অনলাইন
ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু
ফেনী প্রতিনিধি
(২ বছর আগে) ২১ মে ২০২২, শনিবার, ৩:১১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:২১ অপরাহ্ন
ফেনীতে ইস্রাফিল হোসেন ইফাত (১৪) নামে হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে শহরের পুলিশ লাইনস এলাকার মিছবাহুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসা ভবনের পাশের রাস্তা থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে ফেনী মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. ইফরান খান।
নিহত ইস্রাফিল হোসেন ইফাত কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ ইউনিয়নের সাত ঘরিয়া গ্রামের ওমান প্রবাসী মো. ইয়াসিনের ছেলে। সে পুলিশ লাইন্স এলাকার মিছবাহুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসা হেফজ বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র ছিলেন।
নিহত ইস্রাফিলের নানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ বছর ধরে ইস্রাফিল হোসেন ইফাত মিছবাহুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসা হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিলো। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেলে সে মাকে জানায়, মাদ্রাসায় শিক্ষকরা তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। এজন্য সে মাদরাসায় ফিরে যাবে না। পরে ছুটি শেষে গত ৭ই মে শনিবার ইস্রাফিলকে মা লায়লা আনজুমান সুমি ফের মাদরাসায় দিয়ে যান। পরদিন রোববার ইস্রাফিলকে ডিম আনতে দোকানে পাঠায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ইস্রাফিল ডিম আনতে গিয়ে টাকা হারিয়ে ফেললে সে মাদ্রাসায় ফিরে যায়নি। পরে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পরিবারকে জানালে চারদিন পর শহরের একাডেমী এলাকা থেকে ইস্রাফিলকে খুঁজে পেয়ে মা লায়লা আনজুমান সুমি শুক্রবার বিকালে ছেলেকে ফের মাদ্রাসায় দিয়ে যান।
নিহত ইস্রাফিলের চাচা ফয়েজ উল্যাহ জানান, ২৮ পাড়া কুরআন শরীফ মুখস্ত করা ইস্রাফিলকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ রাখতে না চাইলে শিক্ষার্থীর মা কাকুতি-মিনতি করে ছেলেকে মাদরাসায় রাখতে অনুরোধ করেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এসময় ইস্রাফিলের মায়ের কাছ থেকে ছেলের কিছু হলে দায় নিবে না মাদরাসা এমন একটি বহন সহি নেন প্রধান শিক্ষক।
চাচা ফয়েজ উল্যাহ আরও জানায়, শনিবার সকালে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ইস্রাফিলের বাড়িতে ফোন করে তা মা কে মাদ্রাসায় জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলে ফোন কেটে দেন। পরে মা লায়লা আনজুমান সুমি মাদরাসায় এসে ছেলের মরদেহ দেখতে পান। এসময় মাদ্রাসায় থাকা এক শিক্ষক ইস্রাফিলের মা কে জানায়, সে মাদ্রাসার ৬ তলা ভবন থেকে পড়ে নিহত হয়েছে। ঘটনার পর প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরাও পালিয়ে যায় বলেও চাচা দাবি করেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও তিনি জানান। নিহত ইস্রাফিল দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন।
মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মো. ইউনুছ মুঠোফোনে জানান, গত ৫দিন আগে ইস্রাফিল মাদ্রাসা থেকে চলে গেলে গত শুক্রবার বিকালে ফের তার মা জোর করে মাদ্রাসায় রেখে যায়। তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাকে রাখতে অস্বীকৃতি জানালেও তার মা রেখে যায়। একপর্যায় শনিবার ভোরে পড়ার সময় তাকে ক্লাসে দেখতে না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর বাড়ির মালিক হাজি রিয়াজ উদ্দিন তাকে খবর দেন একজন ছাত্রের লাশ ভবনের পাশে রাস্তায় পড়ে আছে। পরে ৯৯৯ (ত্রিপল নাইনে) কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ফেনী মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. ইফরান খান জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে মাদ্রাসার ৬ তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে ইস্রাফিলের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জোনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ভাঙ্গা বালতি জব্দ করা হয়েছে। মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।