বাংলারজমিন
কুলাউড়ায় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ
আইসক্রিম বিক্রেতা আটক
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবারকুলাউড়ায় পপি সরকার (১২) নামে এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় সুরমান মিয়া (২৫) নামে এক আইসক্রিম বিক্রেতাকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল তাকে আটক করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের একটি বাড়ির পাশ থেকে পপির লাশ উদ্ধার করা হয়। পপি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের গুমগুমিয়া গ্রামের দিগন্দ্র সরকারের বড় মেয়ে। দিগেন্দ্র ৪ মাস ধরে উপেজেলার সুলতানপুর গ্রামের সাবেক শিক্ষক কামাল হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। জানা গেছে, সোমবার রাত ১২টার দিকে পপি তার মায়ের সঙ্গে ঘুমাতে যান। সাড়ে ৩টার দিকে আশুলতা ঘুম থেকে ওঠে দেখেন তার মেয়ে ঘরে নেই। এ সময় আশুলতা ও দিগেন্দ্র ঘরের জানালা খোলা এবং জানালার উপর বিস্কুট ঝুলানো রয়েছে দেখতে পান। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর সকাল ৯টার দিকে তাদের ঘরের পেছনে একটু দূরে গলায় ওড়না পেঁচানো ও মাটিতে উপুড় অবস্থায় পপির দেহ দেখতে পান। এ সময় পপির নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। পরে খবর পেয়ে দুপুরে কুলাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক মো. হারুনুর রশীদ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যান। পপির পিতা দিগেন্দ্র সরকার বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে তার মেয়ে পপিকে আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করে ওই এলাকার বাসিন্দা আইসক্রিম বিক্রেতা সুরমান মিয়া। সুরমান স্থানীয় ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকনের আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। আমি বিষয়টি থানায় অভিযোগ করতে চাইলে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন ও ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকন জোরপূর্বক বাড়ির মালিক (দিগেন্দ্র যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন) কামাল হোসেন চৌধুরীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সালিশি বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। বৈঠকে সুরমানের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা আমাকে দেয়ার সিদ্বান্ত নেয়া হয় এবং বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে এই মর্মে সাদা কাগজে আমাকে টিপসই দেয়ার জন্য বলেন ওই দুই ইউপি সদস্য। আমি বিষয়টি মানিনি। থানায় অভিযোগ করার চেষ্টা করি। তখন আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখায় সুরমান ও কাজল। এর জেরে সোমবার রাতে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে সুরমান ও কাজল আমার মেয়েকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। পরে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় কোনো সালিশি বৈঠক করা যায় না। আমি কোনো বৈঠকে ছিলাম না।’ হয়তো আইসক্রিম ফ্যাক্টেরির মালিক যিনি তিনি বৈঠক করতে পারেন। এদিকে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকন বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা সত্য নয়। দিগেন্দ্রর মেয়ে পপি মানসিক রোগী। সুরমান ওই এলাকায় আইসক্রিম বিক্রি করতে গেলে পপি তার কাছে আইসক্রিম চায়। তখন সুরমান তাকে আইসক্রিম দেয়নি। এ জন্য পপির মা ও বাবা মিলে সুরমানকে মারধর করে। বিষয়টি নিয়ে বাড়ির মালিক কামাল চৌধুরীর দোকানে স্থানীয় মেম্বার আব্দুল মতিনসহ আমরা পপির মা-বাবাকে নিয়ে বৈঠক করি।’ কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। থানায় পপির পিতা বাদী হয়ে সুরমান ও কাজলকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বিষয়টি পুরোপুরিভাবে জানা যাবে। ধর্ষণের ঘটনায় সালিশি বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো কী ঘটেছিল ওই বৈঠকে।