ঢাকা, ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রবাস

মালয়েশিয়ায় বর্ণীল আয়োজনে 'বাংলাদেশ উৎসব' উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার, কুয়ালালামপুর

(২ দিন আগে) ২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৮:২৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩৭ অপরাহ্ন

mzamin

জমকালো আয়োজন এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশ উৎসব’ উদযাপন করেছে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন। গতকাল কুয়ালালামপুরের ক্রাফট কমপ্লেক্সে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সুমধুর গান, দৃষ্টিনন্দন নাচ, ফ্যাশন শো এবং ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবারের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় এ বর্ণিল আয়োজনে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রিকশাসহ অন্যান্য দেশীয় কারুপণ্য দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠানস্থল। এছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার উপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। হাই কমিশনার মোঃ শামীম আহসান ও তাঁর সহধর্মিণী পেন্ডোরা চৌধুরী আমন্ত্রিত অতিথিদের বরণ করে নেন এবং সকলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

টুরিজম, আর্টস এবং কালচার মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ইয়াং বারবাহাগিয়া দাতো শাহারুদ্দিন বিন আবু সহত তার বক্তৃতায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক চমৎকার সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার মত বাংলাদেশও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ও বহু জাতি-গোষ্ঠীর দেশ। ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভাল’ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত সমাজের চিত্র তুলে ধরেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি বাংলাদেশের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

হাইকমিশনার শামীম আহসান তাঁর বক্তৃতায় শুরুতে ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ‘২৪ এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সকল শহিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বীর যোদ্ধাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। এছাড়া তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্ণিল উৎসবের দেশ। আমরা আমাদের বিশ্বাস, জীবন, স্বাধীনতা, প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং অর্জনগুলি বছরব্যাপী বিভিন্ন মেলা এবং উৎসবের মাধ্যমে উদযাপন করি, যা প্রচুর উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে আয়োজিত হয়। হাই কমিশনের কূটনীতির অংশ হিসাবে আমাদের বিশিষ্ট বিদেশী বন্ধুবান্ধব এবং প্রবাসীদের নিয়ে এ উৎসব আয়োজন।

তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথের পরপরই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. আনোয়ার ইব্রাহীম প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান এবং প্রথম সরকার প্রধান হিসাবে বাংলাদেশ সফর করেন। বিপ্লব-পরবর্তী প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে ৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব এবং “নতুন বাংলাদেশ”-এর জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থন প্রদর্শন করে। এবছরই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়ায় ফিরতি সফরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে হাইকমিশনার জানান।
তিনি বলেন, একজন কূটনীতিক হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে সংস্কৃতি দেশ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বৃহত্তর বোঝাপড়া তৈরি করতে এবং তাদের মধ্যে ভুল ধারণা দূর করতে একটি অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও ঐতিহাসিক বন্ধনের উপর ভিত্তি করে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ কওে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্বালানি, পর্যটন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করেছে।

আলোচনা সভার পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, প্রবাসী বাংলাদেশী ও হাই কমিশন পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী মেহরিন এর পরিবেশনা অনুষ্ঠানে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। এ সময় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে ঐতিহ্যবাহী রকমারী বাংলাদেশী খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে কর্মরত দুজন পেশাদার শেফ কর্তৃক রান্না করা খাবার, বিশেষত ‘স্মোকড ইলিশ’ বিদেশী অতিথিদের দ্বারা প্রশংসিত হয়।

অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে স্থাপিত বাংলাদেশ কর্নার, রিকশা, ফুচকা, চা ও ঝাল-মুড়ির স্টল এবং পিঠা ঘর উপস্থিত বিদেশী অতিথিবৃন্দের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। এছাড়া বাংলাদেশি প্রখ্যাত কোম্পানি প্রাণ, মৈত্রী এবং হোপ তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে এবং ন্যাশনাল ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক রেমিট্যান্স হাউজ বুথ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের সেবা প্রবাসীদের অবহিত করে। এছাড়া সুসজ্জিত ‘বাংলাদেশ কর্নারে’ ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, রপ্তানিযোগ্য পণ্য ও হস্তশিল্প প্রদর্শন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ক প্রকাশনা কর্নারে স্থান পায়, যা অতিথিদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে। ক্রাফট কমপ্লেক্সকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অনেক অনুসঙ্গ দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়, যা সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সকলের মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি করে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পর্যটন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিনিয়োগ এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার উপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় মালয়েশিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল-কে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানির ফ্রেম উপহার দেওয়া হয়।

মালয়েশিয়া টুরিজম, আর্টস এবং কালচার মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ইয়াং বারবাহাগিয়া দাতো শাহারুদ্দিন বিন আবু সহত অনুষ্ঠানে “গেস্ট অব অনার” হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, কুয়ালালামপুরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিপুল সংখ্যক কূটনীতিক ছাড়াও শিক্ষাবিদ, প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক এবং হাই কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।

প্রবাস থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রবাস সর্বাধিক পঠিত

১০

ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা শেষে সালাহ উদ্দিন আহমেদ/ সংবিধানে ৭১’র সঙ্গে ২৪’কে একই কাতারে আনা সমুচিত নয়

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status