ঢাকা, ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন ইরানের পার্লামেন্টে

মানবজমিন ডেস্ক
২৩ জুন ২০২৫, সোমবার
mzamin

হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট। এখন দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কাউন্সিল সিদ্ধান্ত দিলেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে কুয়েত টাইমস ও রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল ও গ্যাস বিভিন্ন দেশে যায়। তেল-গ্যাস সরবরাহে এই প্রণালির গুরুত্ব অপরিসীম। ইরান যদি এটি বন্ধ করে দেয় তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। ইরানের ইসলামী রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার ইসমাইল কুরাইশি দেশটির ইয়াং জার্নালিস্ট ক্লাবকে জানিয়েছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন তারা। প্রয়োজন হলেই এটি বন্ধ করে দেয়া হবে। 

হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে অস্থির হবে বিশ্ব জ্বালানির বাজার: ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক দৃষ্টি এখন ঘুরে গেছে হরমুজ প্রণালির দিকে। বিশেষ করে এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হওয়ার ফলে উত্তেজনা এখন চরম পর্যায়ে। ওমান ও ইরানের মধ্যে ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি সংকীর্ণ পানিপথ হলো হরমুজ প্রণালি। এর মাধ্যমে প্রতিদিন বিশ্বের মোট তেলের এক-পঞ্চমাংশ বিভিন্ন দেশে যায়। ১৩ই জুন ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা শুরু করার পর হরমুজ প্রণালি নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হামলার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর এতে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এই সমুদ্রপথ অবরোধের মুখে পড়লে  হুমকিতে পড়বে বিশ্ব জ্বালানি বাজার। এই রুটে সামান্য বিঘ্ন হলেই তেলের দাম আকাশচুম্বী করে তুলতে পারে, অর্থনীতি অস্থিতিশীল করতে পারে এবং নতুন জ্বালানি সংকট তৈরি করতে পারে। সৌদি আরবে ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক সালমান আল-আনসারী বলেন, হরমুজ প্রণালি বৈশ্বিক জ্বালানির ধমনী। একে অবরোধ করা হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এমন এক প্রতিক্রিয়া শুরু হবে, যার জন্য কেউ প্রস্তুত নয়। মার্কিন জ্বালানি বিষয়ক প্রশাসন জানায়, বিশ্বের মোট ব্যবহারের ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রতিদিন ২ কোটি ব্যারেল তেল এই প্রণালির মধ্যদিয়ে পাড়ি দেয়। সঙ্গে এক-পঞ্চমাংশ প্রাকৃতিক তরল গ্যাস, যা মূলত কাতার থেকে আসে। এই রুট এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর বিকল্প প্রায় নেই। উপসাগরীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ তেল সরাসরি অন্য পথে পাঠানো যায় না, আর এটি একমাত্র গভীর পানির রুট যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ট্যাংকার চলতে পারে। এই তেলের শতকরা ৮৪ ভাগ যায় এশিয়ায়। এর প্রধান ক্রেতা চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ২০১৯ সালের এক বিশ্লেষণে সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসি বলেছিল, হরমুজ প্রণালি দিয়ে যাওয়া ৭৬ শতাংশ তেলই এশিয়ার বাজারে যায়। ইরান-ইসরাইল সংঘাতে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম একদিনে ৬৯ ডলার থেকে ৭৪ ডলারে পৌঁছে যায়। যদিও তখনো কোনো জাহাজ চলাচলে বাধা পড়েনি। লেবাননের অর্থনীতিবিদ জাসেম আজাকা বলেন, শুধু আশঙ্কাই বাজারকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়, তেলের দাম এক লাফে ২৫ ডলার বেড়ে ১০০ ডলারের উপরে চলে যাবে। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অস্বাভাবিক অবস্থা। আজাকা বলেন, তেলের দাম বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। কারণ শতকরা ৯৫ ভাগ পণ্যের উৎপাদনেই তেলের ভূমিকা আছে। কাঁচামাল উত্তোলন, খাদ্যপ্রস্তুতিসহ সব ক্ষেত্রেই।  আল-আনসারী আরও বলেন, ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে, তা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট তৈরি করবে, মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়াবে, আর দুর্বল অর্থনীতিগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেবে।

সৌদি আরব প্রতি বছর ৫.৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল হরমুজ প্রণালি দিয়ে রপ্তানি করে। এই তেল মোট প্রবাহের শতকরা ৩৮ ভাগ। যদিও তাদের ইস্ট-ওয়েস্ট পাইপলাইন রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা ৭ মিলিয়ন ব্যারেল। কিন্তু এটি ইতিমধ্যে হুতি হামলার কারণে প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ পাইপলাইনেরও একই অবস্থা। ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল ক্ষমতা হলেও ইতিমধ্যে তা পুরোপুরি ব্যবহৃত হচ্ছে। ইরানের নিজস্ব গোরেহ-জাস্ক পাইপলাইন কেবল ৭০ হাজার ব্যারেল সরবরাহ করতে পেরেছে এবং ২০২৪ সালের শেষদিকে বন্ধ হয়ে গেছে। যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়, সৌদি আরব ও আমিরাত মাত্র ২.৬ মিলিয়ন ব্যারেল বিকল্প রুটের মাধ্যমে সরবরাহ দিতে পারবে- যা মোট ২০ মিলিয়নের তুলনায় নগণ্য। আজাকা বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতি তেলনির্ভর হওয়ায় দীর্ঘ সময় প্রণালি বন্ধ থাকলে তাদের বাজেটে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আল-আনসারী বলেন, এই প্রণালি এক-তৃতীয়াংশ সামুদ্রিক তেলের রুট। একে বন্ধ করা মানে এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত অর্থনৈতিক স্থবিরতা। চীন তাদের অর্ধেক তেল এই রুট দিয়ে নেয়। ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াও চরম বিপদে পড়বে। জরুরি রিজার্ভ ব্যবহার করতে হতে পারে। বিকল্প রুটে খরচ দ্বিগুণ হবে। এতে এই প্রথম চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপর বিশ্বের আরও অনেক অর্থনীতি এতে আক্রান্ত হলে বিশ্বে মন্দা আসার আশঙ্কা থাকবে।

পাঠকের মতামত

এটাই উত্তম হবে।

Faiz Ahmed
২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ২:০২ পূর্বাহ্ন

আমেরিকার দালাল সৌদি এবং আরব আমিরাতের জাহাজ আগে বন্ধ করার দরকার এই রুটে কারণ এরা হচ্ছে এক নাম্বার দালাল আমেরিকার

আরিফুর রহমান
২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status