ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

মাইকে ঘোষণা দিয়ে রফিককে করা হলো একঘরে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার
mzamin

রফিক আহমদ। গোয়াইনঘাটের পাঁচসেউতি বাজারের চনা-পিয়াজুর দোকানদার। দোকানের আয় থেকে চলে তার সংসার। এরপরও অভাব-অনটন কাটছে না তার পরিবারে। পাঁচসেউতি বাজারের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিবদমান রয়েছে দুটি পক্ষ। এই দ্বন্দ্বে রফিক আহমদের অবস্থানও একদিকে। বাজারের স্বত্ব নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে নানা সময় দেখা দেয় উত্তেজনা। ঘটনা গড়ায় থানা পুলিশ পর্যন্ত। গোয়াইনঘাটের হর্তাকর্তা সবাই বাজারের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। গত ২রা সেপ্টেম্বর রফিকের দোকান আর চলে না। চনা-পিয়াজু নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকেন। কিন্তু তার দোকানে ক্রেতা নেই। কারণ, স্থানীয়দের মানা। ২রা সেপ্টেম্বর ছিল শুক্রবার। ওইদিন স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজের পরপরই মাইক হাতে নেন এলাকার প্রভাবশালী মুশাহিদ আলী। ঘোষণা দেন, রফিক আহমদের দোকানে সাত মৌজার কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সাত মৌজা থেকে নিষেধ দেয়া হয়েছে। কেউ ওই দোকানে প্রবেশ করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আবার রফিক আহমদ কারও দোকানে প্রবেশ করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এই ঘোষণার পর রফিক আহমদের দোকানে লোক সমাগম কমে এসেছে। একঘরে হয়ে গেছেন রফিক আহমদ ও তার পরিবার। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন পর বয়োবৃদ্ধ রফিক সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের দ্বারস্থ হন। রফিক আহমদের লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দেয়া হয় গোয়াইনঘাটের সহকারী পুলিশ সুপারকে।

 পরবর্তীতে সহকারী পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন স্থানীয় বিট কর্মকর্তা এসআই আক্তার হোসেনকে। তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তিনি ইতিমধ্যে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাষ্য গ্রহণ করেছেন অভিযোগকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিক আহমদের। এরপর তিনি অভিযুক্ত মুশাহিদ আলীর সঙ্গেও কথা বলেন। গতকাল বিকালে এসআই আক্তার হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘তদন্ত চলমান রয়েছে। আমি উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। পাঁচসেউতি বাজারে জমি নিয়ে তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজের পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণাকারী মুশাহিদ আলী নিজেও সেটি স্বীকার করেছেন।’ তিনি বলেন- ‘তদন্তের পর এ ব্যাপারে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’ এদিকে, অভিযুক্ত মুশাহিদ আলী জানিয়েছেন, ‘তিনি তার আত্মীয় স্বজনকে বিষয়টি অবগত করতে মাইকে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

 তবে, এটি কার্যকর নয়। সমাজবদ্ধ মানুষ হিসেবে আমরা কাউকে বিচ্ছিন্ন করতে পারি না। আমি এলাকার মানুষকে নিষেধ করিনি। নিষেধ করেছি আমার আত্মীয়স্বজনকে।’ তিনি বলেন, ‘রফিক আহমদ ও লোকজন বাজারের ভূমির মালিকানা দাবি করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। এলাকার মানুষও তাদের উপর ক্ষুব্ধ। এই বিরোধের কারণে এমনিতেই তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।’ এদিকে, রফিক আহমদ জানিয়েছেন, ‘এই ঘোষণার পর তার দোকানে বিক্রি কমে গেছে। এলাকার কেউ এসে ঢুকছে না। এতে আমি লোকসানে রয়েছি। আমিও ভয়ে কারও দোকানে প্রবেশ করছি না। এর বাইরে প্রকাশ্য মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়ার কারণে আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এজন্য পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেছি। পুলিশি তদন্ত শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে বলে জানান রফিক আহমদ।’  

 

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status