শেষের পাতা
জনজীবনে ত্রাহি অবস্থা
মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
স্টাফ রিপোর্টার
১২ মে ২০২৫, সোমবার
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বয়ে চলছে তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে তাপপ্রবাহ। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, যশোর, মানিকগঞ্জসহ আরও অনেক জেলায় শনিবার পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকায় শনিবার বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন গরমে সবচেয়ে বেশি বিপদে দিনমজুর, রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ। জীবন ও জীবিকার তাগিদে তাদের ঘাম ঝরানো এই সংগ্রাম চলছেই। গরমের তীব্রতায় নাভিশ্বাস উঠেছে, তার উপর অসহনীয় হয়ে উঠেছে নানা গরমজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। বাড়ছে পানিশূন্যতাসহ বিভিন্ন রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমে বাইরে বের হলে পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার গ্রহণ ও ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামীকাল থেকে সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে পারে। রোববার সরজমিন রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলমান তাপপ্রবাহে ঢাকার ঠাণ্ডা শরবতের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে ঠাণ্ডা আখের রস, বেল, লেবু ও তোকমা শরবতের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। সকাল থেকেই রোদের তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং দুপুরের দিকে তা অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছায়। প্রচণ্ড গরমে সড়কে মানুষের চলাচল ছিল কম। যারা বাইরে বেরিয়েছেন, তাদের অনেকেই ছাতা বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রোদের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। নির্মাণ শ্রমিক ও রিকশাচালকরা বলছেন তাদের জীবিকার তাগিদে ছুটে চলতে হচ্ছে।
পশ্চিম তেজতুরি বাজারের পাশে সিটি করপোরেশনের রাস্তার কাজ করছেন মোতালেব হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের তো কিছু করার নেই এই কাজ করা ছাড়া। গরমে সহ্য হয় না, তবুও কাজে আসতে হয়, খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। কয়েকদিনের গরমে আমাদের অসহ্য লেগে গেছে। এজন্য এখন পানি নিয়ে এসে রাখি সঙ্গে। দোকান থেকে স্যালাইন কিনে পানি দিয়ে সবাই মিলে খাওয়ার চেষ্টা করি। এতে কিছুটা স্বস্তি লাগে সাময়িক সময়ের জন্য।
মিরপুরে রিকশা চালান জাবেদ হোসেন। বলেন, মামা গরমে টিকতে পারি না। তার উপরে রাস্তায় যানজট থাকে। কি করবো আর বাড়িতে ছেলেমেয়ে আছে, সংসার আছে। আমি রাস্তায় না আসলে তো সবাই না খেয়ে থাকতে হবে। গরমে অসহ্য লাগে। মাঝেমধ্যে খ্যাপ মারা বাদ দিয়ে বসে পানি খাই। জিরাইয়া নেই ছায়া পাই যেখানে।
কাওরান বাজার মেট্রো স্টেশনের কাছে শরবত বিক্রি করেন মো. আলী আহসান। তিনি বলেন, গরমে পানিশূন্যতা হয় সবারই। রাস্তার পাশে লেবু পানি পেলেই খেতে চেষ্টা করছেন সবাই এখন। আগের থেকে এখন আমাদের বেচাবিক্রি বেড়েছে। দিনমজুর, রিকশাচালক সবাই এসেই কমবেশি লেবু পানি খাচ্ছেন গরম থেকে একটু নিজেকে স্বস্তি দিতে।
একই এলাকায় লেবু পানি খাচ্ছেন চাকরিজীবী রনি আহমেদ। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে যখন বের হই। অবস্থা এত খারাপ যে, মনে হলো গোসল করে বের হলাম গায়ে পানি নিয়ে। এত গরমে বাসায় বসে থাকলে তো আর চাকরি থাকবে না। চাকরিও করতে হবে। গরম থেকে কিছুটা পানিশূন্যতা কাটাতেই রাস্তায় লেবুর শরবত খাচ্ছি। এটা খেলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ভালো লাগে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তাপমাত্রায় দীর্ঘসময় বাইরে থাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সঠিক পরিমাণে পানি ও খাবার না খেলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি তৈরি হবে। যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্ম দিবে। বিশেষ করে যারা পেশাগত কারণে দিনের বড় একটা সময় বাইরে থাকেন। তাদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত কষ্টকর। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্লাস, অফিস কিংবা কাজে ছুটতে গিয়ে রোদের তাপে পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, এমনকি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা মানবজমিনকে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীকাল থেকে সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে পারে। একইসঙ্গে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে।
এদিকে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কয়েকদিন ধরেই সারা দেশে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ রাজশাহী, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইলসহ দেশের বহু অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে।