ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

অস্থিরতার মধ্যেও ইউরোপে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

চলমান অস্থিরতার মধ্যেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি) ২৭ দেশের জোট ইইউতে ৮০৭ কোটি (৮.০৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ৬.৫১ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অফিস (ইউরোস্ট্যাট) এই তথ্য দিয়েছে। সোমবার এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এই বাজার থেকে।

নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও বড় বড় বাজারে রপ্তানি বাড়ায় খুবই খুশি এ খাতের রপ্তানিকারকরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি অর্থাৎ ট্রাম্প শুল্কের ধাক্কা এবং ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ শেষ পরিণতি কী হবে, তা নিয়েই এখন চিন্তিত সবাই।

পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে গত বছরের শেষদিকে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ কমে গিয়েছিল। ২০২৪ সালের নয় মাস (জানুয়ারি- সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ২.০৬ শতাংশ নেতিবাচক (ঋণাত্মক) প্রবৃদ্ধি ছিল। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ইউরাপের বাজারে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ২০২৩ সালের একই সময়ের চেয়ে ২.০৬ শতাংশ কম আয় করেছিলেন। আর তাতে রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। তবে বছরের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) রপ্তানি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। ২০২৪ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে মোট ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ১২ লাখ (১৯.৭৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। আগের বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৫৭ লাখ (১৮.৮৫ বিলিয়ন) ডলার।

ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈশ্বিক পোশাক আমদানিতে ১৪.২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২.৪৯ বিলিয়ন ডলার। পরিমাণের দিক থেকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৮৪ শতাংশ, তবে গড় ইউনিট মূল্য ১.৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়াও ইইউতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়কালে ইইউতে চীনের রপ্তানি ২১.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৩৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ইউনিট মূল্য ৭.৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে তুরস্কের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। দেশটির ইইউতে রপ্তানি ৫.৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩.১০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ভিয়েতনামের রপ্তানি ১৫.৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৪৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং ইউনিট মূল্য ৫.৬৮ শতাংশ বেড়েছে।

ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়া যথাক্রমে ২.০১ বিলিয়ন, ১.৪২ বিলিয়ন ও ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। যার প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২০.৫৮ শতাংশ, ২৩.৪২ শতাংশ ও ৩১.৭৮ শতাংশ।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ইইউ বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষ করে ইউনিট মূল্যে বাড়তি আয় একটি ইতিবাচক দিক হলেও চীন এখনও এগিয়ে এবং ভিয়েতনামও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ৩০শে জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানি করে ৩৬.৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১৯.৬২ বিলিয়ন ডলার। আর ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৬.৯৪ বিলিয়ন ডলার।

অস্থিরতার মধ্যেও ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরপরও রপ্তানি আয় বাড়ায় আমরা খুশি। ২০২৫ সালটা ভালোই শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে আমরা নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অনেক পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস সংকট লেগেই আছে। অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা না থাকলে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়তো। তবে এই ধারা টেকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে হাতেম বলেন, জানি না আগামী মাসগুলোতে কী হবে? বিশ্বজুড়ে রীতিমতো বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে ঝড় তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ। এ সবের পরিণতি কী হবে, তা আমরা পরিষ্কার কিছুই বুঝতে পারছি না।

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইইউ বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে হলে আসন্ন ইইউ নিয়মনীতি অনুসরণ করে কৌশল গ্রহণ করা এবং উৎপাদন সক্ষমতা উন্নয়ন জরুরি। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status