শেষের পাতা
অগ্রাধিকার প্রকল্পেও ধীরগতি
মো. আল-আমিন
১৫ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
সরকারের বিশেষ নজরে থাকা অগ্রাধিকার প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বেশ মন্থর। কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন হচ্ছে না এসব প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে
সর্বোচ্চ ব্যয়ের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫২ দশমিক ৯০ শতাংশ। অন্যদিকে একযুগেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের কাজ। অগ্রাধিকার প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, রাশিয়া থেকে নেয়া ঋণে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নভেম্বর পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫২.৯০ শতাংশ। যেখানে এপ্রিল পর্যন্ত কাজের বাস্তব অগগ্রতি ছিল ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত সাত মাসে অগ্রগতি মাত্র ৫.৪০ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটির এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫০ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ৫৭ হাজার ২১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে কাজ সমাপ্ত করার কথা।
এছাড়া পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেল সংযোগের জন্য নেয়া প্রকল্পটির কাজ হয়েছে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৬৭ শতাংশ। গত এপ্রিল পর্যন্ত কাজ হয়েছিল ৫৭.৫০ শতাংশ। সাত মাসে অগ্রগতি ১০ শতাংশ বেড়েছে। বাস্তব কাজের অগ্রগতি নভেম্বর পর্যন্ত ৬৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করে রেল চলাচল শুরু করার কথা। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। আর অগ্রাধিকার প্রকল্পের পদ্মা সেতুর ভৌত অগ্রগতি ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এদিকে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত গুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলের ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির এক যুগের বেশি সময়ে অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। নভেম্বর পর্যন্ত এক যুগে ৩৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে। ২০১০ সালের জুনে শুরু হওয়া প্রকল্পটি দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা।
দেশের অন্যতম তৃতীয় গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দরের ভৌত কাজ নভেম্বর পর্যন্ত হয়েছে ৮৭.৭১ শতাংশ, যা গত এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি ছিল ৮৫ শতাংশ। গত সাত মাসে কাজ হয়েছে মাত্র ২.৭১ শতাংশ। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। ২০১৫ সালের জুলাইতে আরম্ভ হওয়া প্রকল্পটি চলতি বছর জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সময় বাড়িয়ে এটাকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
এছাড়া রয়েছে মহেশখালীর মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম। এখানে ১২শ’ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পসহ মোট ১২টি প্রকল্প। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট খরচ ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৬৯.২৬ শতাংশ। যেখানে এপ্রিলে ছিল ৫৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত সাত মাসে অগ্রগতি ১১.৩৬ শতাংশ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ রয়েছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর পর এখন আগামী ২০২৬ সালে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা।
ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট বা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৬১ দশমিক ৩৬ শতাংশ টাকা। প্রকল্পটি ২০১২ সালের জুলাইতে অনুমোদন নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা।
ওদিকে এডিপিভুক্ত নয় তবে ফার্স্ট ট্র্র্যাকের তালিকার আরেকটি প্রকল্প রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের ভৌত কাজের অগ্রগতি নভেম্বর পর্যন্ত ৮৯.৫৮ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। প্রকল্পটির আওতায় বাগেরহাটের রামপালে একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এক যুগেও শেষ না হওয়া দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলের ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির পরিচালক মো. মফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, প্রকল্পটি ২০১০ সালে শুরু হলেও আর্থিক সংস্থান না হওয়ায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত কোনো কাজ করা যায়নি। ২০১৬ সালে এডিবি ফাইন্যান্স করেন। এরপর থেকেই কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কাজ শুরু করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন ছিল। ডিসি অফিস থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করতে অনেক সময় লেগেছে। এজন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এখন শেষের দিকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। তবে আমরা চেষ্টা করছি ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার জন্য।
প্রকল্পগুলোর ধীরগতি প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বৈদেশিক মুদ্রায় টান থাকতে পারে। আবার একইভাবে ব্যবহারযোগ্য রাজস্ব যদি না থাকে তাহলেও এমনটি হতে পারে। তৃতীয়ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারনে হয়তো প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীর হয়ে গেছে।