ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

আধা কিলোমিটার দৌড়েও বাঁচাতে পারলেন না গর্ভের সন্তানকে

ফাহিমা আক্তার সুমি
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার
mzamin

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন শাম্মী খাতুন। দগ্ধ শরীর নিয়ে ছটফট করছেন হাসপাতালের বেডে। চুলার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন তিনি। চারদিন ধরে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি। পোড়া শরীরের যন্ত্রণায় চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে তার। আগুনের ঘটনায় বেঁচে নেই তার গর্ভের সন্তান। পৃথিবীর আলো দেখানোর আগেই হারিয়েছেন সন্তানকে। কিছুটা নির্বাক হয়ে পড়েছেন তিনি। স্বজনদের কাছে সন্তান হারানোর বিলাপ করছেন শুধু। শরীরে আগুন নেভাতে আধা কিলোমিটার দৌড়েছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন
তবুও বাঁচাতে পারলেন না গর্ভের সন্তানকে। শাম্মীর শরীর দগ্ধ হয়েছে ৬৫ শতাংশ। শুক্রবার রাজশাহীর কাটাখালী তার শ্বশুর বাড়িতে চুলায় রান্না করতে গিয়ে ঘটে এই দুর্ঘটনা।

গতকাল শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সপ্তম তলায় ৭০২ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের অপেক্ষা। শাম্মী ১৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার আট বছরের মেয়ে সাগরিকার মুখে হাসি নেই। মেঝেতে বসে অপেক্ষা করছে মায়ের সুস্থতার। শাম্মীর একমাত্র ভাই মো. মহিদুজ্জামান অনন্ত মানবজমিনকে বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মাটির চুলায় বাঁশ দিয়ে রান্না করছিলেন আমার বোন। সে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। রান্নার সময় চুলার বাঁশের গিঁড়া ফুটে গিয়ে তার শরীরে এসে লাগে। তাতে আগুন ছিল। এরপর তার শরীরে থাকা পোশাকে আগুন ধরে যায়। যখন আগুন ধরে তখন আশেপাশে কেউ ছিল না। তার মেয়ে তার দাদীর কাছে ছিল। দৌড়ে গিয়ে অন্য একটা বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে আগুন আগুন করে। তারা বালতি ভরে শরীরে পানি দিলে আগুন নিভে যায়। বোনের বুক থেকে পা পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। কথা বলতে পারছে স্বাভাবিকভাবে। তার গর্ভের সন্তানটি পেটের ভেতরে মারা যায়। রোববার রাতে মৃত অবস্থায় বাচ্চাটিকে বের করা হয়েছে। বোন নিজেই বলেছিল আমার বাচ্চাটা পেটের ভেতর নড়ছে না, নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা দুই পরিবারই দরিদ্র। চিকিৎসার খরচ চালাতে আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। বাবাও সেই ভাবে সহযোগিতা করতে পারছে না। আমার বাবা কৃষিকাজ করে। বোনের শ্বশুরবাড়িতেও সমস্যা আছে। আগুন ধরা অবস্থায় আমার বোন মাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘মা আমার গায়ে আগুন ধরেছে, আমি আর বাঁচবো না’। এরপর ফোন না কেটে ফেলে দিয়ে চিৎকার করতে করতে আধা কিলোমিটার রাস্তা দৌড়ে চলে যায়। ঘরে আগুন ধরে যাবে সেজন্য বাইরে দৌড়ে গিয়েছে। রান্না ঘরের পাশেই পানির মোটর ছিল সে ভয়ে সেখানে যাইনি। মনে করেছে পানির সুইচ দিতে গেলে যদি বিদ্যুতের লাইনে আগুন ধরে আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে। হাসপাতালে ভর্তির পর বোনের অনেক রক্তের দরকার ছিল, এখনো দরকার। চার ব্যাগের মতো সংগ্রহ করা হয়েছে আরও চার ব্যাগ বি পজেটিভ রক্ত লাগবে। তার মেয়ে মায়ের জন্য সব সময় কান্নাকাটি করছে। 

আহত শাম্মীর স্বামী শাকিল হোসেন বলেন, আমি তখন সিরাজগঞ্জে গাড়িতে ছিলাম। ঘটনার ৫ মিনিট আগেও সে খাবার খেয়েছে কিনা জানার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। এরপরে বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে আমাকে জানায় রান্না করতে গিয়ে তার শরীরে আগুন লেগেছে। তারপর আমি দ্রুত রাজশাহী মেডিকেলে চলে যাই। দশ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। আট বছরের একটি মেয়ে আছে। তিনি বলেন, রান্নার সময় বাঁশের গিঁড়া ফুটে আগুন ছিটে এসেছে সেটি সে বুঝতে পারেনি। এই আগুন আস্তে আস্তে সারা শরীরে ধরে যায়। ঘরে আগুন ধরে যাবে বলে সে বাইরে দৌড়ে যায়। তার মাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘মা আমি মারা গেলাম আমার গায়ে আগুন ধরেছে।’ আগুন অবস্থায় পাশের বাড়িতে গিয়ে বলে ভাবি আমার গায়ে আগুন ধরেছে। এরপর তারা পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখে তার ডেলিভারির ডেট ছিল। আমার বাচ্চাটা তো বেঁচে রইলো না। পৃথিবীর আলো দেখার আগে চলে গেল সে। স্ত্রীর অবস্থাও খুব ভালো না। তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। দুই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে সারাক্ষণ। বাচ্চাটা এত সুন্দর হয়েছে বোঝাই যাইনি মারা গিয়েছে। আমার আগত ফুটফুটে কন্যাটা এভাবে মারা গেল। আমার সন্তানকে তো আর পাবো না। আমার স্ত্রীকে যেন আমার বড় মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ সুস্থ করে তোলেন।     
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status