প্রবাস
মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসা প্রতারণার শিকার: দেশে ফেরার সময় মারা গেল বাংলাদেশি আলহাজ
আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া থেকে
(১০ মাস আগে) ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৯:০৫ অপরাহ্ন
সোনালী সুদিনের আশায় ধারদেনা করে ২০২৩ সালের শেষের দিকে কলিং ভিসায় কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় আসেন টাঙ্গাইলের মো: আলহাজ (২১)। এক বছর যেতে না যেতেই লাশ হয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাকে।
জানাগেছে, আলহাজ মারা যান গত ২৬ মার্চ। পাসপোর্ট অনুসারে, তার বাড়ি টাংগাইল জেলার ঘাটাইল থানার ১১ নম্বর ধলাপাড়া ইউনিয়নের গাংগাইর গোনাপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো: মজনু মিয়া। তার পাসপোর্ট নম্বর B00500116 এবং তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০ মার্চ। গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এনওসি সার্টিফিকেট ইস্যু হওয়ায় ধারনা করা হচ্ছে, আগামী দুদিনের মধ্যে লাশ বাংলাদেশে থাকা তার পরিবারের কাছে পৌঁছাবে।
এ বিষয়ে মৃত মো: আলহাজের দেশের বাড়ির এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসি মো: রমজান আলী দৈনিক মানব জমিনের মালয়েশিয়া করেসপন্ডেন্ট মো: আরিফুল ইসলামকে জানিয়েছেন; আকাসিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ (কেলান্তন) এসডিএন বিএইচডি নামে একটি রাবার কোম্পানিতে কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় আসার পর ছয় মাস ধরে কোনো কাজ পায়নি আলহাজ মিয়া। অনেক চেষ্টার পরে বাধ্য হয়ে পালিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় কাজ করতে থাকলে আকাসিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ (কেলান্তন) এসডিএন বিএইচডি নামীয় কোম্পানি তাকে ব্লাকলিষ্ট করে। ফলে পরের বছর তার ভিসা আর রিনিউ হবে না ভেবে দেশে যাওয়ার জন্য পুত্রাজায়া ইমিগ্রেশনে পৌঁছে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাকে প্রথমে একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয় পরে তার অবস্থার অবনতি হলে, তাকে কাজাং হাসপাতালে নেয়া হলে সেদিন রাতেই হাসপাতালে মারা যান আলহাজ।
মারা যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রমজান আলী আরো জানিয়েছে, কিছুদিন আগে থেকেই অসুস্থ ছিলো সে। হাসপাতালের ডাক্তার তাকে জানিয়েছে, তার পুরুষাঙ্গ ফেটে মারা গেছে মো: আলহাজ। কিভাবে তার পুরুষাঙ্গ ফাটলো, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
আলহাজ মারা যাওয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) শরিফুল ইসলাম বলেন, মো: আলহাজ মিয়ার লাশ কাজাং হাসপাতালে পড়ে থাকার খবর পেয়ে আমরা আকাসিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ কেলান্তন নামীয় কোম্পানিতে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করেছি। তার লাশ দ্রুত দেশে ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে যাবতীয় অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া আলহাজের ইন্স্যুরেন্সের টাকা যাতে পায়, সেজন্য ওই কোম্পানি থেকে ডকুমেন্টস ও প্রয়োজনীয় তথ্যদি সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে আমাদের মালয়েশিয়া প্রতিনিধি, উক্ত আকাসিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ (কেলান্তন) এসডিএন বিএইচডি নামীয় কোম্পানির +6019-636 9061 নাম্বারের যোগাযোগ করলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি বলে জানিয়েছেন।
এমতবস্থায়, তার লাশ দেশে পাঠাতে প্রয়োজন প্রায় ৪৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত যা, বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ টাকারও বেশি। তার পরিবার পরিজন ও তার মায়ের আকুতি মিনতির পর মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন তার স্বদেশীয় মালয়েশিয়া শাখার যুবদল নেতা মো: রমজান আলী।
এ বিষয়ে মো: রমজান আলী বলেন, কাজাং হাসপাতালে লাশটি ২৭ দিন পড়ে থাকার পর তার পরিবারের অনুরোধে আমার দল ও প্রবাসীদের সহযোগিতায় লাশটি দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্ততি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে অর্ধেক টাকা (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট ২১০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত) সংগ্রহ হয়েছে এবং বাকি টাকা সংগ্রহের জন্য সকল প্রবাসীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কেউ সাহায্য করতে চাইলে হোয়াটসঅ্যাপ +60166014401 এই নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলো।