শেষের পাতা
উপনির্বাচন
চাঁপাই নবাবগঞ্জে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ
চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
চাঁপাই নবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই সীমিত। অনেক ভোটকেন্দ্র ভোটারশূন্য দেখা গেছে। ভোটারবিহীন এ উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত সদর উপজেলার শান্তির মোড় ও সোনার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। লাঠিপেটা ও অন্তত ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন র্যাব ও বিজিবি’র সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটনের ওপর হামলা ও তার অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত: ৫জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় এলাবাসীর হাতে ধরা পড়ে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চ্যাটার্জি। তাকে মারধর করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন বাড়ির সামনে অস্থায়ী নির্বাচনী প্রচার অফিসে বসে ছিলেন। হঠাৎ করে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে এসে আপেল প্রতীকের প্রার্থী লিটনকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষপ করে। মোটরসাইকেল থেকে নেমে নির্বাচনী প্রচার অফিস ভাঙচুর শুরু করে তারা। এ সময় এলাকার লোকজন তাদের প্রতিরোধ করলে হামলাকারীরা দু’টি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে রাস্তায় পড়ে থাকা মোটরসাইকেল সরিয়ে রাখা হয়।
শান্তির মোড় থেকে সরে গিয়ে নৌকার সমর্থকরা সোনার মোড়ে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব’র সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে র্যাব সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেন, তারা দুপুরের খাবার খেতে বসেছিলেন। এ সময় র্যাব এসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের ওপর লাঠিপেটা করে। তাদের জ্যেষ্ঠ নেতা জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হাকিমকে মারধর করেছে। তাদের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী র্যাব’র পিটুনিতে আহত হয়েছেন।
সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর সময়েই চাঁপাই নবাবগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই কেন্দ্রের ভেতর থেকে একটি বিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়। তখন থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বেলা দুইটার দিকে সেই ঘটনার জের ধরে শান্তির মোড় এলাকায় আবার সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সামিউল হক লিটন বলেন, আমি আমার বাড়ির সামনে নির্বাচনী অফিসে বসে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন এলাকার ভোটের খোঁজ-খবর নিচ্ছিলাম। এ সময় ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল ২০-২৫ জন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে সন্ত্রাসী কায়দায় আমাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারতে থাকে। এ সময় তারা আমার অফিস ভাঙচুর ও বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে। এলাকার লোকজন বাধা দিলে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় তারা। তার দাবি, অন্তত ১০টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নৌকার প্রার্থী আবদুল ওদুদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজার রহমান বলেন, তাদের কয়েকজন নেতা-কর্মী মোটরসাইকেলে মাঝপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আপেল প্রতীকের সমর্থকেরা। এতে নবাবগঞ্জ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চ্যাটার্জী আহত হন।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার রুহফি তাহমিন বলেন, র্যাব’র একটি টহল গাড়ি শান্তি মোড় থেকে বিশ্বরোড মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। তাদের আঘাত থেকে বাঁচতে র্যাব প্রথমে লাঠিপেটা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে র্যাব’র গাড়ির দিকে বোমা নিক্ষেপ করে তারা। তাদের হামলা থেকে বাঁচতে প্রায় ২০টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম সাহিদ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিসের সামনে মারামারির খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।