প্রবাস
ফ্রান্সে প্রবাসীদের পাসপোর্ট জটিলতা
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মসূচি প্রত্যাহার
আব্দুল মোমিত (রোমেল) ফ্রান্স থেকে
(১ বছর আগে) ২৯ আগস্ট ২০২২, সোমবার, ৫:৩১ অপরাহ্ন
পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে ভুক্তভোগী প্রবাসীরা। গত শুক্রবার বিকেলে দূতাবাসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ফ্রান্সের ভুক্তভোগী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে সরে আসে। দীর্ঘদিন থেকে ফ্রান্সে বসবাসরত হাজারো অনিয়মিত প্রবাসী পাসপোর্টের জন্য বৈধ হতে পারছেন না বলে অভিযোগ করে আসছেন। ফ্রান্স সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বয়স সংশোধনকে কেন্দ্র করে ঘনীভূত হতে থাকা প্রবাসীদের সমস্যার প্রেক্ষিতে ফ্রান্স বাংলাদেশ দূতাবাস গত শুক্রবার এ বৈঠকের আয়োজন করে।
ভুক্তভোগী প্রবাসীরা প্রবাস জীবনে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা এবং নানা জটিলতায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরে আটকে থাকা হাজারও প্রবাসীর আবেদনের কথা উল্লেখ করেন বৈঠকে। তারা জানান, কেউ নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। কেউ সংশোধন চেয়েছেন। বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পর ওইসব দেশে বৈধভাবে অবস্থানের সুযোগ পেলেও পাসপোর্ট না থাকায় দেশে আসতে পারছেন না এই প্রবাসীরা। জটিলতা নিরসনের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগও নেই।
ফ্রান্সে এ রকম ৩/৪ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন পাসপোর্ট জটিলতায়। পাসপোর্ট না পেয়ে চরম দুর্ভোগ এবং হতাশায় নিমজ্জিত রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। দেশে অনেকের পরিবার ঋণগ্রস্ত। অনেকের বাবা-মা গুরুতর অসুস্থ। কারো কারো মা-বাবার মৃত্যু ঘটেছে দেখারও সুযোগ পায়নি। পাসপোর্ট না থাকায় বৈধ পথে তারা রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না। অনেকে কাজ-কর্ম হারিয়ে দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছেন। এর প্রভাব পড়ছে দেশে থাকা পরিবারের ওপর। অভাবের কারণে অনেকের ছেলেমেয়ে ও ছোট ভাইবোনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে । রাষ্ট্রদূত প্রবাসীদের দুঃখ কষ্টের অভিযোগগুলো মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন এবং পাশাপাশি তিনি এটাও ব্যাখ্যা করেন যে দূতাবাস বা তার পক্ষে ভুক্তভোগী প্রবাসীদের পাসপোর্ট দেয়ার সক্ষমতা নেই। পাসপোর্টের আবেদন দূতাবাস গ্রহণ করে এবং সেগুলো ঢাকাতে প্রেরণ করার পর পাসপোর্ট অধিদপ্তর এই- পাসপোর্ট দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ফ্রান্সে যারা পাসপোর্ট জটিলতায় ভুগছেন বা পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য দাবি করছেন এই দাবিটি তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করা সরকারের নির্বাহী আদেশ ছাড়া সম্ভব না। তবে পাসপোর্ট প্রাপ্তি সংক্রান্ত জটিলতা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে তুলে ধরার আশ্বাস দেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা।
তথ্য সংশোধন জটিলতায় পাসপোর্ট না পাওয়ার বিষয়টি বৈঠকে উপস্থিত প্রবাসীরা রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি ফ্রান্স আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ কাশেম এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কয়েছ প্রবাসীদের সান্ত্বনা দেন এবং আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আসছেন এবং তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন এবং সমাধানের জন্য তাদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন । বৈঠকে উপস্থিত একজন পাসপোর্ট ভুক্তভোগী তার দুঃখ কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বলেন, তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। এসব কথা বলতে গিয়ে ঐ ভুক্তভোগীর কান্না থামছিল না তাই তাকে সান্তনা দিতে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাৎক্ষণিকভাবে দূতাবাসের হেড অফ চ্যান্সারি ওয়ালিদ বিন কাসেম। এসময় উপস্থিত সবার চোখের পানি ঝরে পড়ছিল এবং ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
দূতাবাসের হেড অফ চ্যান্সারি ওয়ালিদ বিন কাসেমে এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় এসময় রাষ্ট্রদূত তালহা উপস্থিত প্রত্যেক ভুক্তভোগীর কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং পাসপোর্ট প্রদান প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের আইনি সীমাবদ্ধতা পূনর্ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, প্রবাসীদের পাসপোর্ট সমস্যার কথা দূতাবাস নিয়মিতভাবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করে। রাষ্ট্রদূত তাদের ভোগান্তির কথা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পুনরায় তুলে ধরবেন মর্মে আশ্বাস দেন। এসময় দূতাবাসের সকল কর্মকর্তার পাশাপাশি ফ্রান্সের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীবৃন্দ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ২৯ আগস্ট ভুক্তভোগীরা বিক্ষোভ মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিলে সেই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিবাদ তারা করতে পারে তিনি বাধা দেবেন না। প্রবাসীরা রাষ্ট্রদূতকে বারবার অনুরোধ করেন তাদের এই পাসপোর্ট জটিলতার নিরসন দ্রুত সময়ের মধ্যে করার জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করার জন্য। কারণ ইতালিতে এই-পাসপোর্টের বিক্ষোভে দূতাবাসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ফ্রান্সে এমন ঘটনা এড়ানোর জন্যই তারা চেষ্টা করছেন এবং কর্মসূচি থেকে সরে এসেছেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।