ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

চাকরি হারানো সেই পুলিশের স্ত্রীর কান্না

আমার সন্তানদের কীভাবে বাঁচাবো?

ফাহিমা আক্তার সুমি
২ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার
mzamin

আড়াই মাসের শিশু মায়ের কোলে অঝোরে কাঁদছে। অসহনীয় গরম ও ক্ষুধায় ছটফট করছে। ঠিকমতো ঘুম নেই শিশুর চোখে। তার মা তমা বেগমের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি তার সিজারের ব্যথা। সংসারের কথা চিন্তা করে নিজের শরীরের ব্যথা ভুলতে বসেছেন। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে দেখছেন অন্ধকার। অর্থের অভাবে পারছেন না      
নিজের ও সন্তানের চিকিৎসা করাতে। রাজধানীর ফার্মগেটে টিপ পরা নিয়ে নারীকে হেনস্তার ঘটনায় চাকরিচ্যুত হন পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক। তার স্ত্রী তমা বেগম দুইদিন ধরে সন্তানকে নিয়ে স্বামীর চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন।
তমা বেগম মানবজমিনকে বলেন, দেড় মাসের শিশুকে নিয়ে আমাকে রাস্তায় বসতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
মাত্র আড়াই মাস হলো সিজারের মাধ্যমে আমার সন্তান হয়েছে। স্বামীর চাকরি ফিরে পেতে দুই দিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। রোদ ও অসহনীয় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে আমার বাচ্চাটি। বাইরে থেকে ঠিকমতো ওকে খাবার ও গোসল করাতে পারছি না। পরিবারের অবস্থাও করুন। বড় মেয়েটি এখনো অনেক ছোট। তার পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমি সিজারের মানুষ। এখনো ঠিকমতো সেরে ওঠেনি, ব্যথা কমেনি। রাস্তায় ঝাঁকি লেগে বেশি ব্যথা শুরু হয়েছে। টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছি না। হঠাৎ আমার স্বামীর চাকরিটা এভাবে কেড়ে নিলো। আমার সন্তানদের এখন কি হবে? তাদের নিয়ে কীভাবো বাঁচবো? আমার স্বামী যদি কোন অন্যায় করে তাহলে তার বিচার হোক। 
। আমার স্বামী পুলিশে চাকরি করতো এখন না পারবে রিকশা চালাতে না পারবে অন্য কিছু করতে। বাড়িতে জমিজমাও নেই। আমাদের সংসার চলবে কীভাবে? তার অন্যকিছু করার অভ্যাস নেই। যারা চাকরিটা এভাবে খেয়েছে তাদের কি একটুও মায়া দয়া হলো না। এই ছোট্ট বাচ্চাদের নিয়ে এখন কীভাবে বেঁচে থাকবো। 

তমা বলেন, এই শিশুরা কি অন্যায় করেছে। বাসা ভাড়া ঠিকমতো দিতে পারছি না। কখনো ভাবিনি এভাবে চাকরিটা চলে যাবে। সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে বুক ফেটে যাচ্ছে। দেশে কোনো আইন নেই। সত্য বিচার কেউ করতে চায় না। একটা মানুষকে সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া কীভাবে অপরাধী বানানো যায়। আমার স্বামী অপরাধ করলে তাকে শাস্তি দিন। এভাবে আমার সন্তানদের কষ্ট দিয়েন না। এক কেজি চাল কিনতে গেলে টাকা শেষ হয়ে যায়। চাকরি চলে যাওয়ার পর আমার ছোট বাচ্চাদের কেউ একবার খবর নেননি। আমরা চাকরির বেতনে চলতাম। তাদের দুধের টাকাও যোগাতে পারছি না। কীভাবে এই শহরে থাকবো।  

পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক বলেন, আমি আমার বাবা-মা সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবো? আমার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দুই দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। আমার আড়াই মাসের সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি কর্মসূচি থেকে চলে এসেছি। আমি চেয়েছি সত্য তুলে ধরতে। দেশের জনগণ সত্য জানুক। চাকরির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো আশ্বাস দেননি আমাকে। আমি পরিবার নিয়ে মিরপুরে থাকি। ২০১১ সালে চাকরিতে যোগদান করি। সবকিছু মিলিয়ে মাসে ৩৮ হাজার টাকা বেতন পেতাম তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলতো। মাসে আঠারো হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিতে হয়। বড় মেয়েটার পেছনে প্রতিমাসে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। সে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। আমার আড়াই মাসের মেয়েটার জন্য দুধ কিনতে হয়। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খুব মানবেতর জীবন-যাপন করছি। এখন আমার কোনো ইনকাম নেই। গত মাসের ছয় তারিখে আমার স্ত্রীর সিজারে বাচ্চা হয়। সেখানে সব মিলিয়ে এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখনো স্ত্রীর সিজারের জায়গা পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। আমার বাচ্চাটিও অসুস্থ ছিল। তার জন্ডিস ধরা পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। 

তার পেছনেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। যা কিছু নগদ টাকা ছিল তা সহ আরও ধার দেনা করে স্ত্রীর সিজারের পেছনে খরচ করেছি। যেদিন আমার চাকরি চলে যায় সেদিন আমার পকেটে দশ টাকা ছিল। হঠাৎ আমার চাকরিটা চলে যায়। আমার একার ইনকাম দিয়ে পরিবারের সাত জনকে দেখতে হয়। এমন কোনো টাকা জমানোও ছিল না। এখন ভিক্ষা ছাড়া টাকা আয়ের কোনো উপায় নেই। বাবা-মা বয়স্ক। তারা সবসময় অসুস্থ থাকে। ছোট ভাই-বোনকেও আমার দেখতে হয়। আমি একা আয়ের উৎস। আমার গ্রামের বাড়ি যশোর। আমাকে এখন ঢাকা থেকে চলে যেতে হবে। বাসা ভাড়া বাকি আছে। এটি দিয়ে চলে যাবো। বাড়িতে গিয়ে যে কিছু করে খাবো সেটির কোনো উপায় নেই। জমিজমা নেই শুধু ঘরে তিনটা রুম আছে। চাকরি থাকা অবস্থায় এই শহরে টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হয়েছে আর এখন ব্যয়বহুল শহরে কীভাবে থাকবো। আগে বাবা-মায়ের অসুস্থার জন্য সরকারি ওষুধ পেতাম এখন কিনে দিতে হচ্ছে। আমি এখন বয়স্ক বাবা-মা ও সন্তানদের নিয়ে কি করবো, কোথায় যাবো? 
উল্লেখ্য, ২রা এপ্রিল রাজধানীর গ্রীন রোডের বাসা থেকে কলেজে যাওয়ার পথে হেনস্তার শিকার হন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। এ ঘটনায় ওইদিনই তিনি শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এর ভিত্তিতে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কনস্টেবল নাজমুল তারেককে শনাক্ত করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও প্রোটেকশন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status