ঢাকা, ২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

সাবেক সিইসি নূরুল হুদা চার দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বিকাল ৩টার দিকে তাকে ডিবি অফিস থেকে আদালতে আনা হয়। এ সময় তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে তাকে তোলা হয় এজলাসে। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। নূরুল হুদার পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ সজীব সোহাগ। শুনানি শেষে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবেক সিইসি’র চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

এর আগে সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার।

আদালতে যা বলেন নূরুল হুদা: রিমান্ড শুনানির সময় কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য কমিশনকে দায়ী করা যায় না। নির্বাচন পরিচালনায় ১৫-১৭ লাখ লোক সম্পৃক্ত ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কী ঘটেছে তা ঢাকা থেকে নজরদারির কোনো সুযোগ নেই। 

শুনানিতে আদালত নূরুল হুদার বক্তব্য জানতে চান। তখন নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, এই মামলায় আইনি ত্রুটি রয়েছে। এ মামলায় তাকে রিমান্ডে নিলে তা হবে আইনের পরিপন্থি। আদালতকে তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় ১৫-১৭ লাখ লোক সম্পৃক্ত ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কী ঘটেছে তা ঢাকা থেকে নজরদারির কোনো সুযোগ নেই। এ সময় বিচারক তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন মনে করেন কিনা। উত্তরে তিনি না বলেন। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে ৫টা লোক এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য ১৬ লাখ লোকের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা। কোথায় কেমন নির্বাচন হচ্ছে ঢাকায় বসে দেখার সুযোগ নাই। এরপর বিচারক আবারো তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি তো শপথ নিয়েছেন নির্বাচন ফেয়ার করার। তখন নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলে, ফলাফল ঘোষণা হলে পরবর্তী কমপ্লিট জুরিসডিকশন হাইকোর্টের ওপর। হাইকোর্ট অনিয়ম পেলে পানিশমেন্ট দেয়ার ক্ষমতা রাখে। নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন সেটা বন্ধ করতে পারে না। পিপি’র অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি  বলেন, নির্বাচনে টাকা দেয়া হয়েছে। এগুলোর সুযোগ নাই। নির্বাচন যেটা বিতর্কিত হয়েছে, সেটার জন্য কমিশনকে দায়ী করা যায় না। শুনানি শেষে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবেক সিইসি’র চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা নূরুল হুদাকে তখন বিচলিত দেখাচ্ছিল। শুনানিতে পিপি ফারুকী বলেন, তাকে রাজধানীর উত্তরা থেকে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জেনেছি, আটকের পরে হুদাকে জনগণ ‘ফুলের মালা’ দিয়ে বরণ করেছিল। তিনি বলেন, হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট করার জন্য যারা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে হুদা একজন। তিনি জনগণের মৌলিক ও  ভোটের অধিকার হরণ করেছেন। এরা সেদিন মানুষ ও জনতার পক্ষে থাকলে হাসিনা এত বড় ফ্যাসিস্ট হতো না। তিনি বলেন, এই হুদার আমলে ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে সবল রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এই হুদারা তখন দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন। জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। এমনকি সেসময় তিনি প্রত্যেকটা ডিসিকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, দেশের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে আমার মনে হয় সবাই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট দিবে। তোমরা রাতেই ভোটের ব্যবস্থা করো। তখন প্রত্যেকটা ডিসি ভোটের আগের রাতে বাক্স ভরে দিয়েছে। আশ্চর্যজনক ভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে তখন ডিসিদের উৎসব করার জন্য টাকা দেয়া হয়েছিল। সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোট তো হয়ে গেছে। জনগণ তো ভোট দিয়ে দিয়েছে। এভাবেই তিনি জনগণের সামনে নিলর্জ্জভাবে নির্বাচনকে বৈধ ঘোষণা করেছিলেন। কতো বড় নির্লজ্জ হলে এমন কথা বলা যায়। এখনো তারা হাসে। আমরা তাকে চিনি নিশিরাতের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে। শুনানিতে রিমান্ডের বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ সজীব সোহাগ আদালতকে বলেন, তার মক্কেলের (নূরুল হুদা) বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সবই দণ্ডবিধির জামিনযোগ্য ধারা। জামিনযোগ্য ধারায় রিমান্ড আবেদন করাটাই বেআইনি। এসময় তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সূত্র ধরে আদালতকে বলেন, দুদকের মামলায় উচ্চ আদালত একটি স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। জামিনযোগ্য ধারায় জামিন পাওয়া আসামির অধিকার। এ ছাড়াও আমার মক্কেলকে তারা ৭৭ বছর বয়স উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে তার বয়স আরও বেশি হবে। এ মামলা আইনগতভাবে চলেই না। এটা ত্রুটিপূর্ণ এজাহার। সুতরাং আমার জামিন আবেদন মঞ্জুর করার দাবি জানাচ্ছি। এসময় উপস্থিত আইনজীবীরা চিৎকার শুরু করলে এজলাসে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status