় হয়ে যায়। তবে বাড়ার কোনো কারণও এই সময়ের মধ্যে তৈরি হয়নি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে, আমাদের যা প্রয়োজন তার মিনিমাম দেড়গুণ তাদের কাছে মজুত রয়েছে। তাদের হাতে আছে ও পাইপলাইনে আছে। ফলে কোনোভাবেই কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, আমরা জাতির সামনে একটি কথা বলতে চাই, রমজান সামনে রেখে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। প্যানিক হয়ে কেউ কিনতে যাবেন না। যথেষ্ট মজুত আছে।
রোজায় এবার অধিকাংশ ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে এর পরেও কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যে থাকবে না, সেই নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বসে থাকবে না। সেভাবেই বলে দেয়া হয়েছে। রাজধানীতে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতিমধ্যে অবহিত করার কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। রাজধানীতে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসা ট্রাক হাইওয়েতে কোথাও কেউ থামাতে পারবে না।

কোন পণ্যের কতো চাহিদা, মজুত কতো?: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের লিখিত পরামর্শে বলা হয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় গতবারের তুলনায় এবার রোজায় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ১৫-২০ শতাংশ কম থাকবে। দেশে ভোজ্য তেলের (সয়াবিন, পাম ও সরিষা) বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন, স্থানীয় উৎপাদন ২ লাখ ৩ হাজার টন। বছরে ২০ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানি করা হয়। এই খাতে কয়েক ধাপে শুল্ক প্রত্যাহারের পর বর্তমানে ৫% ভ্যাট আরোপিত আছে। প্রতি মাসে ১ লাখ ৪০ হাজার টন থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টন ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকলেও রোজায় তা দ্বিগুণ বেড়ে ৩ লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আদানি গ্রুপের বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপ মিলিয়ে ভোজ্য তেলের মজুত রয়েছে ৩ লাখ দুই হাজার ১৬৩ টন, পাইপলাইনে আছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন। এদিকে দেশে বছরে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদার বিপরীতে দেশের আখ থেকে আসে ৩০ হাজার টন। প্রতি বছর ২০ লাখ থেকে ২২ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়। সেখান থেকে পরিশোধনকালে ৬.৫% ‘সিস্টেম লস’ হয়। চিনি আমদানিতে প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা সিডি, ৩০ শতাংশ আরডি, ১৫% ভ্যাট ও ৪% এটি রয়েছে। সব মিলিয়ে চিনিতে ৬১% শুল্ক ছিল। সর্বশেষ এসআরও মাধ্যমে সিডি শূন্য ও আরডি ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ ও দেশবন্ধু গ্রুপ মিলিয়ে চিনির মজুত আছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন; পাইপলাইনে আছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন।

দেশে মসুর ডালের চাহিদা আছে ৬ লাখ টন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ২ লাখ ২০ হাজার টন, আমদানি হয় প্রায় ৪ লাখ টন। মাসিক চাহিদা ৪০ হাজার টন হলেও রোজার মাসে চাহিদা হয় ১ লাখ টন। মশুর ডাল আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই। 
এ ছাড়া দেশে পিয়াজের চাহিদা বছরে ২৫ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ টন। সেখান থেকে ২৫ শতাংশ বার্ষিক সংরক্ষণজনিত ক্ষতি বিবেচনা করা হয়। প্রতি মাসে ২ লাখ টন পিয়াজের চাহিদা থাকলেও রোজার মাসে তা ৪ লাখ টন ধরা হচ্ছে। পিয়াজ আমদানিতেও বর্তমানে ৪ শতাংশ হারে সিডি কার্যকর আছে। 

ছোলার বার্ষিক চাহিদা দেড় লাখ টন, এর মধ্যে কেবল রোজার মাসেই ১ লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ টন করে ছোলা আমদানি হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে বছরে প্রায় ৫ হাজার টন ছোলা উৎপাদন হয়।
খেজুরের বার্ষিক চাহিদা ১ লাখ টন; এর মধ্যে রোজার মাসে চাহিদা ৫০ হাজার টন। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৩৫ লাখ ডিম উৎপাদন হয়েছিল। জনপ্রতি ১০৪টি ডিমের চাহিদা বিবেচনায় ডিমের বার্ষিক চাহিদা এক হাজার ৭৮৫ কোটি ৬৮ লাখ। ডিম আমদানিতে ৩৩ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে।

বছরে মুরগির মাংসের চাহিদা ৪০ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩১ কোটি ১৮ লাখ মুরগি উৎপাদন হয়েছে। মুরগির মাংস আমদানিতে ৮১.৬৪ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে। 
এদিকে আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তা ও বৃহত্তর শিল্প গ্রুপগুলোকে ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রির আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বলেন, বড় গ্রুপগুলো যদি রমজান মাসে এগিয়ে আসে, তাহলে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে রোজা রাখতে পারবে। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশবন্ধু গ্রুপের সহায়তায় ‘ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বিক্রি’র কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সারোয়ার জাহান তালুকদার, দৈনিক আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, দেশবন্ধু গ্রুপের সিওও ইদ্রিস আলী, জিএম অপারেশন রাকিকুল ইসলাম ও সিনিয়র ম্যানেজার মঞ্জুরুল হোসেন। 
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ভর্তুকি দিয়ে মাত্র ৯০ টাকা কেজিতে চিনি ও ৪৫ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি শুরু করেছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু গ্রুপ। শিল্প গ্রুপটি দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিতে ১৭ টাকা কমে চিনি ও কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা কম মূল্যে চাল বিক্রি শুরু করলো। যা চলবে পুরো রমজান মাস। দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য হাসিল নয়, দেশবন্ধু গ্রুপ সব সময় দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে। তাই চালসহ বেশ কিছু পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির আয়োজন করেছে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status