প্রথম পাতা
ইসিতে নিবন্ধন
১৪৭ দলের আবেদন, যোগ্য কয়টি?
মো. আল-আমিন
২৫ জুন ২০২৫, বুধবার
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য ১৪৭টি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই অপরিচিত ও নামসর্বস্ব। এমনও দল রয়েছে, যাদের কোনো কার্যকরী কমিটিও নেই। সেইসঙ্গে নেই কোনো কেন্দ্রীয় কার্যালয়। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেনি এমন দলও রয়েছে বেশ কয়েকটি। বিশ্লেষকরা বলেছেন, নানারকম আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য এবং সমাজে ব্যক্তিগত প্রভাব বাড়াতে এসব দল গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া বড় দলের সঙ্গে সমঝোতা করে সুবিধা বাগিয়ে নিতেও অনেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন।
ইসিতে নিবন্ধন চেয়ে গত ১৭ই এপ্রিল আবেদন করেছে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান মো. শিপন ভূঁইয়া পেশায় চশমা ব্যবসায়ী। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, জনগণের খেদমত করতে দল গঠন করেছি। নিবন্ধন পাবো কিনা জানি না। এখন পর্যন্ত দুই জায়গায় অফিস নিতে পেরেছি। ঢাকার প্রধান কার্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্টোর রুমের ঠিকানা প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেছি। এছাড়া দলটি কবে গঠন করা হয়েছে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি। নিবন্ধনের শর্ত না মেনেই আবেদন করা আরেকটি দল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ফেডারেশন। দলটির সভাপতি সিপনচন্দ্র সিং বলেন, আমরা ১৭-১৮টি জেলায় কমিটি দিতে পেরেছি। সবমিলিয়ে ৩৯টি জেলা-উপজেলায় কমিটি দিতে পেরেছি এবং ভোটার তালিকা দিতে পেরেছি। হেয়ারিংয়ের সময় আমরা বাকি শর্তগুলো পূরণ করার তথ্য ইসিতে জমা দেবো।
এদিকে গত ১২ই মার্চ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টি (বিএনএলপি)। নির্ধারিত ফরমে আবেদন না করে সাদা কাগজে আবেদন করেছে দলটি। দলটির সভাপতি মো. আবু তাহের খন্দকারের কাছে দলের কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহত্তর রংপুর বিভাগ নিয়ে আমরা কাজ করি। আমাদের ৮টি জেলায় কার্যক্রম রয়েছে, ২১টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা বা কমিটি দেয়ার মতো সক্ষমতা নেই। আমার বড় ভাই সংগঠনটি দাঁড় করেছিল। আমরা সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা নির্ধারিত ফরমে আবেদন করিনি। এছাড়া ন্যাশনাল লেবার পার্টি (এনএলপি) আবেদনের সবগুলো শর্ত পালন না করেই আবেদন করেছে। তারা ৮৭টি উপজেলার তথ্য দিয়েছে। এ বিষয়ে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, বাস্তবতা হলো- আমরা এখনো পুরো উপজেলায় কাজ করতে পারিনি। তবে কাজ চলমান আছে। ৮৭টি উপজেলা এবং ২০টি জেলায় কমিটি দিতে পেরেছে এখন পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবেদন করা অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সম্পূর্ণ শর্ত মেনে আবেদন করেনি।
ওদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে। প্রথমত, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে বিজয়; দ্বিতীয়ত, ওইসব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের পাঁচ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি; তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকতে হবে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় জেলা অফিস থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় অফিস থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবে। দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তা যাচাই-বাছাই শুরু করবে। নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে পারলে দলীয় প্রতীকসহ নিবন্ধন সনদ দেবে।
এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে নিবন্ধন করতে চায়। তবে বেশির ভাগ দলই রাজনৈতিক দলের দোকান খুলে বড় দলের আশ্রয়ে দুই-একটি আসন বাগিয়ে নিতে চায়। এছাড়া অনেকে আলোচনায় আসতেও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। মিডিয়াতে আসলে তারা সেগুলো আত্মীয়-স্বজনকে দেখায়।
এদিকে রেকর্ডসংখ্যক দলের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলীম বলেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করার কথা বলা হচ্ছে। এমনও হতে পারে এই সময়ে নির্বাচন কমিশনের উপরে একটি চাপ প্রয়োগ করার জন্য এত আবেদন করা হচ্ছে। কেননা আবেদন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ। আবার এটা নাও হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১৫ বছর নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলনের মতো কিছু রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পায়নি। তারা এতদিন রাজনীতি চর্চা করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে এখন যেহেতু একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এজন্য অনেক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তিনি আরও বলেন, অনেক রাজনৈতিক দলই আছেন যারা নিবন্ধন নিয়ে বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে দুই-একটি সিট নিতে চায়। অনেক সময় নির্বাচন থেকে সরে গেলেও টাকা আয় করা যায়। এজন্য অনেক রাজনৈতিক দল গঠন করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
পাঠকের মতামত
দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার জন্যা আবেদন করার অধিকার আছে বলে তামাশা করার বিষয় নয়।
নাম সর্বস্ব দলের আবেদন নারীরা কমিশন কে উপহাসের পাত্র বানাচ্ছে, পরিকল্পিত কিনা আইনের আওতায় আনা দরকার।