ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

উত্তরায় বিএনপি’র সমাবেশ, আওয়ামী লীগের শোডাউন উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার
mzamin

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে তিন নেতাকর্মী নিহতের প্রতিবাদে সারা দেশে সমাবেশ করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরের ১৬টি স্থানে অঞ্চলভিত্তিক প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি। আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ সমাবেশ। শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর অঞ্চল বিএনপি’র সমাবেশের মধ্যদিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। গতকাল উত্তরা এলাকায় উত্তরখান, দক্ষিণখান ও উত্তরাপূর্ব থানার নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। বেলা তিনটায় উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে তারা। তবে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি’র সমাবেশ করার কথা থাকলেও একই সময়ে পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সমাবেশস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও লাঠিসোটা হাতে সমাবেশ করেন। এতে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিব হাসান।‌ এদিকে বিএনপি’র সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকাতেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বিএনপি’র এ কর্মসূচি ঘিরে দুপুর থেকেই সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকায় ছিল অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন।

বিজ্ঞাপন
এ ছাড়া সমাবেশস্থলে যাওয়ার প্রবেশপথে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। তবে সমাবেশকে ঘিরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও সমাবেশে যেতে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সমাবেশে আসার সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তারা। 
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ৯০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এ দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। আজকে আবার সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নেমেছি।
তিনি বলেন, আজকে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেয়া হয়েছে। তাই বলে কি আওয়ামী লীগ আমাদের দমিয়ে রাখতে পেরেছে? সারা দেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। তাই নূরে আলম, আব্দুর রহিম এবং শাওন জীবন দিতে দ্বিধাবোধ করেনি। আজকে ঘোষণা করতে চাই আমরা কেউ প্রাণ দিতে দ্বিধা করবো না। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই। আমরা আমাদের বাঁচার অধিকার ফিরে পেতে চাই। আমরা আমাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই। আমরা একটি মুক্ত সমাজে বাস করতে চাই, আমরা একটি সমৃদ্ধ দেশে বাস করতে চাই। চোর, ডাকাত, আওয়ামী লীগ থেকে আমরা মুক্তি চাই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই জনগণকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন চলে, সংসার চলে অতএব, জনগণকে সম্মান করবেন। কথায় কথায় গুলি করবেন না। নূরে আলম, আব্দুর রহিম এবং শাওনকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমরা আন্দোলন করছি। প্রতিশোধ একটাই এদেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা।

ফখরুল বলেন, এই ব্যর্থ সরকার যারা দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তাদের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে, পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন কমিশন গঠন করে সমস্ত দলের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চাই। তাই আমরা করবো, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সারা দেশে গত ১৫ বছর ধরে এই আওয়ামী লীগ সরকার খুন করে, গুম করে, গুলি করে, নির্যাতন করে জনগণের যে অধিকার রয়েছে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। নাগরিক অধিকার আমার সাংবিধানিক অধিকার। এটা কোনো রাজতন্ত্র নয়, এটা কোনো পরিবারতন্ত্র নয়। জনগণকে অবশ্যই তাদের অধিকার পালন করতে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এইভাবে আজ ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে এই সরকার অবৈধভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রয়েছে। আবার নির্বাচন আসছে এখন এটা নিয়ে পাঁয়তারা শুরু করেছে। কী পাঁয়তারা, এখানে ইভিএম দিবে; আরে ইভিএম কিসের আমরা তো ভোটই মানি না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলছি এই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ আমরা দেখেছি তোমরা জনগণকে ভোট দিতে দাও না। জনগণের অধিকার প্রয়োগ করতে দাও না।

বিচার বিভাগের কাছে মানুষ ন্যায়বিচার পায় না জানিয়ে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ওপর অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। যে মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে এটা কোনো মামলাই নয়। ২ কোটি টাকার মামলা সেই দুই কোটি টাকার জায়গায় এখন ৮ কোটি টাকা হয়েছে। আজকে খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। সকল চিকিৎসকরা তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করার জন্য বলেছেন। কিন্তু এরা বাইরে যেতে দিতে চায় না। কারণ তারা খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। দেশনেত্রী যদি বাইরে চলে আসে তাহলে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো লাখ লাখ লোক বাইরে চলে আসবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। রিজার্ভ কমতে কমতে নিচে চলে আসছে। মানুষকে তারা সত্য কথা বলে না। যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে তিন মাসও চলবে না। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে যেটা আসে তা দিয়ে বৈদেশিক অর্থ অর্জন করতে পারি সেই টাকা তারা সব খেয়ে ফেলেছে। সাড়ে সাত কোটি টাকা ইডিএফের নামে নিজেদের লোকদের দিয়ে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছে। সমস্ত ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দিয়ে  সাধারণ মানুষের আমানত নিয়ে, সেই ব্যাংকগুলোকে খালি করে দিয়েছে। আজকে বলা হচ্ছে মানুষ ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখতে নিরাপদ বোধ করছে না সবাই টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি লোকেরা আজকে বিনিয়োগ করছে না কেন, কারণ এখানে অনেক ঘুষ দিতে হয়। পদে পদে ঘুষ দিতে হয় এখানে ব্যবসা করা যাবে না। এটা এই সরকার করেছে।
এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status