অনলাইন
ডিপ্লোম্যাটে নিবন্ধ
এতোকিছুর পরেও ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়নি
মানবজমিন ডিজিটাল
(৩ দিন আগে) ১৩ মে ২০২২, শুক্রবার, ৯:২৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৮ অপরাহ্ন

পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে এই মাসের শেষের দিকে রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে লং মার্চের পরিকল্পনা করছেন।
গত মাসে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের পর থেকে ইমরান খান বর্তমান সরকার এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপ বাড়িয়েছেন। সেটা শুধু নতুন ক্ষমতাসীন জোটকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, বরং তাদের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তুলে ধরতেও। এই বিষয়ে, নিজের সমর্থনের ভিত্তি জোগাড় করার জন্য ইমরান খান তার সরকারের বিরুদ্ধে কথিত "বিদেশী ষড়যন্ত্রের" ইস্যুটিকে খুব দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেছেন।
পাকিস্তানের লাহোর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অনলাইন ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটের সংবাদদাতা উমায়ের জামাল আরো লিখেছেনঃ গত মাসে যখন ইমরান খানকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল, তখন মানুষ ভেবেছিল যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে তার দিন বুঝি শেষ। তবে ইমরান খানের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন।
তার ক্ষমতাচ্যুতির এক মাসের মধ্যে, তিনি তার সমর্থনের ভিত্তিকে এমনভাবে পুনরুজ্জীবিত করেছেন যে এখন ব্যাপকভাবে এটা বিশ্বাস করা হচ্ছে যে, যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বিজয়ী হবে।
ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এখনও শেষ না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তার দলের প্রতি অত্যধিক সমর্থন রয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন যে, যদি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে সমর্থন থাকে এবং যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বকে বিতর্কিত করে তোলা যায়, তাহলে ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব ভালোই থাকে।
তদুপরি, পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খান যে এখনও প্রাসঙ্গিক তাতে বোঝা যায়, যদি কোনও দলকে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সমর্থন করে ক্ষমতায় নিয়ে আসে তবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ওই দলের বিরুদ্ধে 'ক্র্যাকডাউন' চালানোর কথা ভাবতে পারে না।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, ইমরান খান নিরলসভাবে সামরিক নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছেন, কিন্তু সামরিক বাহিনী তার বা পিটিআই নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সেনাবাহিনী হতে অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকরিরত ইমরান খানের সমর্থকরা সেনাবাহিনীর জন্য পিটিআই-এর বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু করা কঠিন করে তুলেছেন।
কয়েক মাস আগে, কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি যে সামরিক দল হিসেবে পরিচিত পিটিআই এস্টাব্লিশমেন্ট বিরোধী দলে পরিণত হবে। বেলুচিস্তান বা সিন্ধুর কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে (ইমরান খান ও তার দল যেভাবে বলছে বা যে কাজ করছে) কিছু বলবে বা করবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারে নি।
বর্তমান সংকটে ধর্মকে টেনে আনায় ইমরান খানের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করা সহজ হয়েছে। তার সমাবেশগুলোতে, তিনি প্রায়শই তার প্রচারণাকে 'জিহাদ' বলে উল্লেখ করেছেন। সোমবার দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যেও তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে তার প্রচারণা ছিল জিহাদ, কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়।
তাছাড়া, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, ইমরান খান আসন্ন লং মার্চের জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের সমর্থন পেতে তাদের সাথে দেখা করছেন। এ পর্যন্ত, বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণায় ইমরান খানকে সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও শেহবাজ শরীফের সরকার এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পিটিআইয়ের অভিযানে ইমরান খানের জন্য সহায়ক হয়েছে
এক মাস আগে, ব্যাপকভাবে মনে হচ্ছিল যে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল আগামী কিছুদিনে ভেঙে পড়বে এবং তার সমর্থকরা তাকে ত্যাগ করবেন। কিন্তু, এমনটা ঘটেনি কারণ তিনি দক্ষতার সাথে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সাথে জড়িত পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন, যার ফলে নতুন সরকার এখন বড় সংকট বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তান কীভাবে এই রাজনৈতিক জগাখিচুড়ি থেকে বেরিয়ে আসবে সেটা বোঝা মুশকিল। বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন দেশটি তীব্র আর্থিক সংকটের মুখোমুখি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও খুব বেশি প্রয়োজন।
আসছে দিনগুলোতে যাই ঘটুক না কেন, ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় নি।
পাঠকের মতামত
যুক্তরাষ্ট্রের মতই , তাদের অন লাইন নিউজ পেপার আমেরিকার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হতে চলায়, আশাহত বলে মনে হচ্ছে।