শেষের পাতা
মৃত্যুর আগে দেয়া গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর জবানবন্দি
স্টাফ রিপোর্টার
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
ভুক্তভোগী কিশোরীর বয়স ১৫। ছিলেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাকে পছন্দ করতো তার ফুপাতো ভাই ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার রাব্বি ইসলাম (২৩)। কিশোরী প্রত্যাখ্যান করে দেয় ফুপাতো ভাইয়ের সেই প্রস্তাব। নাছোড়বান্দা রাব্বি তখন তার পরিবারের মাধ্যমে কিশোরীর পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক না হলে কিশোরীকে বিয়ে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় তার পরিবার। পছন্দের মানুষকে না পাওয়ার আশঙ্কায় রাব্বি ক্ষিপ্ত হয় কিশোরী ও তার পরিবারের ওপর। সিদ্ধান্ত নেয় এই অপমাণের প্রতিশোধ নেবে। সুযোগ ও পরিকল্পনা করতে থাকে রাব্বি। বিষয়টি তার বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে। পরে একদিন রাতের বেলা রাব্বি ও তার বন্ধুরা ওত পেতে থাকে কিশোরীর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার হাজরাকান্দির বাড়িতে। রাতের বেলা ওই কিশোরী যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাহিরে আসে ঠিক তখনই রাব্বি ও তার বন্ধুরা তার মুখ চেপে ধরে নিয়ে যায় পাশের জঙ্গলে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কিশোরীকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। গণধর্ষণের পর বিষয়টি যাতে কাউকে কিশোরী না জানায় সেজন্য তাকে হুমকিও দেয় রাব্বি। মুখ খুললে তার পরিবারের কাউকে বাঁচতে দিবে না।
ধর্ষণের শিকার ও হুমকি পেয়ে আত্মহত্যা করে ওই কিশোরী। এই আত্মহত্যার ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীর পরিবার ও বিভিন্ন উৎস থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পায়। পরে ফরিদপুর সদর থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাব্বি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। সিআইডি জানায়, ২৩শে আগস্ট রাব্বি ও তার বন্ধুদের গণধর্ষণের শিকার হয়ে কিশোরী ঘরে থাকা ঘাস মারার ‘প্যারাকোট’ নামক বিষ পান করে গুরুতর অসুস্থ হয়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯শে আগস্ট তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে রাব্বি যা যা করেছে তার বর্ণনা দিয়ে যায়। ঘটনাটি ওই সময় দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এদিকে গ্রেপ্তারের পর রাব্বি নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জানায়, কিশোরী তার সৎ মামাতো বোন। তাকে খুব পছন্দ করতাম। এজন্য প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কিশোরী সেটি প্রত্যাখ্যান করে। পরে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও কিশোরীর বয়স হয়নি বলে তার পরিবার না করে দেয়।
তাই সে ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোরী ও তার পরিবারের ওপর প্রতিশোধ নিতে এমনটি করে। ঘটনার দিন রাতে আগে থেকেই বন্ধুদের নিয়ে কিশোরীর বাড়িতে অবস্থান করে। কিশোরী ঘরের বাইরে আসার পর পরই তার মুখ আটকে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। গণধর্ষণের বিষয়টি কাউকে বললে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের খুন করার হুমকি দেয় রাব্বি। সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, বখাটে যুবকদের দ্বারা গণধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়ে ঘরে থাকা ঘাস মারার ‘প্যারাকোট’ নামক বিষ পান করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তবে মৃত্যুর আগে জবানবন্দিতে তার সঙ্গে বর্বরতার কাহিনী বলে যায়। তার জবানবন্দি নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। পরে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় কিশোরীর মা বিউটি বেগম বাদী হয়ে রাব্বিকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা আরও দুইজনকে আসামি করে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়।