প্রথম পাতা
হাসপাতালে হিমশিম
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২৫ জুন ২০২৫, বুধবার
সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হু হু করে বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীর অধিকাংশই জ্বর, বমি ও শরীরে ব্যথা নিয়ে আসছেন হাসপাতালে। রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ আগের মাসের তুলনায় বাড়ছে দ্বিগুণের বেশি। জুন মাসে মারাও গেছেন ১১ জন। রাজধানীর হাসপাতালগুলোর রোগীর বড় অংশ আসছে ঢাকার বাইরে থেকে। ঢাকার বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩১০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৭০ জন। বাড়তি রোগীর সামাল দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। আগের মাসের তুলনায় জুন মাসে রোগী হয়েছে দ্বিগুণের বেশি।
রাজধানীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে শয্যার চেয়ে বেশি রোগীর সেবা দিচ্ছে।
এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন ৩৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বরিশাল ও ঢাকায় এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায়ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে এসময়ে কারও মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৮ জন, ঢাকা বিভাগে অন্যান্য জেলায় ৩৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৪ জন, খুলনা বিভাগে ৮ জন রয়েছেন। গত ১লা জানুয়ারি থেকে ২৪শে জুন পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ২ শতাংশ নারী। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩৪ জন মারা গেছেন। মৃত্যুর দিক থেকে নারী- পুরুষ সমান সমান। জুন মাসের ২৪ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ১৯৯ জন এবং মারা গেছেন ১১ জন। আগের মাসে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭৭৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩ জন। ২০২৩ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫৭৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ লাখ এক হাজার ২১৪ জন।
ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ২০ শয্যার আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে ৭২ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত মাসে এই হাসপাতালে রোগী ছিলেন ৩৩ জন। জুনের শুরু থেকে রোগী বাড়ছে।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, শয্যা সংকট, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি ও অতিরিক্ত রোগীর চাপ সব কিছু মিলিয়ে হাসপাতালগুলোর সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, অনেক সময় এক শয্যায় দুই রোগীকে রাখতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো সেবা দিতে। তবে এই চাপ আরও বাড়লে সামাল দেয়া কঠিন হবে। ঢামেক হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডের এক নার্স বলেন, তিনদিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। পুরনো রোগী ছাড়তে না পারায় নতুনদের জায়গা দিতে পারছি না। একই অবস্থা রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে। বর্তমানে ২০ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ জন। এর আগের মাসে একজন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ডেঙ্গু বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার উৎস মূলত প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, ফুলের টব, নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ কিংবা ড্রেনে জমে থাকা পানি। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, বর্ষা শুরুর আগেই ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশার লার্ভা ধ্বংস, নিয়মিত ফগিং এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম না চালালে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এবার যেভাবে মৌসুমের শুরুতেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তার মতে, শুধু হাসপাতালভিত্তিক প্রস্তুতি নয়, বরং কমিউনিটি লেভেলে মশা নিয়ন্ত্রণ ও বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখা এখন সবচেয়ে জরুরি। তা না হলে পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।