ঢাকা, ২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

তৎপর রাশিয়া শেষ দেখবে ইরান

মানবজমিন ডেস্ক
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। কেউ জানে না এই যুদ্ধের শেষ কোথায়? উভয় পক্ষের হামলাই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সোমবার দিনভর ইসরাইলকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে দেশটির একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বেশ কয়েকটি এলাকা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে তেল আবিবের বহু ভবন ও সড়কে আছড়ে পড়ছে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র। পক্ষান্তরে ইরানের একাধিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ইসরাইলি হামলার খবর পাওয়া গেছে। তেল আবিব দাবি করেছে তারা ইরানের ৬টি বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এ লড়াই সহসাই থামবে এমন লক্ষণ নেই। ইরান জানিয়েছে, তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের শেষ দেখে ছাড়বে তারা। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদে বলেছেন, যত সময় লাগুক এ লড়াই চালিয়ে যাবে ইরান। এদিকে তেহরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইরানের জনগণকে সরাসরি সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলা অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্টের কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। চিঠিতে রাশিয়া যেন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নেয় সে বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি বলেছে, ইরানকে  কোনোভাবেই পারমাণবিক কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে না। ইরান জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া তাদের অধিকার। এ ছাড়া তেহরানে পরমাণুকেন্দ্রগুলোতে মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের জন্য জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্থগিতের কথা বিবেচনা করছে ইরান। এ বিষয়ে দেশটির পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বহু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলছেন, একতরফাভাবে এমন হামলার ফলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ন্যায্যতা  পেয়েছে ইরান। এদিকে হরমুজ প্রণালিতেও শুরু হয়েছে উত্তেজনা। তেল ও গ্যাসবাহী একাধিক জাহাজ রুট পরিবর্তন করে গন্তব্যে গিয়েছে বলে খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। বিশ্ববাজারে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে নিজ নাগরিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বিশেষ করে কাতারে অবস্থিত মার্কিন নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে দেশটি। এদিকে সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের একটি এলাকায় মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলার খবর পাওয়া গেছে। যদিও কারা বা কোথা থেকে এই হামলা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

পুতিন-আরাঘচি বৈঠক, ইরানের জনগণকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার দেশ ইরানের জনগণকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে চালানো আগ্রাসন ভিত্তিহীন ও অন্যায্য। সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে এক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি। ইরানের পক্ষে রাশিয়ার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন পুতিন। বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের অবস্থান সকলেরই জানা আছে। যা রাশিয়ার পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার ব্যক্ত করেছে। এর আগে এক বিবৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কঠোর নিন্দা জানায় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবিলম্বে যুদ্ধ ও শত্রুতা বন্ধ করে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানায় তারা। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানানোর জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানান। আরাঘচি বলেন, ইতিহাসের সঠিক অবস্থানের পক্ষে রয়েছে রাশিয়া। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শুভেচ্ছা পুতিনকে পৌঁছে দেন আরাঘচি। 

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পুতিনকে খামেনির চিঠি: যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ইরানের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি চিঠিটি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এটি পুতিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কিনা তা এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে- সূত্র জানিয়েছে, এখনো মুগ্ধ হওয়ার মতো রুশ সমর্থন পায়নি ইরান। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এতে ইরান চায় ইসরাইল ও মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে আরও কিছু করুক পুতিন। যদিও খামেনি কেমন সহায়তার কথা জানিয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সূত্রটি। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আরাঘচি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট নিরসনে ইরান ও রাশিয়া একে অপরকে সহযোগিতা করছে। 

জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্থগিত করতে পারে ইরান: জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-এর সঙ্গে চুক্তি স্থগিত করতে পারে ইরান। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে দেশটির পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। সংস্থার অপেশাদার আচরণের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করতে পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, রোববার পার্লামেন্ট অধিবেশন চলার সময় আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি বাতিল সংক্রান্ত একটি বিল তৈরির প্রস্তাব দেন এমপিরা। সেই প্রস্তাবে সায় দিয়ে কালিবাফ বলেন, এই আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে যত দিন আমরা পেশাদার আচরণের নিশ্চয়তা না পাবো, ততদিন সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত রাখা উচিত।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা হতে পারে: ইরানের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদে বলেছেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, সে সিদ্ধান্ত ইরান নিজের মতো করেই নেবে। আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে খাতিবজাদে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ইরানের হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, কখন, কীভাবে এবং কোন মাত্রায় আমেরিকানদের জবাব দেয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত ইরান নেবে। ফরদোর মতো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে তিনি আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন ও ভয়াবহ ভুল বলে অভিহিত করেন।

সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা: সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ। এতে বলা হয়, সিরিয়ার আল-হাসাকাহ প্রদেশে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে কোথা থেকে কারা এই হামলা চালিয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি বার্তা সংস্থাটি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। 

বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা জারি: ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার পর বিশ্বব্যাপী মার্কিন নাগরিকদের জন্য সতর্কতা নির্দেশনা জারি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে-  মার্কিন নাগরিক ও স্বার্থের বিরুদ্ধে বিদেশে বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিশ্ব জুড়ে মার্কিন নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই সতর্কতা মূলত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জারি করা হয়েছে, যেখানে ইসরাইল-ইরান সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে তারা যেন ভ্রমণের আগে পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রাসঙ্গিক ভ্রমণ পরামর্শ, নিরাপত্তা সতর্কতা এবং দেশভিত্তিক তথ্য ভালোভাবে পর্যালোচনা করেন। বিশেষ করে কাতারে অবস্থিত মার্কিন নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে দেশটি। তবে কেন এমন জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। প্রসঙ্গত, উপসাগরীয় এই দেশটিতে অবস্থিত বিশাল আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। এই ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরওয়ার্ড হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

বিশ্ববাজারে তেলের দাম না বাড়াতে ট্রাম্পের হুমকি: বিশ্ববাজারে তেলের দাম না বাড়াতে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সোশ্যাল ট্রুথে দেয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, সকলে তেলের দাম নিম্নমুখী রাখুন। আমি সব খেয়াল করছি। আপনারা শত্রুর হয়ে খেলা শুরু করেছেন, এটা করবেন না। এদিকে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম হু হু করে করে বাড়ছে। ইরানের পার্লামেন্টে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে তেল সরবরাহের মূল রুট হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়ায় সোমবার ভোরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, বাজার খোলার পরপরই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুড এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তেলচুক্তি ডব্লিউটিআই- উভয়ের দাম ৪ শতাংশের বেশি বেড়ে জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। তবে কিছু সময় পর এই প্রবণতা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ব্রেন্ট তেলের দাম দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৭৯.২০ ডলার (+২.২%), ডব্লিউটিআই তেলের দাম হয় ৭৫.৯৮ ডলার (+২.১%)। বিশ্বে ইরান নবম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। প্রতিদিন প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে দেশটি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক রপ্তানি করে এবং বাকি অংশ স্থানীয়ভাবে ব্যবহার করে। জাপানি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমইউএফজি জানিয়েছে, এই যুদ্ধ কতোদিন চলবে ও এর ফল কী হবে তা অনিশ্চিত। এর ফলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি আরও ১০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ইরানের সঙ্গে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছে ইসরাইল: ইরানের সঙ্গে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছে ইসরাইল। তেহরানকে লক্ষ্য করে হামলা চালালেও শিগগিরই তা শেষ করতে চাইছে দেশটি। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হামলার পর কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এ বিষয়ে ইরানকে বার্তা পাঠিয়েছে তেল আবিব। এ খবর দিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। টাইমস অব ইসরাইলও এ খবর নিশ্চিত করেছে। গণমাধ্যমটি বলছে, এ সংক্রান্ত একটি বার্তা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তেহরানের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলায় যোগ দেয়ার পর ওই বার্তা দেয়া হয়েছে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের ওই প্রতিবেদনে ইসরাইল ও আরব কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাতানজ, ফরদো ও ইস্ফাহানে চালানো সফল হামলার কূটনৈতিক ফলাফল কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ শেষ করতে চাইছে ইসরাইল। আরব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের আরব মিত্রদের মাধ্যমে ইরানকে জানাতে বলেছে যে, ইসরাইল খুব শিগগিরই ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শেষ করতে চায়। তবে, ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, মার্কিন হামলার জবাব দেয়া প্রয়োজন মনে করে তারা।

মার্কিন হামলার নিন্দা জানালো উত্তর কোরিয়া: ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নিন্দা জানিয়েছে পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে, যা সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে জাতিসংঘ সনদকে মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছে। পাশাপাশি ইরানে হামলার পর বিশ্ব জুড়ে নেতাদের প্রতিক্রিয়া অব্যাহত আছে। এরমধ্যে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক্সে দেয়া এক পোস্টে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামেদ হাসান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচিকে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাইরের শক্তিগুলো এই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার ফলে পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠবে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়া হলে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য তা হবে এক বিরাট সমস্যা। ওদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার জন্য ইসরাইলের ‘অবিবেচক সাহসিকতাকে’ দায়ী করেছে উত্তর কোরিয়া। বিবৃতি পারমাণবিক অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ’কে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা ‘ইসরাইলের অবিবেচক সাহসিকতার অনিবার্য ফল’। তিনি ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে বলেন, ইহুদি রাষ্ট্রটি নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধমূলক তৎপরতা ও ভূখণ্ড সম্প্রসারণের মাধ্যমে একতরফাভাবে নিজেদের স্বার্থকে এগিয়ে নিচ্ছে। উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি রয়েছে। তারা ডজনখানেক পারমাণবিক অস্ত্র ও বিভিন্ন মিসাইল বাহন ব্যবস্থার মালিক বলে বিশ্বাস করা হয়। দেশটি এখনো দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যত যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। কারণ ১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধ একটি অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে শেষ হলেও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status