ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

শ্রমিকবেশে ৩৪ বছর চরমপন্থি মানিকের, অবশেষে ধরা

স্টাফ রিপোর্টার
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবার
mzamin

ছিলেন চরমপন্থি। থানায় হামলা চালিয়ে কনস্টেবল খুন করেন। ছিনিয়ে নিয়ে যান চরমপন্থি এক বন্দি আসামিকে। লুট করেন থানার অস্ত্রাগার। তারপর চলে যায় ৩৪ বছর। এ সময়টা তিনি সর্বহারা দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেন। নির্দিষ্ট কোনো পেশাও ছিল না। বেশির ভাগ সময় শ্রমিক সরদার  হিসেবে কাজ করতেন। ছদ্মবেশে থাকাকালীন নিজের নাম পরিবর্তন করে জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেন। তবে রেহাই মিলেনি।

বিজ্ঞাপন
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৪ বছর ধরে পলাতক আসামি চরমপন্থি সাইফুল ওরফে মানিককে (৫৬) গ্রেপ্তার করে। র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকা থেকে ছাত্তার নামে ছদ্মবেশে আত্মগোপন করা অবস্থায় সাইফুল ইসলাম ওরফে মানিককে গ্রেপ্তার করেছে। পরে গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৯৮৭ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার হাটের দিন সকাল ১১টার দিকে একদল চরমপন্থি ছদ্মবেশে লুঙ্গি, গামছা পরা অবস্থায় হাতে পোঁটলা নিয়ে হাটের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকেন। পোঁটলার মধ্যে তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র লুকানো ছিল।

 কিছু লোক অস্ত্র প্রদর্শন করে টেলিফোন অফিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেন্ট্রাল কমান্ড বিকল করে দেয় এবং কয়েকজন থানায় জিডি করার উদ্দেশ্যে থানায় প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে থানা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ সময়ে থানায় দায়িত্বরত কনস্টেবল হাবিবুর রহমান বাধা দিলে চরমপন্থিরা তাকে গুলি করে হত্যা করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরে থানার অস্ত্রাগার লুট করে দু’টি এসএমজি, চারটি এসএলআর, ১৮টি রাইফেল ও গোলাবারুদ লুট করে থানার লকআপে বন্দি চরমপন্থি আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য তারা একযোগে টেলিফোন অফিস ও থানা কম্পাউন্ডে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে তারা লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নাটোরের গুরুদাসপুর থানায় ১৯৮৭ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত শেষে সিআইডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০জন আসামি গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ৪৯ জনকে আসামি করে গুরুদাসপুর থানা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৭ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। আরিফ বলেন, ঘটনার শেষে মানিক তার বাড়িতে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন। 

১৯৮৮ সালে তারেকের নেতৃত্বে চাটমোহর থানার খোতবাড়ি এলাকায় মাঠের মধ্যে রাতে নকশালপন্থি এবং সর্বহারাদের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে নকশালপন্থির ১২জন নিহত হন। এ ঘটনার পর মানিকসহ সর্বহারা দলের সদস্যরা চলনবিলে গোসল করে যার যার বাড়িতে চলে যায়। ভোর হলে পুলিশ ১২টি মরদেহ উদ্ধার করে এবং থানায় মামলা হয়।  মামলায় মানিক গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুদাসপুর থানার অস্ত্র লুটের সত্যতা বেরিয়ে আসে। পরে মামলাগুলোতে জামিনে মুক্ত হয়ে মানিকের পলাতক জীবন শুরু হয়। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি আদালতে কোনো হাজিরা দেননি। থানা লুট ও ১২জনকে হত্যা মামলাসহ মানিকের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। র‌্যাব’র এই কর্মকর্তা বলেন, ১২জন হত্যা মামলার পর তারেকসহ চরমপন্থি দলের সদস্যরা চাটমোহর থেকে আত্মগোপন করে সিরাজগঞ্জে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে তারা তাদের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে মানিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে চরমপন্থি দলের সঙ্গে আবারও হত্যা, লুটপাট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন করে ত্রাস সৃষ্টি, অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে জমি দখল, পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা ইত্যাদি কাজে লিপ্ত ছিলেন। এ সময় মানিক তারেকের সঙ্গে নৌকায় বিলের মধ্যে অবস্থান করতেন। 

দলের কার্যক্রম শেষে তারা আবারও সশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় নৌকার মধ্যেই জীবনযাপন করতেন। ২০০৪ সালে চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে র‌্যাব’র সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে তারেকের নির্দেশে চরমপন্থিরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখন মানিক রাজধানীতে চলে আসে। রাজধানীতে কিছুদিন বাসের হেলপারি করে। ট্রাকে মালামাল লোড-আনলোডের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এরপর নারায়ণগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। ওই আত্মীয় তাকে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি দেয় এবং সবার কাছে তাকে ছাত্তার নামে পরিচয় করিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান স্তিমিত হলে তারা আবার মাঝে মাঝে এলাকায় গিয়ে সর্বহারা দলের কার্যক্রম চালাতে থাকে। ৭-৮ বছর আগে চরমপন্থি দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে তারেক নিহত হলে মানিক সর্বহারা দলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। রূপগঞ্জ এলাকার ভোটার হিসেবে নিজেকে ছাত্তার নামে প্রতিষ্ঠিত করে নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। বর্তমানে এ ঘটনায় জড়িত চরমপন্থি দলের সদস্যদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status