শেষের পাতা
সংকটের সাতকাহন
আদানিরা কোমর বাঁধছে ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে
বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা থেকে
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবারআদানি সাম্রাজ্যে’র পতন নাকি ভারতের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ? যাই হোক না কেন থেমে থাকছে না আদানিদের প্রকল্প। আজ ধারাবাহিকের দ্বিতীয় কিস্তি। বেঙ্গল গ্লোবাল সামিটে বরাবরই এসে থাকেন আদানি সাম্রাজ্যের অধিশ্বর গৌতম আদানি। এবারো এসেছিলেন। সামিটে তার দৃপ্ত ঘোষণা, ১০ বছরে বাংলায় আদানিরা ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। রাজারহাটের বাণিজ্য হাব, দেউচা পাচামির কয়লা প্রকল্প কিংবা তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন প্রকল্প এর আগেই আদানিদের হস্তগত হয়েছে। আদানিদের ভয়াবহ পতনের পর এই প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ কি হতে পারে? এই প্রশ্নের জবাব বোধহয় একটি ঘটনায় নিহিত আছে। মঙ্গলবার ইসরাইলের কমার্শিয়াল বন্দর হাইফাতে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার-এ স্বাক্ষর করেছেন গৌতম আদানি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ছবির পোজ দিয়েছেন। এই ঘটনাই প্রমাণ করে দেয় বাণিজ্যিক স্বার্থ যেখানে সেখানে কোনো আপস করেন না গৌতম আদানি কিংবা আদানিরা। তাই আশঙ্কা নেই পাচামি অথবা তাজপুর কিংবা রাজারহাটের বিজনেস হাব নিয়েও।
একই কারণে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানিদের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে স্পেশাল ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে আদানিদের বাংলাদেশে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পৌঁছানোর প্রকল্পেও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর যখন বাংলাদেশে গ্যাস এবং কয়লার অভাব দেখা গিয়েছিল তখনই আদানির দৃষ্টি পড়েছিল বাংলাদেশের দিকে। মৃগয়া ক্ষেত্র ছাড়তে চাননি আদানি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দিল্লি সফরে এসেছিলেন তখনই তার সঙ্গে দেখা করে চুক্তি পাকা করেন আদানি। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড কিংবা শ্রীলঙ্কার মতোই এই বিদেশি মৃগয়া ক্ষেত্র সঙ্গত এবং বাণিজ্য কারণেই ছাড়তে চাইবেন না আদানিরা তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। দেউচা পাচামি বিশ্বের দ্বিতীয় কোল ব্লকের খনি। মাটির নিচে এক হাজার ১৯৮ মিলিয়ন টন কয়লা এবং ১৪০০ মিলিয়ন টন বাসাল্ট আছে এখানে। আদানিরা কি এই কয়লা, এই বাসাল্ট ছেড়ে দেবেন? তাজপুরের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ নির্ভর করছে দেউচাতে দ্রুত কয়লা ব্লক উত্তোলনের কাজ শুরু হওয়ার ওপর। সুযোগ সন্ধানী আদানিরা জানে ব্যবসা কীভাবে করতে হয়। তাই, এই কারণেও তারা অবিচল তাদের প্রকল্পগুলি নিয়ে।
মঙ্গলবার গৌতম আদানি তার হৃৎ সম্মান কিছুটা ফিরে পেয়েছে আদানি এন্টারপ্রাইজে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ায়। তিনি বিশ্বের ধনীর তালিকায় ১১ নম্বরে নেমে গেছেন। তার পরিচালিত এনডিটিভি থেকে এক্সিকিউটিভ এডিটর নিধি রাজদান কিংবা শ্রীনিবাস জৈনের মতো দু’ সাংবাদিক ইস্তফা দিলেও আবুধাবির একটি ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানি পরিত্রাতা হয়েছে আদানিদের। আর তাই আদানিরা কোমর বাঁধছে ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে। এত পতনের পরও বেঙ্গল গ্লোবাল সামিটে আদানির ভাষণটির উল্লেখ করা যেতে পারে- আমার জীবনে কাল বলে কোনো শব্দ নেই। আজ এবং আজই। আমার প্রকল্প থেমে থাকে না। দিনের আলো দেখেই। (চলবে)