ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

বেদখল হচ্ছে জমি

কুলাউড়ার ৫ রেলস্টেশন বন্ধ, যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

আলাউদ্দিন কবির, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে
২৬ অক্টোবর ২০২২, বুধবার
mzamin

কুলাউড়া উপজেলার মনু, টিলাগাঁও, ছকাপন ও ভাটেরা বাজার রেলওয়ে স্টেশন প্রায় দেড় যুগ থেকে বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে ব্যস্ততম লংলা স্টেশনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেট-আখাউড়া রেলসেকশনের কুলাউড়া উপজেলায় যে ৭টি রেল স্টেশন রয়েছে তন্মধ্যে ৫টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ট্রেনের ক্রসিং বিড়ম্বনায় মূল্যবান সময় নষ্ট হয় যাত্রীদের। সর্বোপরি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লোকবল সংকটের কারণ দেখিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই রেল স্টেশনগুলো কর্তৃপক্ষ চালুর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্টেশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। পাশাপাশি এসব স্টেশনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অন্যদিকে যাত্রীরা তাদের যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। 

সরজমিন স্টেশন গিয়ে এবং রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা বাজার, টিলাগাঁও, ছকাপন ও মনু রেলওয়ে স্টেশন প্রায় দেড় যুগ থেকে বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ প্রায় ৩ মাস আগে চালু থাকা লংলা স্টেশনটিও বন্ধ হয়ে যায়। ওয়ানওয়ে লাইনে থাকা মনু ও ছকাপন স্টেশনে লোকাল ট্রেনের জন্য আগে একজন পোর্টার দিয়ে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা চালু রাখা হলেও বর্তমানে দীর্ঘদিন থেকে সেই ব্যবস্থাও বন্ধ রয়েছে। এসব স্টেশন দু’টি চালুর দাবিতে একাধিকবার স্থানীয় এলাকাবাসী আন্তঃনগর ট্রেন আটকিয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। রেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল স্থানীয়রা। কিন্তু সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি। ভাটেরা বাজার স্টেশনের সিগন্যাল ভবনটি স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরা দখল করে তাদের স্টাফদের থাকার ব্যবস্থা করেছে। টিলাগাঁও স্টেশনের সামনে এক গেটম্যানের আত্মীয় জায়গা দখল করে দোকান দিয়ে বসে আছে। এভাবে অন্য স্টেশনগুলোতে রেলওয়ের সঙ্গে জড়িত চতুর লোকজন বহিরাগত লোকজনদের ভাড়া দিয়ে মাসোহারা আদায় করছে। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ট্রেনগুলোর ক্রসিং নিয়ে।   

বরমচাল স্টেশন থেকে মাইজগাঁও স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ১৫-১৭ কিলোমিটার, মধ্যখানে ভাটেরা বাজার স্টেশন রয়েছে এবং কুলাউড়া থেকে শমশেরনগর স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যখানে লংলা ও টিলাগাঁও রেল স্টেশন রয়েছে যা দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। প্রতিদিন এ রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর আপ-ডাউন ৬টি ট্রেন ও একটি লোকাল মেইল ট্রেন এবং মালবাহী ট্রেন ক্রসিংয়ের জন্য আগে লংলা স্টেশনকে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু প্রায় ৩ মাস আগে এই স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার রজত রায়কে সিলেটের মোগলাবাজার রেল স্টেশনে বদলি করে দেওয়ায় স্টেশনের কার্যক্রম সেখানকার সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ক্রসিংয়ের জন্য  কুলাউড়া নতুবা শমশেরনগর স্টেশনে এক ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে অন্য ট্রেনকে ক্রসিং দিতে হয়। ভাটেরা বাজার স্টেশন বন্ধ থাকায় মাইজগাঁও নতুবা বরমচাল স্টেশনের মধ্যে যেকোনো ট্রেন দাঁড় করিয়ে ক্রসিং দিতে হয়। বন্ধ থাকা এসব স্টেশনে ট্রেনের নির্ধারিত সময় অনুমান করে যাত্রীরা লোকাল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। 

ভাটেরা স্টেশনের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ, লংলা স্টেশনের পাশ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা একে উজ্জ্বল, টিলাগাঁও স্টেশনের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা পলাশ ধর, ছকাপন স্টেশনের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ও মনু স্টেশনের স্থানীয় যাত্রী শামসুল হক জানান, একসময় এসব স্টেশনে ট্রেনের সময়সূচি ও টিকিট পাওয়া যেত। লোকাল মেইল ট্রেন স্টেশনে এসেই হুইসেল দিয়ে চলে যায়, এতে যাত্রীরা ওঠা-নামায় প্রায় গুরুতর আহত হন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব স্টেশন বন্ধ থাকায় ট্রেনে যাতায়াতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এক সময়ের জমজমাট লংলা, টিলাগাঁও, মনু, ছকাপন ও ভাটেরা স্টেশনগুলো এখন অনেকটা নীরব। নেই কোনো কোলাহল বা যাত্রীদের প্রাণচাঞ্চল্য, আড্ডা। যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে স্টেশনগুলোতে।

টিলাগাঁও ইউপি’র চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালিক জানান, বৃটিশ শাসনামলে ডানকান ব্রাদার্সের বাগান ও এলাকার জনসাধারণের সুবিধার্থে টিলাগাঁও স্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল। বি-গ্রেডের স্টেশন টিলাগাঁওয়ে শুধু বাগানের মালামাল বুকিং করেই সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হতো। চা-বাগান বেষ্টিত রেল স্টেশনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানে এ স্টেশন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বেদখল হচ্ছে রেলের জমি।

সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের পরিবহন পরিদর্শক (টিআইসি) তৌফিকুল আজিম জানান, সারা দেশেই বর্তমানে স্টেশন মাস্টার সংকট রয়েছে। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অনেক স্টেশন মাস্টারের অভাবে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। নতুন স্টেশন মাস্টার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। নিয়োগ শেষে ট্রেনিংয়ের পর আগামী ডিসেম্বরের দিকে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন মাস্টাররা। আশাবাদী নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status